Views Bangladesh Logo

উৎপাদন বাড়াতে হলে কৃষিব্যবস্থা আরও উন্নত করা জরুরি

Dr. F.H.  Ansarey

ড. এফ এইচ আনসারিএর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার

. এফ এইচ আনসারী স্বনামধন্য কৃষি উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব। তিনি দেশে-বিদেশে কৃষি উন্নয়ন, গবেষণা, বিক্রয়, বিপণন ও বহুজাতিকীকরণে নিরলস কাজ করছেন। তাছাড়া তিনি কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। এগ্রি বিজনেসের নেতৃস্থানীয় এই ব্যক্তিত্ব ৩৬ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বীজ, সার, ক্রপ কেয়ার, ফার্ম মেকানাইজেশন, এনিমেল হেলথ এবং সমন্বিত পোলট্রিসহ এগ্রি বিজনেসের বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন। গত ২৩ বছর ধরে এসিআই গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করছেন ড. এফ এইচ আনসারী। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা ও কৃষি আধুনিকায়ন প্রেক্ষাপট নিয়ে ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর মুখোমুখি হয়েছেন। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।


তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক এম এ খালেক ও ভিউজ বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক গিরীশ গৈরিক

ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ; কিন্তু তারপরও আমরা দেখি প্রয়োজনীয় কৃষিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবে বাংলাদেশের কৃষকদের অবস্থা অন্যান্য দেশের মতো উন্নত হচ্ছে না। এর কারণ কী?

এফ এইচ আনসারী: মূলত কৃষিপ্রধান দেশ, আপনি ঠিকই বলেছেন, এ দেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। হয় সরাসরি কৃষি কাজ করে বা কৃষি ব্যবসা করে। অথবা কৃষি স্টক করে। এটা ঠিক যে, গত ৫০ বছরে আমাদের কৃষিতে ততটা উন্নত হচ্ছে না। কিছুটা উন্নত হয়েছে। একেবারেই যে হয়নি তা বলা যাবে না; কিন্তু যে গতিতে এগোনো দরকার, বাংলাদেশের যতটা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী এগোচ্ছে না। অর্থাৎ আমরা যা উৎপাদন করি তার পুরোটাই ভোগ করি। তাই বাইরে থেকে প্রচুর আমদানি করতে হয়। আমাদের যদি আমদানি কমাতে হয় তাহলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হলে কৃষিব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি। কৃষি উন্নত করতে হলে কৃষিজ্ঞান ও প্রযুক্তিও বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে দুই ধরনের কৃষি সংস্থা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি। সরকারি সংস্থাগুলোতে গবেষণা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে এই গবেষণার ফলাফলগুলো অনেকক্ষেত্রেই মাঠে যায় না। আমরা যারা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করি, আমাদের কিছু নিজস্ব রিসার্স আছে। বাইরে থেকে অনেক রিসার্স করা মেটেরিয়াল আমরা দেশে আনি। প্রাইভেট সেক্টরের এক লাখের বেশি কৃষিকর্মী আছেন, যারা মাঠে কাজ করেন। এই কাজের ফলে সরকারি-বেসরকারিভাবে যেসব গবেষণা হচ্ছে তা মাঠে যাচ্ছে। তবে এতে আরও গতি বাড়ানো দরকার। আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি দরকার। খামারিদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে মৎস্য চাষিদের সঙ্গে। যারা ডিম উৎপাদন করছে তাদের সঙ্গে। যারা মাংস উৎপাদন করে তাদের সঙ্গে। ডেইরি ফার্মের মালিকদের সঙ্গে এবং মাঠ ফসলে যারা কাজ করছে তাদের সঙ্গে। কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে যদি আমরা যোগাযোগ বাড়াতে পারি, আমাদের গবেষণা ভাগাভাগি করতে পারি তাহলে নিশ্চিতভাবেই কৃষিতে উন্নতি আসবে। তাতে আমাদের উৎপাদন পারবে। তাহলে আমরা খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যেতে পারব।

ভিউজ বাংলাদেশ: কৃষির জন্য ভূমি অনিবার্য; কিন্তু বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে আবাসন, কলকারখানাসহ নানা অবকাঠামো বাড়ছে। এতে ভূমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। আমরা যদি মৎস্য চাষ করতে চাই তাহলে ধান উৎপাদন বা গম উৎপাদন কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্রের করণীয় কী?

এফ এইচ আনসারী: আমাদের ভূমির ৭০ ভাগ মাঠ ফসলে ব্যয় হয়, বিশেষ করে ধান উৎপাদনে। আমাদের ভূমিতে কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় উৎপাদন কম হয়। আমরা যদি ভিয়েতনামের দিকেও দেখি, তাদের তুলনায়ও আমাদের ফসল উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। আমরা যদি উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে পারি তাহলে সবকিছুর একটা সামঞ্জস্য সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমরা যদি মাছ-মুরগি, দুধ-ডিম আরও বেশি করে উৎপাদন করতে পারি তাহলে এই ভূমির সঠিক ব্যবহার সম্ভব।

ভিউজ বাংলাদেশ: সরকার প্রায়ই বলে থাকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই কথাটা কতখানি সঠিক?

এফ এইচ আনসারী: খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার সংজ্ঞা আলাদা বিষয়। হয় আপনি কিনে সংস্থান করবেন, না-হয় উৎপাদন করবেন। সিঙ্গাপুর কিন্তু মোটামুটিভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কারণ তারা প্রয়োজনে কিনতে পারে, আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি তাদের ফুট ভ্যেলু চেইন পুরোপুারি স্টাবলিশ। তারা কিন্তু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা ভিন্ন। আমরা অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন করি, প্রয়োজনে আমদানি করি। ওভারঅল আমাদের দেশের মানুষ খাবার কিনে খেতে পারে। অথবা উৎপাদন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো ঠিক আছে।

কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে আমাদের, আমরা যদি খাবার কিনতে গিয়ে সঞ্চয় শেষ করে ফেলি তাহলে এ দেশের অনেক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সেটা সম্ভব না। এ কারণে কী করতে হবে? উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে হবে। সেখানে আমাদের কমপ্লিট ফুড ভ্যালু চেইনটাকে স্টাবলিশ করতে হবে। একেবারে ব্রিডিং থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত যা কিছু করার সব করতে হবে। যেসব ইনোভেশন আসবে, সে ইনোভেশনগুলো খামারিদের মাঠে প্রাকটিস করাতে হবে। যেসব ইমপুট লাগবে সেসব ইমপুট দিতে হবে। যেসব টেকনোলজি লাগবে সেগুলো দিতে হবে। ম্যাকানিজম বাড়াতে হবে, তাহলে হবে কি, আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম কৃষিতে আগ্রহী হবে। অ্যাট দ্য সেম টাইম প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে, কস্ট কমে যাবে এবং কস্ট অব প্রোডাকশন কমে যাবে।

তারপর তো হারভেস্ট করতে হবে। হারভেস্টের পর পোস্ট হারভেস্টে আমাদের অনেক মনোনিবেশ করতে হবে। পোস্ট হারভেস্টে এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো ক্যাপাসিটি নাই। আমরা স্টোরেজ করতে পারি না। তারপর আমাদের প্রসেস করতে হবে। প্রসেস করার সুবিধা হলো এই যে, খাদ্যটা আমরা উৎপাদন করছি তার ওয়েস্টেজ যেন কমে যায়। ওয়েস্টেজ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে লংজিবিটিও বাড়াতে হবে। আপনি যদি খাবারগুলো ড্রাই করে, প্রসেস করে রাখতে পারেন তাহলে খাবারটা অনেকদিন রাখতে পারবেন। তাতে ওয়েস্টেজ কমল, সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু খাবারটা অনেক বেশিদিন স্টোরেজ করা যায়।

এরপর ফরোয়াড-লিংকেজ লাগবে। আমাদের দেশে রিটেল-চেইন আছে; কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। টোটাল যে রিটেল, আউটলেট তার মাত্র টু পার্সেন্ট। নেক্সট ফাইভ ইয়ার্সের মধ্যে এটাকে অ্যাট লিস্ট দশ পার্সেন্টে নিতে হবে। তাহলে দেখা গেল খাদ্যের যে ভ্যালু চেইন, আহরণ থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত নিতে আর কোনো বাধা থাকল না। তখন খাদ্য সারা বছর অ্যাভেলেবল হবে। স্থিরমূল্যে খাবার পাওয়া যাবে। হঠাৎ করে খাবার সংকট হবে না, দাম বাড়বে না। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন তখন কঠিন হবে না।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনি খাদ্য অপচয়ের কথা বললেন। জাতিসংঘের এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রতি বছর ৫৩ কেজি খাদ্য অপচয় হয়। এই খাদ্য যদি তারা অপচয় না করতো তাতে দুই মাসের বেশি খাদ্য তারা বাঁচাতে পারতো। এই অপচয় আমরা কীভাবে রোধ করতে পারি?

এফ এইচ আনসারী: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। আসলে বাংলাদেশে যেটা হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে সরকার শুধু বলেছে উৎপাদন বাড়াও, উৎপাদন বাড়াও। প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে; কিন্তু খাদ্য শুধু উৎপাদন বাড়ালে হবে না, খাদ্য সংরক্ষণেও মনোযোগী হতে হবে। পোস্ট হারভেস্টের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। গত পঞ্চাশ বছরে কিন্তু পোস্ট হারভেস্টের দিকে বেশি একটা মনোযোগ দেয়া হয়নি। আমরা সারে, ডিজেলে, বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়েছি; কিন্তু এই পোস্ট হারভেস্টে বেশি একটা সাপোর্ট দেয়া হয়নি। পোস্ট হারভেস্টে যদি ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয় তাহলে কী হবে? আমরা যে উৎপাদন করছি তার ওয়েস্টেজটা কমে যাবে। একটু আগে আমি যেটা বললাম, খাদ্যটা যদি সঠিক উপায়ে প্রসেস করতে পারি তাহলে কিন্তু খাদ্যটা পচে যাবে না, নষ্ট হবে না বা মেয়াদ শেষ হবে না। ফলে আমাদের খাদ্য অনেকটা বেঁচে যাবে। তাহলে হয়তো দুমাসের খাবার আমাদের বাইরে থেকে আনতে হবে না। এটা রেখে আমরা মোটামুটিভাবে চালাতে পারব।

ভিউজ বাংলাদেশ: কৃষিতে বীজ সংগ্রহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে আমাদের মা-চাচিরা কাচের বোতলে বীজ সংগ্রহ করতেন। এখন এই প্রবণতা অনেক কমে গেছে; কিন্তু এখন বীজ ক্রয় করতে হয়। অনেক সময় দেশের বাইরে থেকেও আনতে হয়। এই বীজ সংরক্ষণের প্রবণতা কমে যাচ্ছে, এতে আমাদের কৃষি উৎপাদন কীরকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

এফ এইচ আনসারী: প্রথমে একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ভালো বীজে ভালো ফলন হয়। ভালো বীজ মানে জেনেটিক্যালি মডিফাইড বীজ শুধু না, সেটা হাইব্রিড বীজ হতে পারে, ইনব্রিড বীজ হতে পারে। আবার ইনব্রিড বীজের মধ্যেও, সেটা যদি প্রপারলি প্রসেস করে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে কিন্তু উৎপাদনশীলতা বাড়তে পারে। আগে যে একটা প্রথা বা পদ্ধতি ছিল তখন কিন্তু এত বেশি বীজ অ্যাভেলেবেল ছিল না। আন্তর্জাতিকভাবে বীজ কেনা যেত না। এখন আমরা আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকে ভালো বীজ আনতে পারি। স্থানীয় যেসব বীজ আছে, হাইব্রিড না, ইনব্রিড বীজগুলো, সেগুলা প্রসেস করে, ড্রাই করে, সুন্দর করে আমরা যদি স্টোর করি তাহলে এর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বেড়ে যাবে। এই ভালো বীজ থেকে যে ফলনটা হবে তারও কিন্তু গুণমান বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভালো বীজ আমরা রাখতে পারি। আবার অনেকের এরকম একটা প্রবণতা আছে, আমার বীজ আমি লাগাব; কিন্তু এটা করতে গিয়ে উৎপাদন হ্রাস করলে হবে না। ভালো বীজের দাম যেহেতু টোটাল উৎপাদন খরচের মাত্র দুই-তিন ভাগ সে ক্ষেত্রে ভালো বীজ আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি নিজের ফসল থেকেই বীজ রেখে দিতে হবে, প্রয়োজনে বাইরে থেকে ভালো বীজ আমদানি করতে হবে। আগে বাইরে থেকে বীজ আনা যেত না। এখন তো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বীজ আনা যায়। যদি প্রয়োজন হয় আমরা আনব।

ভিউজ বাংলাদেশ: গবেষণা বলছে যে, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে এই উচ্চ ফলনশীল বীজ ক্রয় করে ফসল ফলানোর পর উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য; কিন্তু এতে দেখা যায় আমাদের দেশজ অনেক বীজ হারিয়ে যাচ্ছে। যেমন বিটি বেগুন। এতে করে আরও অনেক দেশজ বীজ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে না?

এফ এইচ আনসারী: কী থাকল কী হারিয়ে গেল সেটা বড় কথা নয়। বিষয়টা হলো আমাদের দেশে আমাদের যেহেতু নিজেদের উৎপাদন করে খেতে হবে, তাই অধিক উৎপাদনশীল ফসল, সবজি উৎপাদন করতে হবে। বা প্রাণী-উৎপাদনের ক্ষেত্রেও যদি বলি, যেখানে উৎপাদনশীলতা বেশি আছে সেটাই করতে হবে। তবে এটাও ঠিক, জেনেটিক্যাল রিসোর্সও প্রিজার্ভ করতে হবে। এই জন্য আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউশনে, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউশনে, বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির ইনস্টিটিউশনে স্টোরেজ করার ব্যবস্থা আছে, সেখানে এসব রাখতে হবে। যে জাতগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, এক সময় দেখা যাবে ক্রস করার পর এই জাতগুলো থেকে ভালো উৎপাদনশীলতা পাওয়া যাবে। এগুলোর হয়তো ডিজিজস্টেন্স ভালো, অন্য কোনো ভালো জাতের সঙ্গে ক্রস করলে হয়তো এগুলোর ডিজিজস্টেন্স হবে। এগুলো যদি ক্রস করা যায় তাহলে হয়তো লবণসহিষ্ণু জাত পাওয়া যাবে। খড়াতে উৎপাদন করা যাবে। শীতে উৎপাদন করা যাবে। এগুলোর পটেনশিয়াল অনেক হাই। সে ক্ষেত্রে এগুলোর প্রিজার্ভ হচ্ছে। আমি মনে করি যখন দরকার তখন এগুলো থেকে উৎপাদনশীল জাত উৎপাদন করা যাবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: আমরা একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। আপনিই প্রথম বাংলাদেশে ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করেছিলেন। সেটা ২০০৪ সালের দিকে। এই যাত্রাটা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

এফ এইচ আনসারী: আমরা যখন দেখলাম যে বাংলাদেশে লবণের মার্কেট যথেষ্ট ভালো এবং আমাদের দেশে যেসব লবণ পাওয়া যায় সেগুলো জাস্ট সিম্পলাইজ করে দেয়া হয়। এগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাকটিয়া থাকে, অনেক ক্ষেত্রে আনহাইজেনিক হয়। দেখলাম যে আমাদের দেশে যেহেতু ওভারঅল মানুষের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সেখানে ভালো লবণের চাহিদা আছে। সারাদিনের একজন মানুষের মাত্র ১৫ গ্রাম লবণ লাগে। একটা ফ্যামেলিতে সারাদিনে ৬০ গ্রাম, ৭০ গ্রাম লবণ লাগে। যখন আমরা এই লবণটা ইন্ট্রডিউস করলাম তখন কিন্তু লবণের দাম খুব বেশি ছিল না। সাত-আট টাকা কেজি ছিল। আর আমরা যখন বাজারে আনলাম তখন এই লবণটা আট-দশ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু করলাম। আমরা দেখলাম এই অল্প একটু ইকোনমিক ইমপেক্টের কারণে আমরা যদি একটা ভালো টেকনোলজি হান্ট করি, সাদা ধবধবে লবণ দিতে পারি তাহলে কী হবে? একদিকে মানুষের হাইজেনিক হেলথের সহায়তা করবে, আরেকদিকে এর সঙ্গে যেহেতু আয়োডিন মেশানো হচ্ছে সেহেতু ব্রেন ডেভেলপমেন্টের কাজ করবে। দেখলাম আমাদের দেশের মানুষ প্রচুর আগ্রহের সঙ্গে এটাকে পিক-আপ করল। দেখা গেল যে ওভারঅফ আমাদের প্রোডাকশন বেড়ে গেল। আমাদের মার্কেট শেয়ার থার্টি পার্সেন্ট পর্যন্ত আমরা এটাকে নিতে সক্ষম হলাম। আমাদের এই উদ্যোগ মানুষ অনেকভাবে এপ্রিশিয়েট করেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এসিআই লবণ এক নম্বর লবণ।


(চলবে)

দ্বিতীয় পর্ব:  নদীর ও চাষের মাছের মধ্যে পার্থক্য করা আজকাল খুবই কঠিন

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ