‘অযোগ্য’ ফ্লাইট সেফটি ইন্সপেক্টর নিয়োগে প্রশ্নের মুখে বেবিচক
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে পাশ কাটিয়ে ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর (এফওআই) পদে ‘অযোগ্য’ কর্মকর্তা কাজী ফওজিয়া নাহারকে নিয়োগ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তার নেই কোনো উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা কিংবা বৈধ পাইলট লাইসেন্স। এতে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও পেশাগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
নিয়োগপ্রাপ্ত ফওজিয়া ১৯৯৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর সন্তান কোটায় বেবিচকে লাইব্রেরিয়ান পদে যোগ দেন। এরপর দীর্ঘদিন তিনি প্রশাসনিক ও গ্রন্থাগার বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তবে ২০২১ সালে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে সংশোধন করা হয় চাকরিবিধি, যার ফলে উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছাড়াই তার এফওআই পদে পদোন্নতির পথ খুলে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, ফওজিয়াকে পদোন্নতি দিতেই চাকরিবিধির পরিবর্তন করা হয়।
আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুসারে, ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন, পরীক্ষা এবং লাইসেন্সধারী অভিজ্ঞ পাইলটদের মধ্য থেকে নির্বাচন বাধ্যতামূলক। বয়সসীমাও নির্ধারিত রয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ বছর। অথচ ফওজিয়া নাহার যখন ২০২১ সালে এই পদে পদোন্নতি পান, তখন তার বয়স ছিল ৪৯ বছরেরও বেশি। বর্তমানে বেবিচকে কর্মরত আটজন এফওআইর সাতজনই অভিজ্ঞ পাইলট। একমাত্র ব্যতিক্রম কাজী ফওজিয়া নাহার, যিনি এই পদে রয়েছেন কোনো উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছাড়াই।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ নিয়োগ পেয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেবিচক কর্তৃপক্ষ হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া লিখিত বার্তায় দাবি করেছে, ফওজিয়াকে ‘কেবিন সেফটি’-সংক্রান্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তার নিয়োগপত্রে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবিন সেফটি ইন্সপেক্টর হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছরের কেবিন ক্রু হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ ফওজিয়ার এমন কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। এভিয়েশন বিশ্লেষক এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপত্তা ও তদারকি ব্যবস্থায় এমন নিয়োগ গোটা উড়োজাহাজ পরিচালনা ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই নিয়োগ বা পদোন্নতির ঘটনা বেবিচকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নিয়োগবিধি এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যা দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়’। অভিযোগের বিষয়ে কাজী ফওজিয়া নাহারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। লিখিতভাবে জানতে মেসেজ দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে