চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। ১৯৯৮ সালে, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ আফ্রিকা আর রানার্সআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিক হলেও আরসটিতে খেলেনি বাংলাদেশ। এ টুর্নামেন্টটি আগে আইসিসি নকআউট ট্রফি নামে পরিচিত ছিল। মূলত নন-টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে আর্থিক তহবিল সংগ্রহের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এটা বলতে পারেন, অনেকটা ফিফা কনফেডারেশনস কাপের মতোই এই টুর্নামেন্টটি। ছয়টি মহাদেশের সেরা ছয়টি ফুটবল দল, ডিফেন্ডিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিক দেশ খেলে কনফেডারেশনস কাপে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ক্রিকেটে র্যাংকিং থাকা সেরা আটটি দল খেলছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মাঠে টুর্নামেন্টের নবম আসর শুরু হবে। সর্বশেষ আসর হয়েছিল ইংল্যান্ডে, ২০১৭ সালে। ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলা হয় এই টুর্নামেন্ট। গত আসরে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলার রেকর্ড গড়েছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে পাঁচ আসরে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য এটিই।
সাত বছর পর শুরু হতে যাওয়া আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু? দল, প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন, বর্তমান পারফরম্যান্স- সবকিছু বিবেচনায় বাংলাদেশের যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, চ্যালেঞ্জও থাকছে অনেক। টুর্নামেন্টে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। ‘বি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ দল। ২৪ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে তারা। নকআউট পর্বে যাওয়ার পথে এই তিনটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতিপক্ষ হিসেবে উপমহাদেশের বড় দুটি দলের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডও চোখ রাঙাতে পারে বেশ ভালোভাবে। ফলে বাংলাদেশকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।
এবার বাংলাদেশ দলে নেই দুই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। বিশ্ব বিখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে এসে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ত্রুটিপূর্ণ বোলিং অ্যাকশনের কারণে তার ওপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছে। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে তার খেলার সুযোগ থাকলেও ‘অর্ধেক শক্তির সাকিব’কে দলে নেননি নির্বাচকরা। আর তামিম ইকবাল দ্বিতীয় দফায় অবসর ঘোষণা করে সব আলোচনার সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এই দুই ক্রিকেটারকে ভীষণ মিস করবে বাংলাদেশ। অবশ্য অফ ফর্মের কারণে দলে নেই লিটন কুমার দাস। যদিও দল থেকে বাদ পড়ার পর বিপিএলে এক বিধ্বংসী সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান। সাত ব্যাটসম্যান, তিন স্পিনার ও চারজন পেস বোলার নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স দল গঠন করেছে বাংলাদেশ। এই দল নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কী থাকবে? বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছেন। দল ঘোষণার সময় তিনি বলেন, ‘আশা নিয়েই তো যেতে হবে। প্রতিটা ম্যাচ জেতার জন্য লড়াই করতে হবে। মাঠে ব্যাটে-বলে আশার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। প্রতিপক্ষ কেউই ফেলনা নয়। ২০২৩ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড, দুই দলই ওয়ানডে খেলায় তারা কিন্তু কিছুটা এগিয়ে আছে ম্যাচের অভিজ্ঞতা, ওই মাঠের উইকেট, রান তাড়া এসব বিষয়ে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজটা অনেক দুরূহ। আমাদের তিন প্রতিপক্ষ- এক দল (পাকিস্তান) নিজেদের ঘরের মাঠে খেলবে। আর দুবাইয়ের সঙ্গে ভারত খুব পরিচিত। তাই এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় অর্জন হবে যদি আমরা পরবর্তী পর্যায়ে যেতে পারি। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো একটা পর্যায়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে দল আছে, আমি বিশ্বাস করি।’ অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিুবল হাসান মনে করেন, চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। সাকিব-তামিম থাকলে দল যা হতো, এই দুজনকে ছাড়া তাই করবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘সাকিবকে দলে রাখার যুক্তিকতা আমি দেখি না। কারণ তার বোলিং অ্যাকশন অবৈধ। অবশ্য তমিমকে মিস করবে দল। কারণ ওপেনিংয়ে দলের যে একটা ঘাটতি, সেটি এখনো পূরণ হয়নি।’ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারে? রকিবুল হাসান বলেন, ‘নিজেদের দিনে যে কেউই ভালো করতে পারে। দেখা গেল যে, আমি শ্রেষ্ঠটা খেললাম, কিন্তু হেরে গেলাম। এই টুর্নামেন্টে আগে থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।’ অপরদিকে, বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক জানিয়েছেন, সাকিবের মতো খেলোয়াড় দলে না থাকার অভাব পূরণ করা কঠিন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে সাকিবে অনুপস্থিতি দলের শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের ওপর প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে সর্বশেষ পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ডগড়া পারফরম্যান্স। এই দুই দেশের চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশন জয় করে যে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ, তা আলোর মতোই পথ দেখাবে। গত বছরের আগস্টে পাকিস্তান সফরে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনী। ইতিহাস গড়া ভেন্যুতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দুটি ম্যাচ তাদের। অতীত সাফল্য বাংলাদেশ দলটিকে আরও সতেজ করে তুলবে এবং বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে। এছাড়া সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে কঠিন কন্ডিশনে টেস্ট ম্যাচ জয়, টি-টোয়েন্টি সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করার সাফল্য মনের জোর বাড়াতে পারে শান্তদের। আর তা পুঁজি করেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাজিমাত করতে পারে বাংলাদেশ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে