Views Bangladesh Logo

প্রকৃতিকথা

রুদ্র বৈশাখে প্রশান্তির দিন

বৈশাখ হলো বাংলা বছরের প্রথম মাস, গ্রীষ্মকালেরও প্রথম মাস। পূর্বাভাস ছিল, পহেলা বৈশাখ থেকেই টানা ৫ দিন ঝড়-বৃষ্টি হবে। প্রকৃতিতে বৈশাখের আগমন ঘোষণা দেয় কালবৈশাখী। দিগন্তজুড়ে ঘনিয়ে আসে কালো মেঘ, জোর হাওয়া বইতে থাকে, থোকা ধরা কচি আমগুলো সে হাওয়ায় বেসামাল হয়ে যায়, ধুলো আর শুকনো পাতা ওড়ার দাপটে পথচলাই দায় হয়ে পড়ে। এরপর নামে হিমশীতল বৃষ্টির ধারা। বৈশাখের আরও পরিচয় শুরু হয় বাঙালি সমাজের নানা রকমের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দিয়ে- যেখানে প্রকৃতি আর সংস্কৃতি মিলে একাকার। রমনার বটমূলে নববর্ষের গান ও বৈশাখী মেলা, আমপাতা চুবানো আমানি খাওয়া, চৈত্রসংক্রান্তিতে চৌদ্দ রকমের শাক খাওয়া, আর কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল ফুলে ফুলে বৈশাখের আগমন- এসবই যেন একসূত্রে গাঁথা।

গ্রীষ্ম মানেই গরমকাল, রোদের তাত যেন আগুনের ফুলকি। সে তাত বা আগুনের রং হলো টকটকে লাল বা কমলা অথবা হলুদ। বৈশাখী প্রকৃতির দিকে যখন তাকাই, দেখি গাছে গাছে ফুটে রয়েছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া, কমলা রঙের রাধাচূড়া, হলুদ রঙের কনকচূড়া ও সোনাইলের সোনা হলুদ ফুল। সেই সঙ্গে বৈশাখী প্রকৃতি তেতে উঠতে শুরু করে বেগুনি বর্ণা জারুল ফুলের উদভ্রান্ত উচ্ছ্বাসে। নজরুল তার একটি গানে বৈশাখে ফোটা কৃষ্ণচূড়া আর সোনালু বা সোনাইল ফুলের এক যুগল চিত্রকল্প রচনা করেছেন, সেখানে প্রকৃতির শোভায় শুধু ফুল না- দোয়েল শ্যামা হলদে পাখিও এসেছে সে ফুলের রূপে:
‘দোয়েল শ্যামা লহর তোলে কৃষ্ণচূড়ার ফুলের শাখায়॥
বন-গোপিনী ফুল ছুড়ে ঐ খেলে হোলি দখিন-বায়ে,
হলদে পাখি দোদুল দুলে সোনাল শাখায় আদুল গায়ে।’

বৈশাখের পূর্বাভাসকে মাথায় নিয়ে ঢাকা থেকে সকালে রওনা হয়ে যখন পিরোজপুর শহরে ঢুকলাম, দেখলাম আকাশটা লেপ্টে আছে ধূসর কালো মেঘে। জলভরা সেসব মেঘ থেকে হয়তো এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে। পথের দুপাশে মাঝে মাঝে রক্তলাল থোকা থোকা ফুল মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছ। মাঝে মাঝে হলদে রঙের সোনাইলগাছে ফুলের মঞ্জরি ঝাড়বাতির মতো ঝুলছে। দলা দলা রক্তের মতো কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলোকে দেখে মনে পড়ল কাজী নজরুল ইসলামের পদ্ম গোখরো গল্পটা। কি যে বেদনা সে গল্পে! নায়িকা জোহরার অকালমৃত্যু। ‘শিয়রে দুটি কৃষ্ণচূড়ার গাছ, জোহরাই স্বহস্তে রোপণ করিয়াছিল। এইবার তাহাতে ফুল ধরিয়াছে। রক্তবর্ণের ফুলে ফুলে কবর দুইটি ছাইয়া গিয়াছে।’

পূর্বাভাস মিথ্যে নয়- পিরোজপুর শহর পার হতেই জোর বৃষ্টি নামলো, সঙ্গে দমকা বাতাস। তালগাছ থেকে বড় বড় শুকনো পাতা সে বাতাসে খসে পড়ছে পথের ওপর, ছোট ছোট ডালপালাও। পথ চলতে সেগুলো বাগড়া দিচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিতে গাড়ির জানালার কাচ জলবাষ্পে ঘোলাটে, তার চেয়েও বেশি ঘোলাটে দেখাচ্ছে বাইরের প্রকৃতিকে। বৃষ্টি আর গাছপাতার সবুজ রং যেন জল রং ছবির মতো, রঙগুলো সব গুলে একাকার। সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠের ওপর জমেছে রূপালি জল, চৈত্রের ধুলোমাখা গাছপালা যেন সে বৃষ্টিতে গোসল করে তৃপ্ত হচ্ছে। মাঠে মাঠে বোরো ধানের ক্ষেতগুলোতে সবে হলদে রং ধরতে শুরু করেছে। সেসব গাছের ধানগুলো কি ঝরে যাবে কালবৈশাখী বাতাসে? এসব দেখতে দেখতেই গাড়িতে এগিয়ে চললাম ভান্ডারিয়া উপজেলার দিকে। সরু আঁকাবাঁকা কালো পিচঢালা পথ, দুপাশে ঘন গাছপালার মধ্য দিয়ে পথটাকে মাঝে মাঝে সুড়ঙ্গের মতো দেখাচ্ছে। রাস্তার এ ধারের গাছগুলোর সঙ্গে ও ধারের গাছের ডালপালাগুলোর যেন কোলাকুলি হচ্ছে বাতাসে। বৃষ্টি চলল বেশ কিছুটা সময় ধরে। অবশেষে শিয়ালকাঠি বাজারে পৌঁছলে বৃষ্টিটা ধরে এলো। কাপালিরহাট পার হয়ে গ্রামের সরু পথে ছোট ছোট খাল ডিঙিয়ে অবশেষে উত্তর শিয়ালকাঠি গ্রামে গিয়ে থামলাম।

বৃষ্টি নেই, কিন্তু গাছের ভেজা ডালপালা থেকে জলের ফোঁটা পড়ছে। গ্রামের মধ্যেও চমৎকার পাকা রাস্তা, রাস্তার দুপাশে অনেক বৃক্ষ ও ঝোপঝাড়। সারি করে লাগানো অনেকগুলো বয়স্ক অর্জুন গাছ। জানা গেল রাস্তাটা পাকা করা হয়েছে ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে। সে সময়ই অর্জুন গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। সেসব গাছের কোনো কোনোটি বিশাল বৃক্ষ। এরূপ প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সী পঞ্চাশ ফুটেরও বেশি লম্বা অর্জুনগাছ খুব কমই চোখে পড়ে। ঝড়-বাতাসে পাকা রাস্তার ওপর অর্জুনের চারকোনা শুকনো বাদামি কাঠের মতো শক্ত ফল পড়ে ভরে আছে। বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে। সে রোদে বৃষ্টিভেজা অর্জুনের নবীন পাতারা চকচক করছে, ডালের আগায় আগায় ঝুলছে ঘিয়া সবুজ রঙের লম্বা শিষের মতো ফুলের মঞ্জরি। এটাই তো প্রকৃতির শিক্ষা। প্রবীণের বিদায় আর নবীনের আগমন। কিছুদিন আগে পাতা আর পুরোনো ফল ঝরিয়ে যে অর্জুন হয়েছিল রিক্ত বিবসনা, এখন সে গাছ আবার নবীনের আগমনে পূর্ণ সালংকারা। নতুনদের আগমনে পুরনোদের জায়গা তো ছেড়ে দিতেই হয়। এ শিক্ষা দেখলাম সেখানে শিরীষ আর মেঘ শিরীষ গাছগুলোতেও। আহা সাদা ও গোলাপি ব্রাশের মতো ফুলগুলোর কি স্ফুরণ উল্লাস! ছাতার মতো গাছের মাথা ভরে গেছে সেসব ফুলে ফুলে। অথচ গাছের গোড়ায় পড়ে আছে চকলেট রঙা পুরোনো পাকা পাকা ফল। বুড়োদের তো এভাবেই ঝরে যেতে হয়!

এ গ্রামের দৃশ্যপটটা একটু অন্যরকম। ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচটা গ্রামের একটি হলো এই উত্তর শিয়ালকাঠি। এ ইউনিয়নে একটা সুন্দর জায়গা আছে দেখার মতো। কচা ও পোনা নদীর সঙ্গমস্থলে কাপালির হাট শৌলার খাল গেলে প্রাণভরে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পাকা রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি সরু খাল। গ্রামের বাড়িগুলোর লাগোয়া বড় বড় সুপারি বাগান। ফালি ফালি উঁচু মাটির স্তূপের ওপর সারি করে লাগানো সুপারিগাছ। এখানকার গ্রামের অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি এসব সুপারিগাছ। দুই ফালি মাটির স্তূপ বা বেডের মাঝে নিচু নালার মতো। সেখানে জল থই থই করছে। জোয়ারে জল ঢোকে, ভাটায় নেমে যায়। খালে ঘোলাটে জোয়ারের জল ঢুকছে হু হু করে। সরু খালটার নাম বাঞ্ছার খাল, খালটা এসেছে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার দূরের পোনা নদী থেকে। সে খালের দুইপাশে থাকা বাঁশঝাড় থেকে কয়েকটা বাঁশ ঝুঁকে পড়েছে খালের ওপর। খালের দুপাশে ঘন ঝোপঝাড়, সে খালের পাশ দিয়ে আবার পোনা নদী পর্যন্ত একটা কাঁচা পথ চলে গেছে। পিরোজপুর জেলাটাই হলো খালের জেলা, প্রায় চারশোর বেশি খাল শুধু স্বরূপকাঠিতেই আছে। স্থানীয় লোকদের চলাচলের প্রধান মাধ্যম হলো নৌকা।

খালটার একটা কালভার্টের ধারে দেখতে পেলাম চার প্রজাতির সুন্দরবনের গাছ- সুন্দরী, করঞ্জা, ওরা বা ছইলা ও হারগোজা। গ্রামের সে বনে খালের পাড়ে জন্মেছে কয়েকটা তরুণ সুন্দরী গাছ, রয়েছে বয়স্ক করঞ্জা গাছ। সুন্দরবন থেকে নদী ও খালের স্রোতে কোনো কোনো গাছের বীজ ভেসে এসে এসব গাঁয়ের পলিমাটিতে আটকে এসব গাছ জন্মে। আসার পথে চোখে পড়েছিল একটা হরকুচ কাঁটা বা হারগোজা গাছের বিরাট ঝোপ, কাঁটাময় পাতার সে গাছের মাথায় মাথায় ফুটে রয়েছে নীল-বেগুনি ফুল। করঞ্জাগাছে ফুল ফোটার সময় হলেও গাছগুলোতে ফুলের দেখা পেলাম না। করঞ্জা গাছের ঘন সবুজ পাতার ভেতর হয়তো কুঁড়িগুলো মুখ লুকিয়ে রয়েছে, কয়েকদিন পরই সেসব কুঁড়িরা ঘোমটা খুলবে। ওরা গাছেও ফুল বা ফল নেই। তবে এ গ্রীষ্মেই সে গাছে ফুল ফুটবে, বর্ষায় দেখা যাবে লাটিমের মতো সবুজ ফল। ওখানকার মানুষেরা এর ফল দিয়ে খাট্টা রেঁধে খান। শেভিং ব্রাশের মতো গোলাপি সাদা ফুল, চমৎকার সুগন্ধ সেসব ফুলের। পাড়ায় কয়েকটা ওড়া গাছ থাকলে সে পাড়ার বাতাসও ফোটা ফুলের সৌরভে সুরভিত হয়ে ওঠে।

ঝোপঝাড়ের মধ্যে দেখলাম হালকা সবুজ রঙের পুষ্পমঞ্জরিতে খুদে তারার মতো ঘিয়া রঙের ফুল ফুটেছে। ভালো করে সে গাছের পাতা ও ফুল দেখতেই ঠাহর করলাম, গাছটার নাম কুকুরজিহ্বা (লিয়া ইন্ডিকা)। এর আরও দুটো বাংলা নাম আছে- বনফটকা ও কুকুরা। পাতার বোঁটার কাছে কানের মতো আকৃতির একটা ফাঁপা ঠোঙাসদৃশ অঙ্গ, লম্বা পাতার কিনারা করাতের মতো অগভীর খাঁজকাটা। সেখান থেকে চোখ তুলতেই একটা জিগা গাছে জড়িয়ে পেচিয়ে উঠতে দেখলাম একটা গুলঞ্চলতা (টিনোস্পোরা কর্ডিফলিয়া)। পানপাতার মতো পাতা, আঙুরের মতো সে লতায় ফুল ধরে রয়েছে। ফলগুলো মটর বুটের মতো, ছোট, কাঁচা ফলের রং সবুজ, এরপর হয় হলুদ, শেষে লাল। কাচা পাকা ফলের থোকাগুলোকে বেশ সুন্দর লাগছে। সুপারি বাগানের আশেপাশে জঙ্গল করে রেখেছে কচি সবুজ ফলধরা বাতাবি লেবুগাছ, জাম, খইয়া বাবলা, ছাতিম, চালতা ও কাঠবাদাম গাছ। এগুলোর কোনোটা ছোট, কোনটা বড় বৃক্ষ। অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে আম, কাঁঠাল ও বিলাতি গাবগাছে ঝুলছে কাঁচা ফল। বিলাতি গাবের গোলাকার ফলগুলো সবুজাভ খয়েরি মখমলের মতো পশমে ঢাকা, বৃষ্টির ফোঁটার জল তাতে আটকে যেন হীরের কনার মতো চিকচিক করছে। কোনো কোনো ডালে ছোট ছোট ঘিয়া রঙের ফুলও ফুটে আছে। মেহগিনি গাছে ফুল ফোটা শেষের দিকে। আকাশমণি গাছে ফুল নেই। গগনশিরিষ বা চম্বল (অ্যালবিজিয়া রিচার্ডিয়ানা) গাছের রিক্ত শাখা-প্রশাখাগুলো ভরে উঠেছে কোমল সবুজ ছোট ছোট পাতায়। মিনজিরি গাছের শাখায় শাখায় দোল খাচ্ছে তামাটে রঙের কচি পাতা।

সুপারিবাগানের পশ্চিম সীমানায় কয়েকটা হাটবেগুনের গাছ, থোকায় থোকায় গোল গোল ফল ধরে আছে। জংলি গাছ হলেও খাগড়াছড়ির পাহাড়ে দেখেছি সেসব গাছ অধিকাংশ আদিবাসী বাড়িতেই লাগানো আছে। মটরবুটের মতো হাটবেগুনের ফল তারা সবজি হিসেবে খান। অন্য নাম জংলি বেগুন (সোলানাম টর্ভাম), চাকমারা বলেন বাইগন বিচি। পাকলে এর ফল হলুদ হয়ে যায়, ভিতরে প্রচুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচি হয়। মিশ্রিদানা গাছগুলোর মাথায় শীষের মতো পুষ্পমঞ্জরিতে প্রচুর ফুল ফুটে আছে। এর পাতা চিবালে মিষ্টি লাগে বলেই এ গাছের এরকম নাম, ছোট বিরুৎ, আগাছা। কোনো কোনো সুপারিগাছের গোড়ায় মাটিতে চোতরা পাতার গাছ জন্মেছে। বিষাক্ত গাছ, ত্বকে এর পাতা লাগলে খুব চুলকায়। পথের ধারে জন্মেছে জগতমদন (জাস্টিসিয়া জেন্ডারুসা) গাছ। কেউ কেউ বেড়ার বাহারি গাছ হিসেবে একে লাগান। এখানে আগাছা, ছোট ছোট সাদা ফুল ফুটেছে শিষে, ফুলগুলো সাপের মুখের মতো হা করে আছে। এরই আর এক সহোদর বাসক (জাস্টিসিয়া আধাটোডা) গাছ আছে প্রচুর, ফুল ফোটা শেষ হয়েছে তার বসন্তেই। বাসক গাছগুলোর আশপাশে ডালের মাথায় থোকা ধরে ফুটে আছে পাঁচ পাপড়ির বেগুনি-সাদা আকন্দ ফুল। ধুতরা গাছও আছে। আকন্দ ও ধুতরা ফুল ছাড়া শিবের পূজাই হয় না। তাঁরার মতো আকন্দ ফুলগুলো দেখতে বেশ সুন্দর, তবুও সে আগাছা।

গুল্ম প্রকৃতির গাছগুলো লোনা, বালি, শুষ্ক ইত্যাদি সব ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ সইতে পারে। নিচু ডোবা জায়গায় জন্মেছে এক ঝোপ মুর্তা বা শীতলপাটি গাছ। ছোট ছোট সাদা ফুল ফুটে সেসব গাছে যেন তাঁরার ঝিলিক দিচ্ছে। আশেপাশে জন্মেছে ঢোল কলমি, মটমটিয়া, বিষ কাটালি, কাঁটানটে, শিয়ালমূতি, দূর্বা, কানশিরা, অঙ্গুলি ঘাস। খালপাড়ে হোগলাপাতাও আছে ঘন ঝোপ হয়ে। বড় বড় গাছের ফাঁক দিয়ে জানালার কবাট খুলে দেখার মতো দেখতে পেলাম সে গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠ, নবশ্যাম দূর্বাদলে জলে জলে সয়লাব সে জলছবি, মাঠের প্রান্তে গাঢ় সবুজ হয়ে লেপ্টে আছে গ্রামীণ বনটা। মাঠের মধ্যে মাঝে মাঝে উঁচু জায়গায় গাছগাছালি ভরা ঘরবাড়ি। গ্রামটা বেশ বড়, প্রায় আট হাজার লোকের বাস সে গ্রামে।

সম্প্রতি একটা খবর পড়ে মনে হলো, আমি যেন এক শান্তির সূত্র খুঁজে পেয়েছি সেই গ্রামের ভেতর। একজন অসুস্থ ব্রিটিশ রাজবধূর মতো সেই সূত্রে যেন লুকিয়ে রয়েছে ব্যস্ত জীবনে খানিকটা শান্তি পাওয়ার জন্য প্রকৃতির প্রসাদ। ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পর গত মার্চ মাসে প্রিন্সেস অব ওয়েলস লেক ডিস্ট্রিক্টে গিয়েছিলেন। সেখানে রাজবধূ একটি বেকারবয় ক্যাপ, হাতে বোনা জাম্পার আর হাইকিং বুট পড়ে শিশুদের সঙ্গে বনের পথে হাঁটছিলেন। পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছেন, ছবি তুলছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি প্রকৃতির সঙ্গে বেশ চমৎকার সময় কাটিয়েছেন। তিনি এরপর বলেছেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে আমার এই সম্পর্ক খুবই আধ্যাত্মিক ও আবেগপ্রবণ। হয়তো সবার অনুভূতি একরকম নয়, কিন্তু আমার জন্য প্রকৃতি হলো এক ধরনের শান্তির আশ্রয়- এই ব্যস্ত দুনিয়ায় মাঝে আমি নিজেকে যেন আবার খুঁজে পেয়েছি।’

উত্তর শিয়ালকাঠি গ্রামের ওই শান্ত স্নিগ্ধ শ্যামল প্রকৃতি, ঘন নিবিষ্ট গাছগাছালি, বৃষ্টিচ্ছটা, খালভরা ঘোলাটে নোনা জল, জলের ওপর ঝুঁকে পড়া গাছপালার ডালপালা, কচি শ্যামল দূর্বাঘাস, ছায়াময় মায়াময় শান্ত পথ, গ্রীষ্মের তাপদাহেও সেখানকার শীতল বাতাস, রোদ-মেঘের লুকোচুরি, বৃক্ষলতায় নবীন পাতাদের উল্লাস, ফুল ও কচি কচি ফলবতী বৃক্ষেরা আমাকে যেন ডেকে ডেকে বলছিল- উপভোগ করো, অনুভব করো, শস্যশ্যামলা বাংলার এই প্রাকৃতিক রূপকে, সঙ্গে নিয়ে যাও বৈশাখের প্রশান্তিটুকু। আমি নিশ্চিত, সেই গ্রামে সবুজে-শ্যামলে মাখামাখি করে চোখের যে আরাম হলো, ঢাকা গেলে তা থাকবে না, বায়ুদূষণের শহরে গেলে ফের শুরু হবে চোখের জ্বালাপোড়া।

মৃত্যুঞ্জয় রায়: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ