Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

মহাকাশ ও স্যাটেলাইট গবেষণায় বাংলাদেশের আগ্রহ, সংকট ও সম্ভাবনা

Rased Mehedi

রাশেদ মেহেদী

বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩

১৯৭২ সালের ২৩ জুলাই মহাকাশ গবেষণায় দূর অনুধাবন বা ‘রিমোট সেনসিং’ প্রযুক্তির উৎকর্ষের ইতিহাসে নিভৃতেই একটি বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল। এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো আর্থ রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইট (ইআরটিএস-১, ১৯৭৫ সালে এর নাম পরিবর্তণ করে রাখা হয় ল্যান্ডস্যাট-১) উৎক্ষেপণ করে।

এর আগে রাশিয়ার স্পুটনিক-১ মহাকাশে মানুষের প্রথম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ভস্টক-১ এবং-৫ মানুষের সামনে রোমাঞ্চকর মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ এনে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপ্লোরার মহাবিশ্বে প্রতিবেশী গ্রহ-উপগ্রহের দিকে মানুষের দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছে। অ্যাপেলো-১১ মহাকাশযানে মানুষ পা রেখেছে চাঁদের মটিতে। কিন্তু ইআরটিএস-১ মানুষের চোখের সামনে দৃষ্টি দিগন্তের সীমানা পেরিয়ে বিস্তৃত পাহাড়, সমুদ্র আর ভূ-পৃষ্ঠের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা গভীর রহস্যের পর্দা উন্মোচনের সুযোগ করে দেয়।

১৯৭২ সালের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশও সেই সুযোগ থেকে পিছিয়ে থাকেনি। বাংলাদেশকে পিছিয়ে থাকতে দেননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্র ইআরটিএস-১ উৎক্ষেপণের পরপরই বাংলাদেশে ইআরটিএস কর্মসূচি গ্রহণ এবং স্পেস অ্যান্ড অ্যাটমোসফেয়ার রিসার্চ সেন্টার(এসএআরসি) প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। এই ইআরটিএস কর্মসূচি এবং এসএআরসির পরিবর্তিত রূপ হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান(স্পারসো)। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলেই বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন এই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। ফলে মহাকাশের সঙ্গে সংযোগ এবং বাংলাদেশে মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুই।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনাকেই ধ্বংস করে দিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশবিরোধী শক্তির মদদপুষ্ট যে সরকারগুলো পরবর্তী ২১ বছর ধরে সরকার পরিচালনা করেছে, তারা মহাকাশ গবেষণা এবং কিংবা বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে বাংলাদেশকেও সংযুক্ত করার বিষয়টি একেবারেই গুরুত্ব দেয়নি। মহাকাশ গবেষণার বিষয়টি তো অনেক দূর, ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারে কর্তা-ব্যক্তিদের অজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশকে সি-মিই-উই-৩ সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামে সংযুক্ত করা হয়নি। একবার সুযোগ হাতছাড়া করার পর সি-মিই-উই-৪ সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হতে আরও এক যুগেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে নতুন করে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির দিকে অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সে সময় সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দ্রুত বিকাশমান মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবার রূপান্তরে বিশ্বের সঙ্গে একই সমান্তরালে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করা। দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মোবাইল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। একই সময়ে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের একটি ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৯৭ সালেই তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের একটি নিজস্ব স্যাটেলাইট পাওয়ার প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। এরপর ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ কাজের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরপর আমরা জানি ২০১৮ সালের ১২মে রচিত হয় বাংলাদেশের সেই অসাধারণ গর্বের অধ্যায়। মহাকাশে অনুরণিত হয় জয় বাংলা ধ্বনি, সফল উৎক্ষেপণ হয় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের। আমরা জানি এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একাধিক ক্যাটাগরির আরও স্যাটেলাইট নির্মাণ সম্ভব হবে, এটাও আশা করা যায়।

কিন্তু এর বাইরে একটা বড় আলোচনার বিষয় থেকে যায় দেশের সার্বিক মহাকাশ গবেষণা নিয়ে। কারণ স্যাটেলাইট নির্মাণ, উৎক্ষেপণ এবং এর ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা পাওয়ার বিষয়টির বাইরেও মহাকাশ গবেষণার অনেক বড় ক্ষেত্র দুনিয়াতে আছে। মহাকাশ গবেষণা এবং দূর অনুধাবনে বিপুল উৎকর্ষের মধ্য দিয়েই বিশ্বের ভূ-পৃষ্ঠ তো বটেই, গভীর জলরাশির গভীরে এবং ভূমির নীচে দৃষ্টি ফেলা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর সব সম্পদের উপর মানুষের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।

মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান সম্পর্কে মহাকাশ বিজ্ঞান জানিয়ে দিয়েছে বলেই ওই দূর দৃষ্টিসীমার বাইরে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর অবস্থান, আপদ-বিপদ এবং নিয়ন্ত্রণের নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবনও সম্ভব হচ্ছে। অনেকের কাছে মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান কিংবা চাঁদে পা দেওয়ার ঘটনা নিছক ফ্যান্টাসি মনে হতে পারে। কিন্তু এই ফ্যান্টাসি অর্থহীন নয়। বরং মহাকাশের অন্য গ্রহের দিকে চোখ রাখার প্রবল আগ্রহ তখনই তৈরি হয়েছে, যখন দূর গ্রহে চোখ রেখে পৃথিবীর সব অজানাকে নিজেদের দৃষ্টি সীমার ভেতরে উন্মোচন করা গেছে। পৃথিবীর সম্পদের কার্যকর ব্যবহার সম্পর্কে যথাযথ পন্থা নির্ধারণ করাও সম্ভব হয়েছে।

মহাকাশ গবেষণায় উৎকর্ষ সাধন না হলে আজকের দুনিয়ায় তথ্য-প্রযুক্তির এই বিপুল অগ্রযাত্রার চিন্তাও হয়তো মানুষ আরও অনেক অনেক বছর পরে করত। পৃথিবীতে মহাকাশ যার যত বেশি নিয়ন্ত্রণে সে দেশই তত শক্তিশালী। অর্থ, সম্পদ, প্রযুক্তি এবং সামরিক শক্তি সব দিক থেকেই। এ কারণেই উন্নত দেশগুলো গবেষণা খাতে মহাকাশ গবেষণাতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। ফরচুন ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ গবেষণায় ২০২০ সালে ব্যয় বাড়িয়ে ২২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে। মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার বর্তমান ব্যয় ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, চীনের ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও গত বছর (২০২২ সালে) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করা হয়েছে।

মহাকাশ গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই ভারতীয় উপমহাদেশে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। সে সময় ভারতে মহাকাশ বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন শিশির কুমার মিত্র। বাঙালি এই বিজ্ঞানী কোলকাতা থেকেই টেরেস্ট্রিয়াল রেডিও সিস্টেমের মাধ্যমে আয়নোস্ফিয়ারে (আয়নমন্ডল) সাউন্ড গাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করে একাধিক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে সিভি রমন, মেঘনাদ সাহা, বিক্রম সারাভাই, হোমি ভাবা ভারতের মহাকাশ গবেষণাকে সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। বিশেষ করে মহাজাগতিক বিকিরণ এবং হাই অ্যাটমোসফেয়ার বা উচ্চ বায়ুমণ্ডল নিরীক্ষণে গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেন এই চারজন মহাকাশ বিজ্ঞানী। সেই ধারাবাহিকতা থেকে ভারতে ১৯৬২ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ (ইনকোসপার) গঠিত হয়। এটিই ১৯৬৯ সালে বর্তমান উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মহাকাশ গষেণা সংস্থা “ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন”, সংক্ষেপে ‘ইসরো’ নামে পরিচিত হয়।

১৯৭৫ সালে মহাকাশ জয়ে নতুন গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয়েছিল ভারতের। ওই বছরের ১৯ এপ্রিল ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট ‘আর্যভট্ট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়।

ভারতে স্বতন্ত্র মহাকাশ গবেষণা অধিদপ্তর এবং গবেষক তৈরির জন্য স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট রয়েছে। মহাকাশ গবেষণায় নতুন পরিকল্পনার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি মহাকাশ কমিশনও আছে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষায়িত বিভাগ রয়েছে। মহাকাশ ও দূর অনুধাবনে ব্যবহারিক বিস্তারেও ভারত এ অঞ্চলে অন্য সবার থেকে অনেক উপরে। বর্তমানে মহাকাশে ভারতের উৎক্ষেপণ করা কয়েক ধরনের স্যাটেলাইট সংখ্যা ৬৭টি। অথচ আমরা সুসংগঠিতভাবে মহাকাশ গবেষণার জন্য এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে পারিনি। বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণার জন্য গবেষক তৈরিতে এখন পর্যন্ত কোনো স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট নেই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই মহাকাশ বিজ্ঞানের উপর বিশেষায়িত বিভাগ নেই। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের একটি কোর্স হিসেবে মহাকাশ বিজ্ঞান আছে। যে কোর্স থেকে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য টেকনিশিয়ান তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী তৈরি সম্ভব নয়। এমনকি একজন স্যাটেলাইট আর্কিটেক্ট তৈরিও করা সম্ভব নয়।

আমাদের একমাত্র যে মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান(স্পারসো) আছে সেটির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এই প্রতিষ্ঠান মূলত রিমোট সেন্সিং বা দূর অনুধাবনের কাজটিই সফলভাবে করছে। কিন্তু মহাকাশ গবেষণায় খুব বেশি সাফল্য দেখানোর সুযোগ কাঠামোগতভাবেই এ প্রতিষ্ঠানের নেই। প্রতিষ্ঠানটি গবেষকদের নেতৃত্বে চলে না, চলে গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বে, প্রায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে। অথচ আমাদের হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েল একদল তরুণ সামান্য সুযোগ কাজে লগিয়ে লুনার ভিউ অ্যাপ তৈরি করেছে যেটা নাসার স্বীকৃতি শুধু নয়, পুরস্কারের তালিকাতেও এসেছে। যদি যথার্থ অর্থে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্র দেশে তৈরি করা যায়, তা হলে আমাদের তরুণরাও একদিন হয়তো নিজেদের তৈরি মহাকাশ যানে চাঁদে পা রাখতে সক্ষম হবে। কেউ বলতেই পারেন অলীক স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন অবাস্তব নয়। একজন বাঙালি জগদীশ চন্দ্র বসুই প্রথম বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন বাতাসে ইথার আছে মালার মতো অদৃশ্য ঢেউয়ের খেলায়। এর মাধ্যমে তড়িৎ চুম্বকীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের কন্ঠ বিশ্ববাসীকে শোনানো সম্ভব একই সময়ে। বেতার আবিস্কারে মার্কনির নাম যতই নোবেলের ইতিহাসে লেখা থাকুক, জগদশীশ চন্দ্র বসুর নামটি উদ্ভাবক হিসেবে মার্কনির উপরেই থাকবে। জগদীশ চন্দ্র বসুই কিন্তু বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, নিভৃতে হাসি-কান্নার অনুভূতি তাকেও ছুঁয়ে যায়।

বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণার সম্ভাবনা অনেক। আমাদের তরুণদের সেই সক্ষমতা আছে। তারা সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে নিজেদের চিন্তার উৎকর্ষের বিপুলতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে দেশে, বিদেশে ও নানা ক্ষেত্রে। বাংলাদেশি তরুণরা নাসাতেও কাজ করছে। সেই বিপুল সম্ভাবনা সামনে রেখেও দেশে মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে না কেন? আমাদের সংকট হচ্ছে, মহাকাশ গবেষণার বিষয়ট এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। কারণ এর ব্যবহারিক মূল্য, বেনিফিট অব রিটার্ন কিংবা ইকনোমিক রেট অব রিটার্ন কি, সে সম্পর্কে চট করে ভাবা যায় না কিংবা সরল অংকের হিসেব করা যায় না। যেমন-সমুদ্র সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়টিও যে দূর অনুধাবন গবেষণা ও ব্যবস্থাপনার উপর অনেকখানি নির্ভর করে, সেটি আমরা ভেবে দেখেছি কি কখনও? দেখিনি। এ কারণে আমরা এখন পর্যন্ত সমুদ্রে জাহাজ দিয়ে নুড়ি খোঁজার আনুভূমিক দৃষ্টিকোণেই নিজেদের চিন্তা, পরিকল্পনা, প্রকল্প আটকে রেখেছি। মাথার অনেক উপর থেকে বিস্তৃত পরিসরে গভীর সমুদ্রের গভীরে দৃষ্টি রাখার প্রযুক্তির কথা এখনও চিন্তাই করতে পারিনি।

আমরা যদি একদিন উন্নত বিশ্বের কাতারে নিজেদের কল্পনা করতে চাই, তা হলে মহাকাশ গবেষণার দিকে নজর দিতেই হবে। শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে জিও স্টেশনারি কিংবা কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট নয়, মহাকাশ গবেষণায় আরও বিস্তৃত অবদান রাখতে পারে এমন নতুন ক্যাটাগরির স্যাটেলাইট তৈরির সক্ষমতাও আমাদের তৈরি করতে হবে। এ জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে টেকনিশিয়ান তৈরির প্রক্রিয়া থেকে আরও একটু দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট তৈরি করে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত মহাকাশ বিজ্ঞান বিভাগ চালু করে মহাকাশ বিজ্ঞানী তৈরির প্রকল্প নিতে হবে। হয়তো আরও ১০০ বছর পর বাংলাদেশি মহাকাশ অভিযাত্রী চাঁদে যাবেন। আজকের আমরা হয়তো সেদিন থাকবো না। ক্ষতি কি? আমাদের উত্তরাধিকাররাই তো থাকবে, তাদের জন্য সুদূরপ্রসারী ক্ষেত্রের বীজ কি আমরা এখন বপন করতে পারি না? সেই অপার সম্ভাবনার বীজ বপন করা কি খুব বেশি কষ্টসাধ্য?

রাশেদ মেহেদী
সাংবাদিক, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্লেষক


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ