বিশেষ সংখ্যা : প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে ৭ মার্চের ভাষণ
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: মানব মুক্তির মহাকাব্য

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালিন রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা সবার্থেই একটি ঐতিহাসিক ভাষণ। এই ভাষণকে শুধু ঐতিহাসিক ভাষণ বললে এর গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যাবে না। এটি ছিল একটি দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ, যা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, মুক্তির আনন্দে উদ্বেলিত করেছিল। সার্বিকভাবে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ছিল মানব মুক্তির লক্ষ্যে নিবেদিত একটি অনুপ্রেরণামূলক ভাষণ।
আন্তর্জাতিক সাময়িকী নিউজউইক কর্তৃক ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে অভিহিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রকৃত পক্ষে রাজনীতির মহাকাব্য। জাতির পিতার এই সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয় বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রই ছিল ৭ মার্চের এই অনন্য সাধারণ ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে মানব মুক্তির চিরন্তন সত্যটি জোরালো প্রস্ফুটিত হয়েছে এবং অন্ধকারকে পেছনে ফেলে আলোর পথে যাত্রার গতি প্রবাহ সৃষ্টি করেছে। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের প্রসঙ্গিকতা চিরদিন থাকবে। কারণ বাঙালির মুক্তি তথা মানবমুক্তি একটি শাশ্বত সত্য, যার ওপর ভিত্তি করে মানব সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসবিদ ও লেখক জ্যাকব এফ ফিল্ড সম্পাদিত ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’ গ্রন্থে পুরো পৃথিবীকে আন্দোলিত করেছে এমন ৪১টি ভাষণ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম। ইউনেস্কোর দশম মহাপরিচালক ইরিনা বাকোভা ৩০ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে ঘোষণা করেন যে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য-স্মারক তালিকায় সংযোজিত করা হয়েছে।
এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতটা। এটি বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে নিবেদিত একটি ভাষণ। এই ভাষণ যেমন সমকালিন তেমিন সর্বকালিনও বটে। কারণ এখনো এই ভাষণের প্রাসঙ্গিকতা শেষ হয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির উদ্দেশ্যে ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন; কিন্তু এই ভাষণের মাধ্যমে আসলে বিশ্বে নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের বাঁচার আকুতিই ফুটে উঠেছিল। একটি ভাষণ যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, একটি জাতিকে কীভাবে মুক্তির লক্ষ্যে সুসংগঠিত করতে পারে, তার প্রকৃষ্ঠ প্রমাণ বা উদাহরণ হচ্ছে এই ভাষণ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে এই ভাষণ দিয়েছিলেন; কিন্তু আমরা এই ২০২৪ সালে এসে যখন সেই ভাষণের মূল্যায়ন করি, তখন বুঝতে পারি ৭ মার্চের ভাষণে বিশ্বের প্রতিটি নিপীড়িত এবং বঞ্চিত মানুষের মনের কথাই প্রতিফলিত হয়ে উঠেছিল। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের একজন মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ কোনো লিখিত ভাষণ দেননি। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন; কিন্তু আমরা যদি লক্ষ্য করি, তাহলে বুঝতে পারবো ভাষণটি কতটা পরিশীলিত এবং গোছানো। ভাষণে স্থানপ্রাপ্ত প্রতিটি শব্দ ছিল সুপ্রযুক্ত। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু এমন একটি শব্দও ব্যবহার করেননি, যার কারণে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তিনি প্রতিটি বাক্য উচ্চারণ করেছেন অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণভাবে। বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার কথা বলেছেন, স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে; কিন্তু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। ভাষণে বঙ্গবন্ধু তার অনুপস্থিতিকালিন সময়ে কি করণীয় তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন সামারিক হেলিকপ্টার চারদিকে চক্কর দিচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। যদিও ছাত্র নেতাদের পক্ষ থেকে সেই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার জন্য বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল; কিন্তু বঙ্গবন্ধু একজন উদার এবং শান্তিপ্রিয় জাতীয় নেতার মতোই তার ভাষণে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু যে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কতটা দূরদর্শী ছিলেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তার ভাষণে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই ব্যাখ্যা করার দাবি রাখে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন ৩ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তান জাতীয় সংসদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হলো। ইয়াহিয়ার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘোষণার পর বাংলাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা রাস্তায় নেমে আসে। আমরা যে অগ্নিঝরা মার্চ বলি তা ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকেই শুরু হয়। বাঙালিরা বুঝতে পারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। ১ মার্চ বিকেলে হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল; কিন্তু দুপুরবেলা সংসদ অধিবেশন বন্ধ ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠানের আর কোনো প্রয়োজন থাকল না। দেশি-বিদেশি সাংবাদিকসহ অনেকেই হোটেল পূর্বাণীতে এসে জড় হন। বঙ্গবন্ধু বিকেলে আসেন হোটেল পূর্বাণীতে। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, ২ মার্চ ঢাকা শহরে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হবে। ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হবে। আর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর বঙ্গবন্ধু হোটেল পূর্বাণীর নিচে চলে গেলেন। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক তার সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের নিচে নেমে আসেন। পাকিস্তান অবজারভারের সাংবাদিক মরহুম জওয়াদুর রহমান বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘নেতা কি হতে যাচ্ছে?’ এই সময় বঙ্গবন্ধু শুধু বলেন, ‘স্বাধীনতার একক ঘোষণা তিনি দেবেন না। মুজিব ইউডিআইর দিকে যাবেন না।’ এই বলে তিনি গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। পরবর্তীতে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন তখন হেলিকপ্টার গানশিপ মাথার ওপর দিয়ে চক্কর দিচ্ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তাহলে পুরো ঢাকা শহর ধ্বংস করে দেবে। বঙ্গবন্ধু জাতিকে এমন একটি ক্রান্তিলগ্নে সঠিকভাবেই সাহসের সঙ্গে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে প্রত্যেকটি শব্দ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। ৭ মার্চের সভার মূল উপজীব্য ছিল বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করা। কীভাবে স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে কীভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন চলবে, তা তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দিলেন কিন্তু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। এখানেই বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীতার প্রমাণ মেলে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ এই ভাষণের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো। এ থেকে পরিষ্কার অনুধাবন করা যায়, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আহ্বান জানালেন। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি বাহিনী তাকে হয়তো মুক্ত থাকতে দেবে না। ঠিক সেই ঘটনাই ঘটে ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতে। বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে আসেন। দৃশ্যত তার উদ্দেশ্য ছিল সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট নিরসেন জন্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা; কিন্তু তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল কালক্ষেপণ করা এবং এর মাধ্যমে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা। এ সময় পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশে আসেন। এটা ছিল আলোচনার নামে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের একটি কৌশল মাত্র। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইট নামে যে সামারিক অভিযান শুরু করা হয় তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ছিল স্বাধীনতার কার্যত De facto declaration of independence ঘোষণা। আর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে যে ঘোষণা দেন তা ছিল স্বাধীনতার অনুষ্ঠানিক বা আইনগত De jure declaration of independence ঘোষণা। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই বাঙালি জাতি তাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা পেয়েছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তিনি জানতেন কখন কি করতে হবে। ছাত্র নেতারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এমনকি ৮ মার্চ ছাত্রনেতারা বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন এখন আমাদের স্বাধীনতার দিকে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল স্বাধীনতা; কিন্তু তিনি জানতেন কখন স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে হবে। তিনি এমন কোনো কাজ করতে চাননি, যে কারণে আমাদের সমস্যায় পড়তে হতো। সেই সময় পুরো জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য ছিল ঐক্যবদ্ধ। এমনকি পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসার পর অভুক্ত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ভবনে খাবার প্রস্তুত করার জন্য যেসব বাঙালি কর্মচারী নিয়োজিত ছিলেন, তারা অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে কাজ বন্ধ রাখেন। প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। বঙ্গবন্ধু তখন বলেন, বাঙালি তো অতিথি পরায়ন জাতি। কাজেই আমি নির্দেশ দিচ্ছি, যারা প্রেসিডেন্টের রান্নার কাজে নিয়োজিত আছেন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সময় ঢাকা শহর পাকিস্তানি প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সারা পূর্ব পাকিস্তান তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলছিল। বঙ্গবন্ধু ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের সম্মেলনে পরিষ্কার বলেছিলেন, আমি অতি বিপ্লবী কোনো সিদ্ধান্ত নেবো না। কখন কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে। বঙ্গবন্ধু সবার কথাই শুনতেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতেন নিজের বিবেচনা মোতাবেক। পরে প্রমানিত হয়েছে যে, স্বাধীনতার প্রশ্নে গৃহীত বঙ্গবন্ধুর সব সিদ্ধান্তই সঠিক ও সময়োচিত।
প্রতি মিনিটে গড়ে ৫৮ থেকে ৬০টি শব্দ ব্যবহার করে ১৯ মিনিটে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন। সম্প্রচারতত্ত্বে প্রতি মিনিটে ৬০ শব্দের উচ্চারণ একটি আদর্শ হিসাব। ১ হাজার ১০৭টি শব্দের এই ভাষণে কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই। এই ভাষণ যতবার শোনা হোক না কেন, তাতে বিরক্তির সৃষ্টি হবে না।
মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে বঙ্গবন্ধু শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন না ঠিকই; কিন্তু তার ৭ মার্চের প্রেরণাদায়ক ভাষণটি আমাদের সঙ্গে ছিল। এই ভাষণ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে। সাহস জুগিয়েছে; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও হত্যাকাণ্ডের দোসররা দীর্ঘ একুশ বছর বঙ্গবন্ধুর এই সম্মোহনী ভাষণটি এক দিনের জন্যও প্রচার করেনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রথমবারের মতো এই ভাষণ সম্প্রচার করে। পাকিস্তানিরা যেমন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভয়ে ভিতু ছিল, তেমন ভিতু ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সত্যের পতাকা চিরদিন উড্ডীন রাখবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন: এম এ খালেক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে