Views Bangladesh Logo

চান্দিনায় ১৮ দিন অবরুদ্ধ দুই পরিবারে ঈদ আসেনি

কুমিল্লার চান্দিনায় রাস্তা নির্মাণ নিয়ে বিরোধের জেরে টানা ১৮ দিন অবরুদ্ধ রাখা হয় দুই পরিবারের সদস্যদের। তারা রোজার সময় থেকে ঈদের দিনও বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেননি।

স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের তৎপরতা এবং প্রশাসনের তোপের মুখে ১৮ দিন পর বেড়া খুলে দেয়া হলেও ততক্ষণে ওই দুই পরিবারের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। আর নারী, পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ সাতজন অবরুদ্ধ থেকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করেন শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত।

অমানবিক ঘটনাটি উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের। ১৮ মার্চ থেকে গ্রামের ভূইয়া বাড়ির আবুল কাশেম ভূইয়া ও আবুল হাসেম ভূইয়ার পরিবারকে অবরুদ্ধ করেন গ্রামের মাতবররা।

সরেজমিন জানা গেছে, আবুল কাশেম ভূইয়ার বাড়ির দুই পাশে খাল পর্যন্ত বাঁশ ও বড়ই গাছের কাঁটাযুক্ত ডালায় বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছিল। গ্রাম্য মাতবরদের নির্দেশে দুই পরিবারের সাতজনকে বাড়িতে আটকে রাখতে দিন-রাত পাহারা দেন লোকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থে বামুটিয়া ভূইয়াপাড়া জামে মসজিদ থেকে দক্ষিণে ফসলি মাঠ পর্যন্ত খালের পাড় ঘেঁষে কাঁচা রাস্তাটির নির্মাণ চলছে। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজও শেষ হয়ে গেছে। কাশেম ভূইয়া ও হাসেম ভূইয়ার ঘর ঘেঁষে রাস্তাটি নির্মাণ করতে তাদের বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত সাতটি গাছও কেটে ফেলেন গ্রামের মাতবররা। তাদের জমা জায়গা থেকে কম জায়গা দিয়ে এবং সরকারি খাস জায়গা থেকে বেশি জায়গা নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে বলায় একমত হননি মাতবররা। চাহিদা অনুসারে আবুল কাশেম জমার জায়গা দিয়ে রাস্তা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১৮ মার্চ তাদের বাড়ির চারপাশে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার সালিশ বৈঠক করেও বিষয়টির মীমাংসা করতে ব্যর্থ হন।

পরিবার দুটির অভিযোগ, গ্রামের ওই মাতবরদের রোষানলে অবরুদ্ধ করা হয় তাদের। তারা যেন বাইরে বের হতে না পারেন সেজন্য বাড়ির চারপাশে বাঁশ ও কাঁটার বেড়া দেয়া হয়।

পরিবারের সদস্যরা রোজার সময় থেকে ঈদের দিনও বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ আদায় পর্যন্ত করতে পারেননি।

আবুল কাশেম ভূইয়ার ছেলে মো. ছাদেক হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘মেম্বার ও গ্রামপ্রধানরা আমাদের মতামত না নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির সাতটি গাছ কেটে ফেলেছেন। আমরা বাধা দিলে তারা বেড়া দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন। টানা ১৮ দিন আমরা কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি, আবার বাইরে থেকে কেউ বাড়িতে যেতে পারেননি। বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো সুফল পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এসে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করলে শনিবার (৫ এপ্রিল) উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আরশাদের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে বিষয়টির সমাধান এবং বেড়া খুলে দেন; কিন্তু ততদিনে আমাদের ঈদের আনন্দ নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবারে বাজার খরচও দিতে পারিনি। না খেয়ে রোজা রেখেছেন আমার মা-বাবা। ঈদের দিন আমার বৃদ্ধ বাবা নামাজ আদায় করতে পারেননি!’

ওই গ্রামের মাতবর অভিযুক্ত আবু তাহের বলেন, ‘রাস্তাটির অভাবে শতাধিক পরিবারের সদস্যের বাড়ি থেকে বের হওয়ার অন্য কোনো সুযোগ নেই। জমির ফসল তুলে বাড়িতে আনাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সরকারি অর্থে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আমরা সবাই জমার জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। কেউ কেউ ঘর ভেঙেও রাস্তার জায়গা দিয়েছেন; কিন্তু আবুল কাশেম ভূইয়া জমা জায়গা না ছেড়ে খাল ভরাট করে রাস্তা নিতে বলেন। আমরা গ্রামবাসী অনেক বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে বেড়া দেই। তিনি যেহেতু রাস্তার জন্য জায়গা দেবেন না, সেহেতু তিনি ও তার পরিবার কারও জায়গায় পা ফেলতেও পারবেন না!’

মহিচাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য সফিক সিকদার বলেন, ‘প্রায় এক হাজার ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে সবার জায়গা দিয়ে; কিন্তু কাশেম ভূইয়ার মনগড়া কথায় এবং সমাজের কারও কথা না শোনায় রাস্তাটি মাত্র ৫০-৬০ ফুট কাজ বাকি আছে। যে কারণে গ্রামের মানুষ তাকে বেড়া দিয়ে আটকে রাখেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে ঘটনাস্থলে তদন্তদল পাঠাব। তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ