সচিবালয়ে আগুন: যেসব প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে...
গত বছরের ১৪ মার্চ সকাল। হঠাৎ সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে যায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থাকা এক নম্বর ভবন।
টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা ফোর হুইলার নিয়ে উদ্ধার অভিযানে নেমেছেন। উপরে ড্রোন উড়ছে। প্রাণ রক্ষায় ভবনের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ছেন মানুষ। আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ভবনের ছাদে আটকা পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দড়ি বেয়ে নামিয়ে আনছেন ফায়ার ফাইটাররা। একটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়। রশির সাহায্যে ইমার্জেন্সি মেথড রেসকিউ পদ্ধতিতেও নামিয়ে আনা হয় আটকেপড়াদের। জাম্বো কুশনে লাফিয়ে পড়েও অনেকে ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন।
সিনেমার মতো এই দৃশ্যটি সত্যিকারের দুর্ঘটনা ছিল না। এটি ছিল আগুনের মহড়া। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় আগুন লাগলে কীভাবে জানমাল রক্ষা করা যাবে, তা সংশ্লিষ্টদের হাতে-কলমে শেখানোই ছিল এই মহড়ার উদ্দেশ্য। সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এই মহড়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে যে ভয়াবহ আগুন লাগলো—সেটি কোনো মহড়া ছিল না। সেটি ছিল সত্যিকারের আগুন এবং সচিবালয়ের ইতিহাসে এরকম বড় আগুন এর আগে লাগেনি। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় নয়ন নামে একজন ফায়ার ফাইটার নিহত হয়েছেন।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আগুনে মূলত ছয়, সাত ও আটতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগুন নেভাতে কেন ১০ ঘণ্টা?
একটি ভবনে লাগা আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা সময় কেন লাগলো—এই প্রশ্ন জনমনে আছে। শুধু এই ঘটনাটিই নয়, বরং প্রতিটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পরেই ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে যেভাবে আগুন নেভানো এবং আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ করেন, সেটি শুধু দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে নয়, বরং মানবিক দিক দিয়েও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু এই মানুষগুলো যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে মানুষের জানমাল বাঁচাবেন, তার যত ঘাটতি থাকবে, তাদের নিজেদের জীবন তত বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। বলাই হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাই সবার আগে ছুটে যান। সেটি হোক আগুন, সড়ক দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প বা অন্য কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক। কিন্তু তাদের গাড়ি ও অন্যান্য ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্টে তারা কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক?
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশি সময় লেগেছে কারণ সচিবালয় একটি কনফাইন্ড এরিয়া, রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। সব রুম তালাবদ্ধ ছিল, জানালা লাগানো ছিল। কাচ ভেঙে ভেঙে পানি দিতে হয়েছে যাতে আগুন ছড়িয়ে না যায়। পাশাপাশি রুমগুলো যত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত বছরের মার্চে যখন সচিবালয়ে আগুনের মহড়া হলো তখন তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, ফায়ার সার্ভিসের জন্য অনেক আধুনিক যন্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আধুনিক সরঞ্জাম নিয়ে মহড়াটি চমৎকারভাবে করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সবাইকে অবহিত করা এবং একই সঙ্গে একটা বার্তা দেয়া যে, এ রকম ঘটনা ঘটলে আমাদের আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।
সচিবালয় কতটা আধুনিক?
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, অর্থাৎ দেশে করোনা মহামারি শুরুর মাসখানেক আগে যেদিন সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনে ‘অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার মহড়া’ হয়েছিল, সেদিন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা দপ্তরের সহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সচিবালয়ে কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে। কারণ, সচিবালয়ের প্রবেশ গেটগুলো খুবই ছোট, এসব গেট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। ফলে যেসব গাড়ি নিয়ে আসা হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। মহড়া পরিচালনার জন্য যেসব বড় গাড়ি আনা হয়েছিল, সেগুলো সচিবালয়ের বাইরেই রাখতে হয়েছে। সচিবালয়ের ভেতরে যেখানে চারশ গাড়ি পার্কিং রাখার জায়গা রয়েছে, সেখানে ১২শ গাড়ি পার্ক করা হয়। তাই যদি পিক আওয়ারে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি সঠিকভাবে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সমকাল, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০)।
বিভিন্ন সময় সচিবালয়ে ঢোকার ফটক সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তাছাড়া অনেকে মনে করছেন, এবারের আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে। এটি যখন করা হয়, তখন নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাঠ দিয়েই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি রুম ছিল বন্ধ। তালা ভেঙে, জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।
রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান, যেখানে অনেকগুলো ভবন, সেখানে নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থাটি কেমন? অর্থাৎ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত এখানে দায়িত্বরত মানুষেরা আগুন নেভাবে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কতটা সক্ষমত? মহড়া দিয়ে আগুন নেভানো বা নিয়ন্ত্রণের যেসব কৌশল শেখানো হয়, সেগুলো কারা শেখেন এবং সেই শিক্ষাটা তারা আদৌ কাজে লাগাতে পারেন কি না? বুধবার রাতে যে ভবনে আগুন লাগলো, সেখানে তখন কতজন লোক ডিউটিতে ছিলেন এবং তারা কি কখনো আগুন নেভানোর ওই মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। তারাই কি ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে আগুনের খবর দিয়েছেন? তারা নিজেরা কি আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন বা সেই সক্ষমতা, প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি কি তাদের আছে? প্রশ্নটি শুধু সচিবালয়ের ক্ষেত্রে নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি-আধাসরকারি-করপোরেট এমনকি আবাসিক ভবনেও যে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা কি আছে?
দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা?
আগুন কীভাবে লাগলো বা এটি পরিকল্পিত বা নাশকতা কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কিন্তু যে ভবনে আগুন লেগেছে এবং যে সময়ে লেগেছে—তাতে এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলার সুযোগ নেই। একইরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন, তদন্তের পর আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। এই ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে—যাদের সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই আগুনের পেছনে কারও ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না, তা উদঘাটনের পাশাপাশি এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্বের চেয়ে বলা ভালো ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে পারে। কেননা আগুন এমন সময়ে এমন ভবনে লাগলো, যখন বিগত সরকারের অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আছে। সেসব প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে থাকা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রও এই আগুনের পেছনে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। সচিবালয়ে এই ভয়াবহ আগুন এমন এক সময়ে লাগলো বা লাগানো হলো যখন প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা একাট্টা হয়েছেন। তারা পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের এতদিনকার একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে কশিনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। কমিশন প্রধানের অপসারণ এমনকি এই কমিশন বিলুপ্ত করারও দাবি জানিয়েছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অংশ হিসেবে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেই কমিশন বিলুপ্ত করার দাবি জানানোর ঔদ্ধত্য তারা কীভাবে দেখালেন, সেটি বিস্ময়ের। জনপ্রশাসনের প্রশাসন ক্যাডারের লোকজনের যে আধিপত্য, মাস্তানি এবং একচ্ছত্র ক্ষমতার বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, এই ধরনের আবদার ও দাবির মধ্য দিয়ে সেটি স্পষ্টত ফুটে ওঠে। সুতরাং সরকারকে বিব্রত করা তথা সরকারের সংস্কার কাজকে ব্যাহত করতে জনপ্রশাসনের কোনো অংশের চক্রান্ত আছে কি না—সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার।
আগুন দিয়েছে কে?
সচিবালয়ে চাইলেই যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। অফিস সময়েও এখানে ঢুকতে হলে নির্ধারিত অনুমতিপত্র বা পাস দেখাতে হয়। সুতরাং বাইরে থেকে কেউ যদি ওখানে আগুন দেন তাহলে তিনি বা তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে ঢুকলেন কীভাবে? উঁচু দেয়াল টপকে ঢোকাও সম্ভব নয়। তাহলে কি সচিবালয়ের ভেতরে ছিলেন এমন কেউ আগুন দিয়েছেন? নাকি এটি নিছকই দুর্ঘটনা? যদি হয় তাহলে সেটি কি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট? কেননা, ওই মধ্য রাতে ওখানে কোনো রান্না হওয়ার কথা নয় যে চুলার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এটিকে নিছকই একটা দুর্ঘটনা বলার সুযোগ কম।
এই আগুনের ঘটনাটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকদের অনেকেই। যেমন ভবনের দুই প্রান্তের দুই মাথায় দুটি রুমে আগুন লাগলো কীভাবে? আগুন নিভাতে গিয়ে একজন ফায়ার ফাইটার কীভাবে ট্রাকের নিচে চাপা পড়লেন? নাকি তাকে হত্যা করা হলো?
তদন্তে কী হবে?
দেশে যখনই কোনো বড় দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটিত হয় তখন সাথে সাথেই এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। কোনো কোনো কমিটিকে বলা হয় ‘উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি’। কিন্তু এসব কমিটিতে কারা থাকেন, তারা কোন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে তদন্ত করেছেন, তদন্ত করতে গিয়ে তারা কতটা নির্মোহ, সৎ ও পেশাদার থেকেছেন, তারা কতটা প্রভাবমুক্ত থেকেছেন বা থাকতে পেরেছেন—তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। আবার অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরাই যদি তদন্ত করেন কিংবা তারা যদি পেশাগত, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে ঘটনা আড়াল করতে চান—তাহলেও কোনো তদন্ত কমিটির পক্ষেই রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব নয়।
সচিবালয়ে যেদিন আগুন লাগলো তার ঠিক আগের দিনই গণমাধ্যমের খবর, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় ১১৪ বারের মতো পেছানো হয়েছে! একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কত বছর লাগে? অন্য কোনো গ্রহ থেকে কেউ এসে সাগর-রুনিকে হত্যা করে চলে গেছে? তার মানে, এই ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যারা জড়িত, হয় তারা অযোগ্য না হয় তাদের সঠিকভাবে তদন্ত করতে দেয়া হয়নি। অতএব, সচিবালয়ের এই আগুনের ঘটনাটি যদি সত্যিই পরিকল্পিত তথা নাশকতা হয় এবং যদি কোনো প্রভাবশালী পক্ষ এটি আড়াল করতে চায় তাহলে মানুষ কোনোদিনই জানবে না কারা আগুন দিয়েছে বা কীভাবে দিয়েছে? বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ বয়ান গণমাধ্যমে আসবে।
পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুন, এরপর চকবাজারের চুড়িহাট্টা ও মগবাজারের বিস্ফোরণে প্রাণহানির কথাও নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। ওইসব ঘটনায়ও একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। প্রতিটি কমিটি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বেশ কিছু সুপারিশ করে। কিন্তু তার কতগুলো সুপারিশ বাস্তবায়িত হয় তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক সময় তদন্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হলেও গণমাধ্যমকে জানানো হয় না। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ এখন একটি দুর্ঘটনা বা নাশকতার পরে আরেকটি দুর্ঘটনা নাশকতা দেখার জন্য ‘অপেক্ষা’ করে আছে।
অথচ ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গোডাউনে লাগা আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে এর ৯ বছরের মাথায় ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনে প্রায় ৮০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি হতো না। নিমতলীর আগুনের ঘটনায় তদন্ত রিপোর্টে আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে এরকম আরেকটি ট্র্যাজেডি দেখতে হতো না।
আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে