Views Bangladesh Logo

বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন

ত সোমবার (৭ এপ্রিল) শুরু হওয়া চার দিনের ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) শেষ হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইউএইসহ রেকর্ডসংখ্যক ৪০টি দেশের খ্যাতনামা বিনিয়োগকারী এতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী ও নীতিনির্ধারকরাও এতে অংশ নেন। গত বুধবার (৯ এপ্রিল) বিনিয়োগ সম্মেলন-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার বিশ্বকে বদলে দেয়ার দুর্দান্ত সব আইডিয়া রয়েছে। এসব আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই, যেন আপনারা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকে বদলে দেয়ার যাত্রায় যুক্ত হোন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এর মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস চুক্তি’ সই করেছে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর বড় বড় দেশ বিনিয়োগের জন্য চুক্তি করেছে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। হাজার কোটি টাকার বড় বিনিয়োগ পেয়েছে পণ্য বিপণনকারী দেশি উদ্যোক্তা একটি প্রতিষ্ঠান। সরকার আশা করছে, দুই-এক বছরে দেশে ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সম্মেলনে ১০০-১২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা দিয়েছে বিশ্বখ্যাত স্টারলিংক। যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমোদনও পেয়েছে।

এসবই আশার কথা, আনন্দের কথা; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুষ্ঠু-সুন্দর-সুস্থ-সুসংহত না থাকে তাহলে কি বিনিয়োগকারীরা শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখবেন? যদিও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের নতুন দল এনসিপির শীর্ষ নেতারা বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন; কিন্তু আমরা তো জানি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এটা রাজনীতিবিদরাও জানেন। এর মধ্যেই তো নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এক ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াও কতদূর অগ্রসর হবে বলা মুশকিল। নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কতখানি আকৃষ্ট হবে?

বিদেশি বিনিয়োগ তো পরের কথা, নির্বাচনের আগে দেশীয় বিনিয়োগই অনেকাংশে স্থবির হয়ে আছে বলে আমরা জানি। তা ছাড়া বাংলাদেশে ভারী শিল্পে বিনিয়োগের তেমন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা তেমন জানা যায়নি। ভারী শিল্প বিনিয়োগ না হলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেমন পাকাপোক্ত হয় না, তেমন তা গণতন্ত্রের জন্যও শক্ত ভিত্তি স্থাপন করে না। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারী শিল্পের সম্পর্ক গভীর। আজকের ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য মূলত ভারী শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার সক্ষমতায় ও অক্ষমতায়। বর্তমান বিশ্বের অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে ভারী শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার সক্ষমতা কম। আমাদের দেশে ভারী শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত জরুরি। ভারী শিল্পায়ন না ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে না, তেমনি গণতান্ত্রিক পরিবেশও সুসংহত হবে না।

এই বিনিয়োগ সম্মেলন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী যেভাবে বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করলেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা চাই এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। এর জন্য যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার তা যেন সুসংহত থাকে এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদদের তা সৃষ্টি করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ