বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও বৈশ্বিক সংকট
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বলাই যায়, এটি একুশ শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দিন দিন জলবায়ুর পরিবর্তন জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় তা আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে গবেষণাও চলছে ব্যাপক হারে। প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়; কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে, তার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করল, সে সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউস গ্যাস কার্বনডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ঊনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। যে কোনো অঞ্চলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুস্থ ও নির্মল পরিবেশ। আমাদের সামগ্রিক জীবনের ওপর পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম।
বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের অবক্ষয় সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত একটি বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, বন্যা, দুর্যোগ, বন উজাড়, নদীভাঙনের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী কোনো না কোনো অঞ্চল পরিবেশ বিপর্যের সম্মুখীন। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে; মূলত ব্যাপক জনঘনত্ব ও ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ বাড়ছে, ফলে দেশব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেমন গাছপালা কর্তন, মাটি উত্তোলন ও পাহাড় কাটা, গভীর নলকূপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন, অতিরিক্ত সেচকাজ ইত্যাদি দেশের পরিবেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য এবারের বাজেটে বরাদ্দ অর্থ কতটুকু কাজে লাগবে, তা সময়ই বলে দেবে।
তবে ভৌগোলিক অবস্থান, ভূপ্রকৃতি এবং কিছু প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদাপন্ন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের আবহাওয়া সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত হারে তার স্বাভাবিক রূপ পরিবর্তন করছে এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা। ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তাপমাত্রার সঙ্গে বর্তমান তাপমাত্রার তুলনা করলে দেখা যায়, গড়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি বেড়েছে। গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ‘স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, বিশ্বব্যাপী গড় উষ্ণতার চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সালের গড় তাপমাত্রার চেয়ে শুধু ২০২৩ সালেই এশিয়ার উষ্ণতা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিকূল এ পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন।
নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ, বজ্রপাত, খরা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকট হচ্ছে পরিবেশগত হুমকি। এসব হুমকি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। পবিবেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রকৃত পক্ষে অনেক সেক্টরকে সমন্বিত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা মাফিক পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। কারণ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, যেমন বায়ু, পানি, মাটি, ও জীবমণ্ডল প্রতিটি একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কযুক্ত। পরিবেশের একটি উপাদান আক্রান্ত হলে এর প্রভাব পড়বে অন্যান্য উপাদানের ওপর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনায় যেসব খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দের বিবরণ দিয়েছেন তার মধ্যে বেশ কিছু খাত রয়েছে, যেগুলো পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যদিও এবারের বাজেটে খাদ্যনিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিবেচনা নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামাজিক নিরাপত্তাঝুঁকিতে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার বিষয়গুলো বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বাজেটে ১৪টি খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার মধ্যে কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আবাসন ও নগরায়ণ খাতগুলো বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে জলবায়ু পরির্তনজনিত প্রভাব ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে বাজেট উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়। সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩৭ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিপাতের তারতম্য, বন্যা, তাপপ্রবাহ ইত্যাদি দুর্যোগ সংক্রান্ত ইভেন্ট কতটুকু ব্যবস্থাপনা করা যায়, তার ওপর নির্ভর করবে খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন ধারা। পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো পানি এবং দূষণমুক্ত, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহ এবং সুনীল অর্থনীতির বিকাশের ওপর পরিবেশের মানমাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করে। দেশের মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুনীল অর্থনীতির বিকাশে সামুদ্রিক মৎস্য আইন-২০২০, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা-২০২২, সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। নদীমাতৃক দেশের কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় পানিসম্পদের যথাযথ ও সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের পানিসম্পদের দক্ষ ও টেকসই ব্যবস্থার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, ড্রেজিং, সেচ ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও ভূমি পুনরুদ্ধার ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস উপযোগী পৃথিবী গড়া এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ব্যবস্থাপনায় বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নীতিমালা প্রণয়ন করে, যা দেশের জন্য একটি মাইলফলক। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড পরিচালনার জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৯৬৯টি প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ দেশে প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ, যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, দাবদাহ ইত্যাদির প্রকোপ বেড়ে চলেছে। সেজন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় বাজেটে আরও অতিরিক্ত অর্থ বাড়ালে এসব দুর্যোগে আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ ও সম্পদহানির কিছুটা উপকৃত হতে পারত। বাংলাদেশ দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হলেও প্রতি বছরই বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এ দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ব্যাহত করছে।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘূর্ণিঝড়ে ১৮ জনের মৃত্যু ছাড়াও প্রায় ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। ধারণা করা হয়, ২০ জেলায় প্রায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। আমাদের দেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। কারণ দূষণ, দখল, দুর্যোগ, দাবানল, শিকার ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন। সুন্দরবনসহ সারা দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। যেমন এবার রিমালের প্রভাবে প্রায় ১২৬টি হরিণসহ অনেক প্রাণী মারা যায় এবং পানিতে ভেসে যায় যথাযথ জায়গায় আশ্রয়ের অভাবে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করে। পরিকল্পিত নগরায়ণ ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবা সহজলভ্য করার জন্য নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়, যা ইতিবাচক একটি দিক।
তবে বাংলাদেশের সমগ্র নগর এলাকাগুলোর জন্য পরিকল্পিত নগরায়ণ ও নগরনীতি বাস্তবায়ন এখন সময়ের অন্যতম দাবি। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গুলোর জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের এবং তাদের মধ্যে বাজেট বরাদ্দের সমন্বয় সাধন করা অতি প্রয়োজনীয়, যাতে স্থানীয়ভাবে কোন খাতে কত বরাদ্দ দরকার, তা অনুধাবন করা যায়। এর থেকে পরবর্তীকালে বুঝতে পারব যে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কতটুকু এগোতে পেরেছি। আমাদের আরও দেখতে হবে, তরুণদের কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে পারি। পরবর্তী প্রজন্মই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল শিকার হতে চলেছে। সর্বশেষ বলা যায়, ২০৩০ সালের ভেতর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রতিকারের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা, অর্থায়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বছর বিশ্ব অর্থনীতিকে ৩৮ লাখ কোটি ডলার করে মূল্য দিতে হবে বলে দাবি করা হলো জার্মানির পোটসডাম ইনস্টিটিউিট ফর ক্লাইম্যাট রিসার্চের (পিআইকে) বিজ্ঞানীদের করা এক সমীক্ষায়। তাদের দাবি, মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগামী ২৫ বছরে বিশ্ব অর্থনীতির আয় কমবে ১৯ শতাংশ। বিশ্বের ১৬০০টি অঞ্চলের গত ৪০ বছরের জলবায়ু হিসেবে দেখে রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে। সাময়িক পত্রিকা নেচারে প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্টটি। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ন কোটজ বলেন, অতীতের নিঃসরণের কারণে ২০৪৯ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হবে ১৯ শতাংশ, যা বিশ্বের জিডিপির ১৭ শতাংশ কমার সমান। রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, আগামী আড়াই দশকে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। তাদের আয় কমবে ২২ শতাংশের কাছাকাছি। সমীক্ষক দলের আর এক সদস্য লিওনি ওয়েঞ্জ জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে না আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্সসহ উন্নত দেশগুলোও। কার্বন নিঃসরণের জেরে ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে আগামী দিনে ক্ষতি হবে তার প্রায় ৬ গুণ বেশি।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন। অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে ভয়ংকর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তা হলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে। যেমন; ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে। সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে। আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত গরম পড়তে পারে এবং খরার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। দেশগুলোকে বলা হচ্ছে তারা যেন বর্তমান শতকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনে। অর্থাৎ যেটুকু গ্যাস নিঃসরিত হবে তা অতিরিক্ত গাছ লাগানোর মতো ব্যবস্থা নিয়ে ভারসাম্য রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশগুলো যদি তা করতে পারে, তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির দ্রুত গতি কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর পরিণতি এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে