টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সুস্থধারার ব্যাংকিং খাত প্রয়োজন
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) নির্বাহী পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম বলেছেন, দেশের টেকসই ও কার্যকর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সুস্থ ধারার ব্যাংকিং সেক্টরে কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংকিং সেক্টরকে একটি দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন বলা হয়। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিএমএসএমই খাতকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা বৃহৎ শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ হিসেবে কাজ করতে পারে। ফেরদৌস আরা বেগম ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক এম এ খালেক ও ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সহকারী সম্পাদক গিরীশ গৈরিক।
ভিউজ বাংলাদেশ: আপনি ‘স্টেইট অব দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক একটি কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এই কমিটির কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা। আপনাদের কাজের পরিধি সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
ফেরদৌস আরা বেগম: স্টেইট অব দ্য ইকোনমির ওপর হোয়াইট পেপার প্রণয়নের দায়িত্ব হচ্ছে আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বাস্তব অবস্থা বিরাজ করছে সে সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রণয়ন করা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ১২ জন বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি যেহেতু ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ এবং ব্যবসায় পরিবেশ সম্পর্কে কাজ করার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন কাজ করছি। এই কাজটি বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা যারা এই দায়িত্ব পেয়েছি তারা চেষ্টা করছি কীভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সরকারের কাছে উপস্থাপন করা যায়।
বাস্তব অর্থে আমরা বিনিয়োগ এবং ব্যবসায় পরিবেশ সম্পর্কে যে ধারণা পাই তা যে সমস্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তার স্বচ্ছতা সম্পর্কে যথেষ্ট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবস্থানের জন্য তথ্যের সঠিক ব্যবহার এবং নিশ্চয়তা বিশেষভাবে দরকার। প্রতিবেদনে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা, জ্বালানি, বড় প্রকল্পে অর্থায়ন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহড়ন, আমাদের প্রবৃদ্ধির চিত্র বিশ্লেষণ, সরকারি ব্যয়, ব্যাংকিং খাতের বিষয়গুলো বিশেষ করে আমাদের তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনার যে ইকোসিস্টেম বর্তমানে বিরাজমান সে সম্পর্কে কিছু বলা এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য কিছু করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আলোকপাত তুলে ধরা।
বাংলাদেশ অর্থনীতির বিপুল যে সম্ভাবনা আছে তা খুঁজে বের করা এবং জনসাধারণের কল্যাণে তার ব্যবহার বিশেষ ভাবে প্রয়োজন যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আমরা দেখতে পাই। সব অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় তবে সমস্যার স্বরূপ সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হতে পারে সবাই মিলে কাজ করলে। সরকার সেই সুপারিশগুলোর আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন নীতি প্রয়ণয়ন করবেন। এ কমিটি স্বচ্ছতার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনায় তথ্যের অপব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তা করবে।
ব্যবসায়ের পরিবেশ, বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যায় পড়েন এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায়, অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা দেখেছি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে-সংখ্যক প্রকল্প বিভিন্ন খাতে নিবন্ধিত হয়েছে সেই পরিমাণ বিনিয়োগ কিন্তু বাস্তবে আসেনি। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত হবার পরও অনেকেই প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেনি এমন কি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির কাছে সঠিক বাস্তবায়িত বিনিয়োগের পরিসংখ্যান নেই। তারা তাদের ওএসেসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঠিক সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে, এটাকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা নেয়া দরকার।
আমাদের একটা বড় কাজ হলো এ সঠিক পরিসংখ্যান খুঁজে বের করা যে একজন উদ্যোক্তা প্রকল্প প্রস্তাব বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত করলেন তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কী কী ধরনের বাধার সম্মুখিন হচ্ছে, সেগুলো কীভাবে নিরসন করা যায়, তার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল, যেখানে আমাদের ঘাটতি থাকায় বিনিয়োগটি নিশ্চিত করা যায়নি। নিশ্চয় কেউ প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে কোনো দেশে এমনি এমনিই আসেন না। তার উদ্দেশ্য থাকে প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে লাভবান হওয়া। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাই এটা জানা জরুরি কেনো তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার কারণ কী ছিল, যাতে আগামী সময়ে নতুন উদোক্তাদের সঠিক বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।
ভিউজ বাংলাদেশ: বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসার পরও প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে কেন ফিরে যান, সে ব্যাপারে কিছু ভাবছেন কি?
ফেরদৌস আরা বেগম: একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী কোনো দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হওয়ার আগে সে দেশের ব্যবসায় পরিবেশ, নীতিমালা, শ্রমশক্তি, কমপ্লায়েন্স ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করার পর সন্তুষ্ট হলেই কেবল পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। আমাদের দেশের বিনিয়োগ প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসেন এটা আমাদের জন্য সুসংসবাদ তা ধরে রাখার জন্য সচেষ্ট হওয়া দরকার। আমরা যদি বিদেশি বিনিয়োগকারীর চলে যাওয়ার কারণগুলো জানতে পারি, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারব।
সরকারিভাবে যতই বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশের কথা বলা হোক না কেন, আসলে বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন নির্মোহভাবে হবে, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সমস্যার স্বরূপ জানা না থাকলে তা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ কখনোই গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। প্রতিবন্ধকতাগুলো জানা থাকলে বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য নিয়োজিত সংস্থাগুলো তা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে পারবে। তাহলে ভবিষ্যতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ এবং স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের আইনি জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়। এসব আইনি জটিলতা কীভাবে অতিক্রম করা যায়, আইনগুলোকে সহজীকরণ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা দরকার।
এখানে রয়েছে ১৮ কোটি মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের ভোক্তাদের চাহিদা এবং এ খাতে ব্যয় করার সামর্থ্য অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা শুল্ক মুক্ত জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জিএসপি সুবিধা কাজে লাগানো এবং বিশাল ভোক্তা শ্রেণিকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন। বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলোকে শুধু রেজিস্ট্রেশন, এমওইউ স্বাক্ষরের মধ্য আবদ্ধ না রেখে আরও সামনের দিকে অর্থাৎ বাস্তবায়নের দিকে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার, যা অধিক হারে কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য নিরসনের একমাত্র পথ।
ভিউজ বাংলাদেশ: স্টেইট অব দ্য ইকোনমি কোন কোন বিষয় নিয়ে কাজ করছে?
ফেরদৌস আরা বেগম: এ কমিটিতে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন অর্থনীতিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরা অর্থনীতির বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এখানে তাদের মেধা প্রয়োগ করবেন। রাজস্ব আদায় কেন প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না। দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনায় যেসব দুর্বলতা আছে, খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে আমরা একটি নতুন পরিবেশে প্রবেশ করেছি। এই পরিবেশ আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ সময়টাকে কীভাবে সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায় তা অনুসন্ধান করা দরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ দেশ কীভাবে কাজে লাগাতে পারে তা খুঁজে বের করা হবে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক সফলতার উদাহরণ আছে। বাংলাদেশ প্রভুত সম্ভাবনার একটি দেশ; কিন্তু নানা কারণেই সেই সম্ভাবনাকে আমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারছি না।
ভিউজ বাংলাদেশ: ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত; কিন্তু তা হচ্ছে না। এর কারণ কী?
ফেরদৌস আরা বেগম: আপনি যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ অনেক দিন ধরেই স্থবির অবস্থায় রয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যে মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ সেভাবে আনুপাতিক হারে বাড়ছে না। আবার জিডিপি বাড়ছে কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি না পেলে কোনো দেশই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে না। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন করাত চায়; কিন্তু ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে কোনোভাবেই ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। আর উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে কখনোই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। কভিডের কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। এর পর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সব সময়ই বিরাজমান ছিল। উদ্যোক্তাদের অনেকেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনেয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণ করেছেন। বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে দেশটির বিনিয়োগ পরিবেশ, রাজনৈতিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনা করে থাকে।
ভিউজ বাংলাদেশ: আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে কেমন ধরণা প্রচলিত আছে বলে মনে করেন?
ফেরদৌস আরা বেগম: আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে খুব একটা ইতিবাচক ধারণা বিদ্যমান নেই। বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে প্রণীত সর্বশেষ ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বি-রেডি নামক আর একটি সূচক প্রবর্তন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইনডেক্সের ওপর একটি রিপোর্ট শিগগিরই প্রকাশিত হবে, যা আমাদের বিজনেস পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবে। এসব ইনডেক্সগুলোতে বাংলাদেশের ভালো অবস্থান উদোক্তাদের ভালো সিগন্যাল দেয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে পর্যাপ্ত মুনাফা এবং পুঁজির নিরাপত্তা এবং তার মুনাফা ফেরত নেয়ার নিশ্চয়তা না পেলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত তিন-চার বছর সময় প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন অফিস থেকে অনুমোদন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা হয়। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা প্রয়োজন।
ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশে কোন ধরনের শিল্প প্রকল্প গড়ে তোলা বেশি প্রয়োজন ক্ষুদ্র নাকি বৃহৎ শিল্প?
ফেরদৌস আরা বেগম: বৃহৎ শিল্প নাকি ক্ষুদ্র শিল্প কোনটা আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। আমি মনে করি, বৃহৎ শিল্প এবং ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমরা অবশ্যই বৃহৎ শিল্প প্রকল্প স্থাপন করব। কারণ ক্ষুদ্র শিল্পে সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু পণ্য আছে, যা বৃহৎ শিল্পের মাধ্যমেই উৎপাদন করা সম্ভব। তাই আমাদের বৃহৎ শিল্প স্থাপন করতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্পকে আমরা অবজ্ঞা করব। বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র শিল্পে তুলনামূলক কম পুঁজির প্রয়োজন হয়। ফলে যে কেউ চাইলেই ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রচণ্ড আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণদান বা অর্থায়নের ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রহ প্রদর্শন করে না। আইনি জটিলতাও আছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদিত করা গেলে তারা নিজেদের বিকশিত করতে পারবেন। বৃহত এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মধ্যে একটি কার্যকরি লিঙ্কেজ প্রতিষ্ঠা ক্ষুদ্র উদোক্তাকে টিকিয়ে অন্যতম উপায়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সেটাই হয়েছে। বাংলাদেশে বৃহৎ উদ্যোক্তারা বরং আমদানির ওপর নির্ভর করে স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিবর্তে এর জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্যের মানের উন্নয়ন এবং করনীতির পরিবর্তন দরকার।
ভিউজ বাংলাদেশ: উন্নত দেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভর করা হয়। আমাদের দেশে উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ আহরণের চেষ্টা করছেন না কেন?
ফেরদৌস আরা বেগম: উন্নত দেশের বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভর করে। পুঁজিবাজারই হচ্ছে তাদের জন্য উপযুক্ত বিনিয়োগ আহরণ ক্ষেত্র; কিন্তু বাংলাদেশে উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ আহরণের জন্য খুব একটা চেষ্টা করছে না। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের পুঁজিবাজার নানা ধরনের দুর্নীতি এবং অনিয়মের উদাহরণ রয়েছে। সামান্য কিছু মানুষের হাতে পুঁজিবাজার জিম্মি হয়েছিল। এ ছাড়া অতীতে পুঁজিবাজারে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা ক্ষেত্রবিশেষে তদন্ত হলেও জনসমক্ষে আসেনি। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্থানে পরিণত করতে হবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য পুঁজিবাজারে এসেমি বোর্ড এবং মহিলা উদ্যোক্তার জন্য পিঙ্ক বোর্ড করা হয়েছে, আশা করা যায় ভবিষ্যতে এগুলোর সদ্ব্যবহার করে তারা সফল হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে