Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড শেষে আসে অর্থনৈতিক মন্থরতা: আমরা কি প্রস্তুত?

M A  Khaleque

এম এ খালেক

সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রম শক্তির কোনো বিকল্প নেই। শ্রমশক্তি যত দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত হবে, সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ততটাই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যান্ত্রিক শক্তির যতই উন্নয়ন ঘটুক না কেন, যন্ত্রের পেছনের মানুষটি যদি অদক্ষ এবং অপরিপক্ব হয়, তাহলে কোনোভাবেই উন্নয়ন সাধিত হবে না। জনশক্তি যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং দক্ষ হয়, তাহলে তা একটি দেশের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হতে পারে। আবার সেই জনশক্তিই যদি অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ হয়, তাহলে তা জাতির জন্য দায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কোনো দেশের মোট জনশক্তিকে চারটি বিশেষ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যেতে পারে; শিশু, তরুণ, পূর্ণ বয়স্ক এবং বৃদ্ধ। সাধারণভাবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলা যেতে পারে। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের তরুণ এবং ৩৫ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের পূর্ণ বয়স্ক এবং তার বেশি বয়সীদের বৃদ্ধ বলা যেতে পারে। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বলা যেতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ যদি কর্মক্ষম হয়, সেই অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। কোনো জাতির জীবনে একবারই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারও কারও মতে, হাজার বছরে একবার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়। যে জাতি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়, সে জাতিই বিশ্ব দরবারে অর্থনৈতিক শক্তিতে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হতে পারে; কিন্তু কোনো জাতি যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল কার্যকর এবং পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই জাতি আর কখনোই উন্নতির শিখরে আরোহন করতে পারে না। বিশ্বে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগাতে ব্যর্থ হবার কারণে জাতিটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নতির শিখরে অবতীর্ণ হতে পারেনি। একটি জাতির জীবনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা বারবার আসে না।

বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, বাংলাদেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে চলতি শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকে। এটা চলবে ২০২৩-২০৩৫ সাল পর্যন্ত। তারপর আর ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ পাওয়া যাবে না। সরকারের নানা পর্যায় থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা গল্প বলা হয়; কিন্তু এই উন্নয়ন কীভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে তেমন কিছুই বলা হয় না। বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। এই অবস্থায় একটি দেশের উন্নয়ন হবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে, এটি নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে তেমন কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না; কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা চিরদিন থাকবে না।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাংকে রেটিংয়ে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বলা হচ্ছে। ২০৪১ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭০ বছর পর বাংলাদেশ কার্যকর উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে অঙ্গীকার করা হয়েছে; কিন্তু এই অর্জন খুব একটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে অর্থনৈতিক সূচকগুলো যেভাবে বিকশিত করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্তত ডাবল ডিজিটে উন্নীত করতে হবে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির অন্তত ৪০ শতাংশ উন্নীত করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে চলছে, তা যদি আরও গতিময় করা না যায়, তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবার আকাঙ্ক্ষা ‘দিবা স্বপ্নে’ পরিণত হতে পারে।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ কাজে লাগানোর পরও একটি দেশের অর্থনীতি কীভাবে মন্থর হয়ে পড়তে পারে, তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম পরাশক্তি জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সূত্রপাত ঘটে। সেই অবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে জাপান অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কয়েক দশক আগে জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জাপানে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রায় তিন দশক আগে চীনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সূত্রপাত ঘটে। এই অবস্থায় চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে জাপানকে অতিক্রম করতে শুরু করে। কয়েক বছর আগে চীন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ফলে জাপান বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪৪ বছরের অবস্থান হারিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে আসে। সেই চীনেও এখন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ২০২৬ সালের মধ্যে চীনের উন্নত দেশে পরিণত হবার স্বপ্ন হয়তো সফল নাও হতে পারে। ইতোমধ্যে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেতে শুরু করেছে। যে চীন কয়েক বছর আগেও ১০ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জন করছিল তাদের প্রবৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে নেমে আসেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীনের প্রবৃদ্ধি ৩ থেকে ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ বা তারও বেশির বয়স যদি ৬৫ বছর অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাকে বার্ধক্য পর্যায়ের সূচনাবিন্দু বলা হয়। ১৯৯৮ সালেই চীনের ৬৫ বছর বয়সী জনসংখ্যার হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। ২০২৩ সালে চীনের মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ৪ শতাংশই ছিল ৬৫ বছরের বেশি বয়সী। অভিজ্ঞতা থেকে প্রত্যক্ষ করা গেছে, কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে সেই দেশটির পক্ষে ৪ শতাংশের অধিক হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ সময় উচ্চ আয়ের দেশের গড় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ। সাধারণভাবে একজন মানুষ ৬৫ বছর বয়স অতিক্রম করলে তার কর্মশক্তি এবং কর্মস্পৃহা কমতে শুরু করে। জনসংখ্যাগত সমস্যা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্তরের তুলনায় স্পেনের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ৭৩ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশে নেমে আসে। একই সময়ে গ্রিসের জনগণের মাথাপিছু ৬৬ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশে এবং পর্তুগালের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ৫১ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে নেমে আসে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্তরের তুলনায় ১৯৯৫ সালে জাপানের জনগণের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ছিল ১৫৪ শতাংশ এবং জার্মানির ক্ষেত্রে এটা ছিল ১১০ শতাংশ। ২০২৩ সালে জাপানের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ৪১ শতাংশে এবং জার্মানির ক্ষেত্রে তা ৬৪ শতাংশ নেমে আসে। বিগত ১২ বছর ধরে জাপানের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। জার্মানির ক্ষেত্রে এটা ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে নকশা অঙ্কন করে রেখেছে তা বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব হবে? বাংলাদেশ যদি ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারে তাহলে সেটি হবে একটি রেকর্ড। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সে হিসেবে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের সময় লাগবে ১৬ বছর। চীনের মতো দেশও কিন্তু এত অল্প সময়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারেনি।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রাপ্ত সুবিধাদি হারাতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সালের পর বাংলাদেশকে আর জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা দেবে না। জিএসপি সুবিধা হারালে বাংলাদেশি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানি করতে হলে অন্তত ১২ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে। ১৯৭৬ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিয়ে আসছে। মূলত জিএসপি সুবিধার কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি গন্তব্যের ভিন্নমুখিতা আনায়নের জন্য; কিন্তু সেই পরামর্শ কোনো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। সামান্যসংখ্যক পণ্য ও সীমিত গন্তব্য আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাজুড়ে রয়েছে তৈরি পোশাক সামগ্রী; কিন্তু তৈরি পোশাক সামগ্রী আমদানিকৃত কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্যনির্ভর বলে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। এই খাতের জন্য কোনো উপকরণ আমদানি করতে হয় না। বরং এই খাতে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু আমরা জনশক্তি রপ্তানি খাত নিয়ে কতই না উদাসীন। বাংলাদেশ থেকে যে জনশক্তি রপ্তানি করা হয় তার অধিকাংশই অদক্ষ অথবা আধাদক্ষ শ্রমিক। অথচ পেশাজীবীদের বিদেশে প্রেরণ করা গেলে এই খাতের আয় ৪ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মোতাবেক, গত বছর (২০২৩) বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আয় করেছে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে সপ্তম। অথচ গত বছর বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ১৩ লাখ নতুন জনশক্তি কর্মসংস্থান উপলক্ষে বিদেশে গেছেন। অভ্যন্তরীণ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে রাখার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাওয়ার প্রত্যাশায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে জনশক্তি রপ্তানি করা হয় তার বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি মুসলিম দেশে যায়। এসব দেশে শ্রমিকের মজুরির হার তুলনামূলকভাবে কম। জনশক্তি রপ্তানির নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাহীন ব্যর্থতা রয়েছে। ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে প্রশিক্ষিত জনশক্তি বর্ধিত হারে প্রেরণ করা গেলে এই খাতের আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারত।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে প্রত্যাশার স্বপ্নে বিভোর; কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারা শ্রম দেবে? বিদেশি উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগযোগ্য উদ্বৃত্ত পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। তারা কিন্তু শ্রমিক নিয়ে আসবেন না। তাহলে এসব কারখানায় কারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করবেন? আমরা কথায় কথায় বলে থাকি, বাংলাদেশে সস্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রমিকের নিশ্চিত জোগান রয়েছে; কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখি আমাদের দেশের শ্রমিকদের মজুরি কম কেন? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে যেসব শ্রমিকের জোগান পাওয়া যায়, তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ এবং অপ্রশিক্ষিত। অদক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি তো কম হবেই। বিদেশি উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সম্ভাবনাকে পুরো মাত্রায় কাজে লাগানোর জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আমদানি করবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক আগে থেকেই বিদেশি শ্রমিক আনার সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছে। আগে নিয়ম ছিল কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বিদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করে তাহলে সেই শ্রমিক যে মজুরি পাবেন তার ৭৫ শতাংশ সরাসরি দেশে প্রেরণ করতে পারতেন। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ মজুরি থেকে স্থানীয় বিভিন্ন কর পরিশোধ, খাওয়া খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের পর যে অর্থ উদ্বৃত্ত থাকবে তা স্থানীয় কোনো ব্যাংকে আমানত হিসেবে সংরক্ষণ করতে হতো। তারা যখন চূড়ান্তভাবে দেশে ফিরে যেতেন তখন ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ নিয়ে যেতেন। এই আইন সম্প্রতি সংশোধন করা হয়েছে। এখন একজন বিদেশে শ্রমিক তার উপার্জিত মজুরির ৮০ শতাংশ সরাসরি দেশে প্রেরণ করতে পারবেন। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ মজুরির দিয়ে স্থানীয় ট্যাক্স ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের পর হাতে থাকবে তাও দেশে প্রেরণ করতে পারবেন। এই উদারতার অর্থ কী? বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০৪১ সালে মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতিতে আবির্ভূত হওয়া কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে। তবু আমরা প্রত্যাশায় রইলাম উন্নত বাংলাদেশ দেখার জন্য।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ