Views Bangladesh Logo

সমন্বয়হীনের কারণে দেশের পুঁজিবাজার প্রত্যাশিত মাত্রায় উন্নত হচ্ছে না

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেছেন, ‘উন্নত দেশগুলোর উদ্যোক্তাগণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভর করে থাকেন। কারণ ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করলে মিচম্যাচ হবার আশঙ্কা থাকে। উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারমুখী করার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। আর এ জন্য সবার আগে পুঁজিবাজার যাতে উদ্যোক্তাদের জন্য আস্থার কেন্দ্রে পরিণত হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’ ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তার গুরুত্বপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন অর্থনীতিবিষয়ক নিয়মিত লেখক এম এ খালেক ও ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সহযোগী সম্পাদক গিরীশ গৈরিক

ভিউজ বাংলাদেশ: বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার যেভাবে চলছে, তাকে কি আপনি স্বাভাবিক অবস্থা বলবেন? আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে যদি কিছু বলতেন?
ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী: একটি দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য সাধারণত ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা হয় না। উদ্যোক্তাগণ দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির চাহিদা শেয়ারবাজার থেকেই মিটিয়ে থাকেন। ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করলে ‘মিসম্যাচ’ হবার আশঙ্কা থাকে; কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সংগ্রহ করা হলে এই সমস্যা হবার আশঙ্কা থাকেন না বললেই চলে; কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার এখনো তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমাদের দেশের মানুষ শেয়ারবাজার বলতে ট্রেডিংকে বুঝে থাকে। বাজারের আকার, ক্যাপিটালাইজেশন এসব বিষয়ে তারা খুব একটা সচেতন নন। প্রতি দিন কি পরিমাণ ট্রেডিং হচ্ছে, কোন কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বাড়ছে, কোনটির শেয়ারের মূল্য কমছে এসব বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, দেশের পুঁজিবাজার প্রত্যাশিত মাত্রায় উন্নত হচ্ছে না, বাজার বিস্তৃত হচ্ছে না। শেয়ার মার্কেট শুধু পুঁজিবাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় আমাদের পুরো অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যই সুস্থ্য ধারার শেয়ার মার্কেট প্রয়োজন। আমাদের দেশে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন খাতের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রত্যক্ষ করা যায়। শেয়ারবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার বীমা সেক্টরের সঙ্গে শেয়ারবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ এসব খাত প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে বিকশিত হবার চেষ্টা করছে। আর্থিক ব্যবস্থার যেসব খাত আছে তাদের সবাইকে একই সঙ্গে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে একটি বা দুটি খাতের উন্নয়নের চেষ্টা করা হলে কোনো কাজ হবে না। দেখা যায়, আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতের ওপর যতটা গুরুত্ব দেয়া হয় বীমা কোম্পানি বা পুঁজিবাজারের ওপর সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো একটি বা দুটি নয় অর্থনীতির সব খাতকে একত্রিত করে উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি আইন করে দেন, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বা অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে যেতে হবে তাহলে উদ্যোক্তাগণ বাধ্য হবেন পুঁজিবাজার থেকে তাদের প্রত্যাশিত অর্থায়ন সংগ্রহ করতে। উদ্যোক্তারা যদি উন্নত দেশগুলোর মতো পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন সংগ্রহ করতেন তাহলে ব্যাংকের ওপর অযাচিত চাপ অনেকটাই কমে যেত। ঋণখেলাপি হবার প্রবণতাও কমে আসতো।

ভিউজ বাংলাদেশ: যখন কোনো প্রকল্প স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয় তখন কি এমন একটি শর্ত দেয়া যেতে পারে যে, উদ্যোক্তারা তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চাহিদা শেয়ার মার্কেট থেকে মেটাবেন?
ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী: অবশ্যই আমি সেটাই বলতে চাচ্ছি। কোনো উদ্যোক্তা ঋণ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আবেদন করবেন তখন সেই আবেদন অনুমোদন করার সময় তাদের শর্ত দেয়া যেতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রয়োজন হলে তা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পুরোটা না হলেও অন্তত ২৫ শতাংশ পুঁজি শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আমাদের দেশে যেগুলো বড় এবং ভালো কোম্পানি তারা শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। অধিকাংশ উদ্যোক্তাই মনে করেন, তাদের কোম্পানির শেয়ারবাজারে ছাড়া হলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন, প্রতিষ্ঠানের ওপর পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে পারে। নানাভাবে কর্তৃপক্ষ এবং শেয়ার হোল্ডারদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব করা না হলে সমস্যা হতে পারে। তাই তারা পুঁজিবাজারের বাইরে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আইন প্রণয়ন করে প্রতিটি কোম্পানির একটি নির্দিষ্টসংখ্যক শেয়ারবাজারে ছাড়ার বিধান করা যেতে পারে। তবে শুধু আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব হবে না। এ জন্য উদ্যোক্তাদের শেয়ারবাজারে এলে কি লাভ হবে তা ভালোভাবে বুঝিয়ে তাদের কোম্পানির শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ভালো কোম্পানির শেয়ারবাজারে আনা গেলে বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়বে। বাজার অধিকতর গতিশীল হবে। তখন উদ্যোক্তারা বুঝতে পারবেন ব্যাংকিং খাত থেকে বিনিয়োগ আহরণের চেয়ে শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ আহরণ অধিকতর নিরাপদ ও লাভজনক।

ভালো কোম্পানির শেয়ারবাজারে না আসার ক্ষেত্রে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহের ক্ষেত্রে দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়; কিন্তু ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। যারা প্রভাবশালী তারা চাইলেই যে কোনো ব্যাংক থেকে চাহিদামতো ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। কোনো কোম্পানির মালিক যদি পুঁজিবাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চান তাহলে তাকে নানা ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নানা রকম কাঠ-খড় পোড়াতে হবে। প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হয়; কিন্তু ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। ঋণের জন্য আবেদন করার পর ব্যাংক তুলনামূলক স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঋণ মঞ্জুর এবং ছাড়করণের ব্যবস্থা করবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ আহরণ করা হলে আর কী কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?
ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী: পুঁজিবাজার থেকে ঋণ গ্রহণ করা হলে মিসম্যাচ হবার আশঙ্কা কম থাকে। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পর কোনো প্রকল্প যদি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয় তাহলেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্প বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগেই বিপুল পরিমাণ সুদ ও ঋণের কিস্তি তার ওপর চেপে বসে। ফলে উদ্যোক্তাকে ঝামেলায় পড়তে হয়; কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো ঝামেলা নেই। প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরু করার পর মুনাফা অর্জন করলেই শুধু শেয়ার হোল্ডারদের ডিভিডেন্ড প্রদান করা হয়। এর আগে কোনো শেয়ার হোল্ডার কোম্পানির নিকট মুনাফা দাবি করতে পারেন না। শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা আসে ডিভিডেন্ড আকারে। আর ব্যাংক থেকে মুনাফা আসে সুদ আকারে। ব্যাংকে সঞ্চিত আমানতের ওপর যে সুদ পাওয়া যায় তা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যেই অনীহা লক্ষ্য করা যায়। কারণ ইসলামি বিধান মতে, যে কোনো প্রক্রিয়ায় সুদ গ্রহণ অবৈধ।

মূলত এ কারণেই ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর জনপ্রিয়তা দিনদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে যে ডিভিডেন্ড পাওয়া যায় সেটা প্রচলিত ব্যাংক সুদের মতো নয়। ইসলামি ব্যক্তিত্বদের মতে, শেয়ার ব্যবসা অবৈধ নয়। এই বিষয়গুলো উদ্যোক্তাদের ভালোভাবে বুঝানো সম্ভব হলে তারা নিজে থেকেই পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার জন্য আগ্রহী হবেন। শেয়ারবাজারের ‘মোড অব ফাইন্যান্সে’র নাম হচ্ছে ডিরেক্ট মোড অব ফাইন্যান্স। আর ব্যাংকিং সেক্টরের মোড অব ফাইন্যান্স হচ্ছে ইনডাইরেক্ট মোড অব ফাইন্যান্স। ব্যাংকিং সেক্টরের অর্থায়িত কোনো প্রকল্প যদি ফেইল করে তাহলে ব্যাংক সে জন্য দায়ি হবে; কিন্তু শেয়ারবাজারে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয় তাহলে শেয়ার হোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মার্চেন্ট ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তার দায় বহন করবে না। মূলত এ কারণেই শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ট্যাক্স নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা অনুসরণ করা হয়। যেমন একটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তার ক্ষেত্রে ট্যাক্সের হার কিছুটা কম। আর যেসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় তাদের তুলনামূলক বেশি ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত ট্যাক্সের ব্যবধান আরো বাড়ানো যেতে পারে। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় তারাও তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হতে পারে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবার পদ্ধতি এবং নিয়মকানুন সহজীকরণ করা যেতে পারে।

ভিউজ বাংলাদেশ: বর্তমান অবস্থায় দেশের শীর্ষসস্থানীয় কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার জন্য কী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী: আগেই বলা হয়েছে, কোনো প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনকালে তারা কত শতাংশ অর্থায়ন পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করবেন তার একটি গাইডলাইন দেয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সংগ্রহের জন্য উদ্যোক্তাদের শেয়ারবাজারমুখী করার চেষ্টা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের পর্যায়ক্রমে বিরাষ্ট্রীয়করণ করা যেতে পারে। আর এই বিরাষ্ট্রীয়করণের একটি চমৎকার পন্থা হতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর লোকসান দেবার প্রধান কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব এবং সর্বস্তরে বিরাজমান দুর্নীতি। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা গেলে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতকরণ এবং দুর্নীতি রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হতে পারে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য একটি নির্দিষ্টসংখ্যক শেয়ার ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। বিগত সরকার আমলে প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে ছাড়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসান দিচ্ছে তাদের শেয়ার জরুরিভিত্তিতে বাজারে নিয়ে আসা যেতে পারে। ভালো প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হলে বাজারের ওপর সাধারণ বিনিয়োগকারিদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখার জন্য শেয়ারবাজারকেও অ্যাউন্টেবল করতে হবে।

শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হলো নাকি কম মুনাফা হলো সেটা বাজারের ভালো অবস্থার নির্দেশক নয়। বাজার স্বচ্ছতা এবং জববিদিহির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। দেশের শেয়ারবাজারের অভ্যন্তরীণ সুশাসন এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। মাঝে মাঝেই বাজার নিয়ে নেতিবাচক কথা শোনা যায়। শেয়ারবাজারকে যদি শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ করতে হয় তাহলে আইন-কানুনগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। নিকট অতীতে (১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে) আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে দুটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। সেই স্মৃতি এখনো বিনিয়োগকারীদের তাড়া করে ফেরে। যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে সর্বোচ্চ বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মানুষের আস্থা। কোনো কারণে মানুষ যদি আস্থাহীনতায় ভোগে তাহলে সেখানে তারা বিনিয়োগ করতে চাইবে না এটাই বাস্তবতা। শেয়ারবাজার বলি আর ব্যাংক বা বীমা প্রতিষ্ঠান বলি আইন-কানুনগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে কোনো ঝুঁকি থাকবে না। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে পুঁজিবাজারকে বিকশিত করার উদ্যোগ নিতে হবে

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ