Views Bangladesh Logo

দেশের নদীতে প্রতিবছর ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিকের প্রবাহ

Nazrul  Islam

নজরুল ইসলাম

দেশের নদীতে প্রতিদিনই বাড়ছে প্লাস্টিক দূষণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃ‌বি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের নদীপথ দিয়ে বাংলাদেশে আসছে দৈনিক প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এ কারণে নদীর পানিতে ও পলিতে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক জমছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর প্রতি বর্গ কিলোমিটার পানিতে ২৫ লাখের বেশি ভাসমান মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। নদীর তলদেশের প্রতি কেজি পলিতে মিলেছে প্রায় ৪৫০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। এই বর্জ্য মূলত ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং পরে তা বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাচ্ছে। ফলে নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে।

বাকৃবির ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন। তিন বছর আগে এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ফর গ্লোবাল চেঞ্জ রিসার্চের অর্থায়নে গবেষণার কাজ শুরু হয়।

ড. হারুনুর রশীদ জানান, ভুটান ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের নদীগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ অনেক বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বাংলাদেশের নদীতে পড়ে যাচ্ছে। এর বড় একটি অংশ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও ইরাবতী নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের নদ-নদীতে।

গবেষণার জন্য ভুটানের হারাছু, মানস ও তোরসা নদী; ভারতের ব্রহ্মপুত্রের পাঁচটি অংশ (টুটিং, দিব্রুগড়, তেজপুর, গৌহাটি ও ধুবরি) এবং বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পাঁচটি অংশ (কুড়িগ্রাম, সুন্দরগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ ও হুমুরিয়া) থেকে পানি, পলি ও মাছের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি নদীর আশপাশের বায়ু থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা নেয়া হয়।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক পানির প্রাণী, বিশেষ করে মাছের শরীরে প্রবেশ করে। এরপর এই মাছ মানুষের খাদ্যচক্রে ঢুকে যায়, ফলে মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হয়। এর ফলে অন্ত্রের প্রদাহ, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস, হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত, হজমের সমস্যা, ক্লান্তি, স্মৃতি হ্রাসসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কিডনি ও যকৃতের কাজেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে অধ্যাপক হারুনুর রশীদ প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাট ও সুতি ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কার্যকর পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ