Views Bangladesh Logo
author image

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

  • শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক

  • থেকে

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক
মানুষের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে বিদায় নিতে চাই
মানুষের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে বিদায় নিতে চাই

মানুষের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে বিদায় নিতে চাই

আমার প্রথম শৈশবের পরিবেশ ছিল এর ঠিক উল্টো। সুস্থ সবল মন নিয়ে বেড়ে ওঠার পক্ষে তা ছিল খুবই অনুকূল। আমি বাড়ির বড় ছেলে। আমার সবচেয়ে বড় বোন-বড় আপা-আমার চেয়ে আট বছরের বড়। তার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমার মেজো বোনের জন্ম হয়। বাড়ির সবাই তখন ছেলে-সন্তানের জন্য উন্মুখ। তাই পরপর দুটি মেয়ে হওয়া সবাইকে খুব হতাশ করেছিল। সবচেয়ে বেশি খেপে গিয়েছিলেন বড় আপা নিজে। কেন তার ভাই না হয়ে ফের বোন হলো- এই ক্ষোভে তিনি আমার মেজো বোনের দেড়-দুবছর বয়সের সময় একটা সাইকেলের পাম্পার তার মুখে ঢুকিয়ে পাম্প করতে করতে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।

ছেলেবেলায় আমি ছিলাম খুবই দুরন্ত ও বোকা
ছেলেবেলায় আমি ছিলাম খুবই দুরন্ত ও বোকা

ছেলেবেলায় আমি ছিলাম খুবই দুরন্ত ও বোকা

আমার তরুণ ছাত্রদের মাঝে মধ্যে আমি একটা গল্প শোনাই। বলি ধর, মাকে নানাভাবে জপিয়ে তার কাছ থেকে তুমি একশ টাকা হাতিয়ে নিলে। ধর, সেই টাকা নিয়ে তুমি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ফুর্তি করে খেয়েদেয়ে তা ওড়ালে। এই খাওয়া-দাওয়ায় নিশ্চয়ই একটা আনন্দ আছে, তা তুমি পেলে; কিন্তু ধর বাড়ি থেকে বেরোতেই যদি অন্য কিছু ঘটত; ধর রাস্তায় পা বাড়াতেই তুমি দেখতে পেলে একটা অসুস্থ মুমূর্ষু না-খাওয়া লোক তোমার সামনেই অচেতন হয়ে পড়ে গেল। তাকে দেখে তোমার ভেতর তখন যদি মমতা এসে যেত; একজন অনাহারি নির্জীব আর মৃত্যুপথযাত্রী লোককে সামনে ফেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ফুর্তি করতে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। ধর তুমি যদি পকেটের সেই টাকা খরচ করে তাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে, সে ভালো হয়ে উঠলে তাকে খাবার কিনে দিয়ে ঘরে যাবার ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরতে- তাহলে টাকাটার আর একটা ব্যবহার হতো। নিশ্চয়ই মানবে: রেস্টুরেন্টে ফুর্তি করে টাকা ওড়ানোর মতোই ওই টাকাগুলোকে একজন দুঃখীর কষ্ট দূর করার জন্য দিয়ে দেবার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে। এখন প্রশ্ন, এই দুই আনন্দের মধ্যে বড় কোনটি? নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টি। একটা ভোগের মত্ততায় স্কুল, অন্যটা দেবার তৃপ্তিতে পবিত্র। জীবনের সূচনার দিনগুলোয় এই পবিত্র আনন্দের সঙ্গে জানাজানি না হলে এ তো আমাদের কাছে অপরিচিত থেকে যাবে।