Views Bangladesh Logo

বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে বৈষম্য, চাকরি ফিরে পাবেন কী সেই অধ্যক্ষ?

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

গুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে বৈষম্যের শিকার হয়ে অধ্যক্ষের চাকরি হারান আব্দুস সাত্তার। নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এমনকি আদালতের আদেশেও তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়নি বলে তার অভিযোগ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার বদলে চাকরি ফিরে পাওয়ার আশা জেগে ওঠে আব্দুস সাত্তারের; কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বয়স। তার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন করেন। সেই আবেদনেও হয়নি সুরাহা। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশেও সাড়া মেলেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের- এমন অভিযোগও আব্দুস সাত্তারের।

নিয়োগের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন আব্দুস সাত্তার। সাড়ে ৩ বছর পর ২০১২ সালের ১৯ আগস্ট তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে তার অভিযোগ। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ তাদের সহযোগীদের কারণে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেননি বলে আব্দুস সাত্তারের দাবি।

গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন সাত্তার। সেই আবেদনে পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে তাকে চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রার্থনা করেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্ত করার পর ২০১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তাকে হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব লিখিতভাবে বুঝে নেন তৎকালীন পুলিশ সুপার (পদাধিকার বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি)। পরে ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ও ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়। তিনি জবাব দিলেও তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে এই বরখাস্তের বিষয়ে তাকে বিধি মোতাবেক অবহিত করা হয়নি বলেও তার অভিযোগ।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে তিনি জানতে পারেন তার চূড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদন হয়নি। তখন এ বিষয়ে আদালতে পরপর তিনটি রিট করেন তিনি। তাকে স্বপদে বহালের জন্য একাধিক নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। এরপরও প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি আব্দুস সাত্তার। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও তাদের সহযোগীরা তাকে প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে দেননি।

সর্বশেষ গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে রিটের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৩ মার্চ একটি রায় পান আব্দুস সাত্তার। সেই রায়ে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তার বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবেচনা করতে বলা হয়।

আব্দুস সাত্তারের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের আদেশ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি বগুড়ার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাকে (সাত্তার) কিছুই বলা হয়নি। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা বা তিনি কোনো বিচার পাবেন কি না এ বিষয়েও কিছুই জানেন না সাত্তার।

আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম; কিন্তু তিনি (সভাপতি) আমাকে কিছুই জানাননি। আদালতের আদেশেরও চার সপ্তাহ শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন মামলা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এক চিঠিতে উচ্চ আদালত আমার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। সেইসঙ্গে আমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উচ্চ আদালতে তা জানাতে বলা হয়েছে সেই আদেশে।’

এ ব্যাপারে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ও বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদাল আল মুসার সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আব্দুস সাত্তারের পর বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে ঘিরে হওয়া মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে কারা হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।

আব্দুস সাত্তারের অভিযোগ, শাহাদত আলম ঝুনু পরিকল্পিতভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ