নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করুন
সন্তান গর্ভে ধারণ করার পর গর্ভকালীন জটিলতা ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে একজন মা যেন মৃত্যুঝুঁকি থেকে রক্ষা পান তার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে নিরাপদ মাতৃত্ব-সংক্রান্ত চিকিৎসা ও পরিবেশ। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশ নিরাপদ মাতৃত্ব সেবায় অবশ্যই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে বিশ্বব্যাপী নজির সৃষ্টি করেছে।
নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও এর প্রশংসা করেছেন; কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, তারপরও দেখা যাচ্ছে অসচেতনতা ও অসাবধানতার কারণে এখনো অনেক প্রসূতির করুণ মৃত্যু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নেত্রকোনা সদর উপজেলার এক প্রসূতি ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রসব ব্যথা উঠলে ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীকে সন্তান প্রসবের জন্য সদর উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, পথে ওই প্রসূতি পরিবারের দেখা হয় আয়া রওশন আক্তারের সঙ্গে।
রওশন তাদের বোঝান, হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বাইরে সিজার করতে পাঠিয়ে দেবেন। স্বাভাবিক প্রসবের আশ্বাস দিয়ে প্রভাবিত করে আয়া রওশন আক্তার প্রসূতিকে নিজের ভাড়াবাসায় নিয়ে যান এবং নির্ধারিত সময়ের আগে কৃত্রিম উপায়ে ওষুদের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করান। এতে প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এ অবস্থা থেকে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায়। এক. এখনো অনেক প্রসূতি পরিবার কতটা অসচেতন। দুই. এখনো কত অদক্ষ আয়া এ পেশায় নিয়োজিত। তিন. সিজারের নামে ভয় দেখিয়ে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে প্রভাবিত করা যায়। শেষ পয়েন্ট থেকেই আগে আলোচনা করা যাক। প্রসবকালে অপ্রয়োজনীয় সিজার বাংলাদেশে একটি জালিয়াতি ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি অপ্রয়োজনীয় সিজার হয়। অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধের জন্য হাইকোর্টকেও নীতিমালা জারি করতে হয়েছে।
সিজার এড়াতে তাই অনেক প্রসূতি পরিবার এখনো হাসপাতালের চেয়ে আয়ার ওপর ভরসা করেন। দ্বিতীয় পয়েন্টটি হচ্ছে, এই আধুনিক চিকিৎসার জগতে আয়ার হাতে সন্তান জন্মদানের কথা কোনো অসচেতন পরিবার ভাবতে পারেন? আর এসব আয়ারাই-বা এখনো কীভাবে এমন জটিল একটি পেশায় কাজ চালিয়ে যান? তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি-ব্যবস্থা নেয়া হয় না? এবার প্রথম পয়েন্টটির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক: অনেক প্রচার-প্রচারণার পরও বাংলাদেশের অসংখ্য পরিবার এখনো প্রসবকালীন সেবার ব্যাপারে অসচেতন রয়ে গেছে। এর কারণ স্পষ্টভাবেই শিক্ষার অভাব।
প্রতি বছর ২৮ মে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করা হয়। তখনই গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে কিছু সচেতন প্রতিবেদন চোখে পড়ে; কিন্তু নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য আরও সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন ও প্রতিবেদন প্রচার করা দরকার। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। আমরা চাই না, ভুলবশত আর একজন প্রসূতিরও এমন দুঃখজনক মৃত্যু হোক। পাশাপাশি অভিযুক্ত আয়াকেও দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের অপরাধ বাড়তেই থাকবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে