সরকারি আদেশ জালিয়াতি
মিথ্যা তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিলেন বিটিআরসি কর্মকর্তা
জিওতে কর্মকর্তার ভ্রমণ ব্যয় বিটিআরসি বহন করবে উল্লেখ থাকলেও এ সম্পর্কিত কোনো আদেশ সংস্থাটির আর্থিক বিভাগ থেকে জারি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর এক কর্মকর্তার সরকারি আদেশে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। বিদেশগামী ওই কর্মকর্তার নাম মো. মিরাজুল ইসলাম। তিনি বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ ব্যয় নিজে বহন করলেও, সরকারি আদেশে (জিও) তিনি বিটিআরসির অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিতব্য আইসিএএনএন কমিউনিটি ফোরাম ২০২৫-এ অংশগ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিটিআরসি থেকে তার ভ্রমণের কোনো আর্থিক অনুমোদন দেয়া হয়নি এবং ব্যয় নির্বাহ সংক্রান্ত কোনো জিও জারি করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে বিটিআরসির একাধিক সূত্র। ধাপাচাপা দিতে অসংলগ্ন তথ্য দেয়ারও চেষ্টা করেছেন বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
মিরাজুল ইসলামের ভ্রমণ ব্যয় সম্পর্কিত আর্থিক জিও হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার বলেন, ‘জিও তো হয়েছে, ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।’ তবে ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো জিও নেই জানালে তিনি পরদিন যোগাযোগ করতে বলেন।
মঙ্গলবার তার সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই অরিজিনাল জিওটা পরে কারেকশন হয়েছে। জিওটা সংশোধন করা হয়েছে এবং তিনি (মিরাজুল ইসলাম) ছুটি নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন।’
তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিশ্চিত করার জন্যই কি মিরাজুল ইসলামের সরকারি আদেশে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিটিআরসির ওয়েবসাইটে থাকা নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯ জানুয়ারি কমিশনের প্রশাসন বিভাগ থেকে এক সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, ৮ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিতব্য আইসিএএনএন কমিউনিটি ফোরাম ২০২৫-এ মো. মিরাজুল ইসলাম অংশগ্রহণ করবেন এবং তার যাবতীয় ভ্রমণ ব্যয় বিটিআরসি বহন করবে।
পরের মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে মিরাজুল ইসলামের আমেরিকা ভ্রমণ সম্পর্কিত আরও একটি সরকারি আদেশে জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, মার্চ মাসের ১৪ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১ তারিখ পর্যন্ত মো. মিরাজুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটাবেন। ওই সরকারি আদেশে আরও বলা হয়, এই ভ্রমণের যাবতীয় ব্যয় মিরজুল ইসলাম নিজে বহন করবেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মিরাজুল ইসলাম মূলত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে এই সফরে গিয়েছেন। তার স্ত্রীও বিটিআরসির কর্মকর্তা, যার নিয়োগ হয়েছিল শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সরাসরি রেফারেন্সে; কিন্তু সরকারি ভ্রমণের অনুমোদন না পেলে ভিসা পেতে জটিলতা হতে পারে, সেই শঙ্কায় তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার আবেদন করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতারণার ঘটনা নয়, বরং দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করার একটি গুরুতর উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার এ ধরনের প্রতারণায় ক্ষুব্ধ বিটিআরসির কর্মকর্তারাও।
তারা বলছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার সরকারি সফরের নামে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন, ভিসার জন্য মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
যদিও বিটিআরসি থেকে এ ঘটনায় এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে