চিকিৎসকদের নিবন্ধন নবায়ন নিশ্চিত করুন
চিকিৎসা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি সেবা। চিকিৎসার সঙ্গে কেউ ব্যবসা শব্দটি যুক্ত করেন না, সবাই যুক্ত করেন সেবা; কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় অনেকেই চিকিৎসাকে ব্যবসা হিসেবেই গ্রহণ করেছেন এবং নিজের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য দুর্নীতি, অনিয়ম করতেও দ্বিধা বোধ করেননি। চিকিৎসার নামে অনেকে জালিয়াতি করেছেন আমরা জানি। চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসা দিয়েছেন এবং ভুল চিকিৎসায় অনেক মানুষ মারা গেছেন এমন নজির আমাদের দেশে আছে।
আইনানুযায়ী তাদের বিচারের আওতায়ও আনা যায়নি, কারণ ওসব চিকিৎসককে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এ জন্য চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও নির্দিষ্ট মেয়াদের পর পর নিবন্ধন নবায়ন জরুরি। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০, অনুযায়ী, বিএমডিসির নিবন্ধন সনদ ছাড়া দেশে কেউ চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না; কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক নিবন্ধন নবায়ন করেন না। ফলে ভুয়া চিকিৎসক শনাক্তকরণও কঠিন হয়ে যায়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৩৬ হাজার চিকিৎসক নিবন্ধন নবায়ন ছাড়াই পেশা চর্চা করছেন। কত মানুষ ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন, তার সঠিক তথ্য নেই বিএমডিসির কাছে। আবার কোনো নিবন্ধন ছাড়াই কত মানুষ চিকিৎসক পরিচয়ে কাজ করছেন, তাও তারা জানে না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) চিকিৎসা পেশার নিয়ন্ত্রক। এ প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসকদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি বা নিবন্ধন দিয়ে থাকে। চিকিৎসা পেশার নিয়ন্ত্রক এ প্রতিষ্ঠানটিই স্বীকার করছে, দেশে নিবন্ধনহীন ক্লিনিক হাসপাতালের পাশাপাশি অসংখ্য ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন। যাদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া দুরূহ কাজ। তবে বিএমডিসি বলছে, যে কেউ ইচ্ছা করলে ইন্টারনেটে তাদের সাইটে ঢুকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সত্যিকারের যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন।
কিন্তু বাংলাদেশের কজন মানুষ আর চিকিৎসকদের যোগ্যতা যাচাই করে দেখেন? হাতের কাছে ডাক্তার পেলেই তারা জীবন বাঁচাতে ছুটে যান; কিন্তু মানুষের এই জীবন নিয়ে ভুয়া ডাক্তাররা ছিনিমিনি খেলেন। এটা দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তারা কোনোভাবেই এই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা চাই চিকিসৎকদের নিবন্ধন ও নিববন্ধন নবায়নের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও তৎপর হবে।
জানা গেছে, নানা ব্যস্ততা ও আলস্যের কারণে চিকিৎসকদের অনেকেই সময়মতো নিবন্ধন নবায়ন করেন না। যেহেতু বিএমডিসির পক্ষ থেকেও তেমন তাগিদ বা কড়াকড়ি থাকে না ফলে চিকিৎসকরা তেমন জরুরি মনে করেন না; কিন্তু নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটির এমন গা-ছাড়া ভাবের কারণে সুযোগ পেয়ে যায় সুযোগসন্ধানীরা। ভুয়া ডাক্তারের মতো প্রতারকরা এ ফাঁককে সুযোগমতো কাজে লাগায়।
চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেওয়া ছাড়াও চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়াও বিএমডিসির দায়িত্ব। একাধিক সাংবাদিক সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে বলেন, কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান খারাপ। প্রতি বছর ছলচাতুরী করে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। এমবিবিএসে ভর্তির অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকদের সংগঠন।
বিএমডিসির কর্মকর্তারা বলেন, দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসক ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৮ জন, দন্ত চিকিৎসক ১৪ হাজার ৩২৩ জন এবং চিকিৎসা সহকারী ২৯ হাজার ১৮ জন। চিকিৎসকদের মধ্যে ৩৬ হাজার চিকিৎসকের নিবন্ধন নবায়ন করা নেই। তাদের বড় অংশই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক। এই অনিয়ম দূর করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি। আমরা চাই সরকার এ ব্যাপারে আরও সচেতন হবে। প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসাক্ষেত্রের এই নৈরাজ্য দূর করবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে