আর্দ্রতা কীভাবে গরম বাড়ায়?
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যত তাপমাত্রা উল্লেখ থাকে, খেয়াল করবেন অনুভূত হবে, তার চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ বিষয়টি এমন যে, আজকের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটা ৪৩ কিংবা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনুভূত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এমনটা কেন?
এর উত্তর বুঝতে হলে আমাদের আর্দ্রতা বুঝতে হবে। এ ছাড়াও কীভাবে মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয়, কেন কোথাও তুষার পড়ে তো কোথাও ঘন কুয়াশা দেখা যায়, কেনই বা ঠান্ডা পানির পাত্রের ওপর পানি জমে, কেনই বা শীতের সকালে শিশির দেখা যায়? এসব কিছু বুঝতে হলে আমাদের আর্দ্রতা বুঝতে হবে এবং আর্দ্রতা বুঝতে পারলে আমরা বুঝতে পারব, কেমন আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক এবং কেমন আবহাওয়া অস্বস্তিদায়ক।
এখন কথা হচ্ছে, আর্দ্রতা বিষয়টি আসলে কি? এর সহজ উত্তর হচ্ছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিই হচ্ছে আর্দ্রতা। সূর্যের তাপ এবং বাতাসের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন উৎস যেমন: জলাশয়, গাছপালা, মাটি ইত্যাদি থেকে বাতাসে জলীয় বাষ্প যুক্ত হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হয় না। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে তরল পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হবার বিষয়টিকে বলা হয় Evaporation. উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে রোদে কাপড় শুকানো। আমরা রোদে যখন কাপড় শুকাতে দেই তখন কাপড়ে থাকা পানির তাপমাত্রা কিন্তু ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় না তার পরেও কিন্তু কাপড়ের পানি শুকিয়ে যায় এবং এটা ঘটে Evaporation পদ্ধতিতে।
যে কোনো প্রক্রিয়াতে বাতাসে জলীয় বাষ্প যুক্ত হবার বিষয়টি হচ্ছে আর্দ্রতা। এখন বাতাসে যে জলীয় বাষ্প যুক্ত হচ্ছে এই জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কতটুকু তা উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে তিন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, পরম আর্দ্রতা (absolute humidity), নির্দিষ্ট আর্দ্রতা (specific humidity) ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা (relative humidity)।
১ ঘনমিটার স্থানে কিংবা বাতাসে কি পরিমাণ বা কত গ্রাম জলীয় বাষ্প আছে, সেটাই হচ্ছে পরম আর্দ্রতা। যেমন কোনো একটি স্থানের ১ ঘনমিটার বাতাসে যদি ১০ গ্রাম জলীয় বাষ্প থাকে, তবে ওই স্থানের পরম আর্দ্রতা হবে ১০ গ্রাম পার কিউবিক মিটার।
আবার কোনো একটি স্থানের ১ ঘন মিটার বাতাসে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভর এবং ওই ১ ঘন মিটার স্থানে থাকা জলীয় বাষ্পসহ মোট বায়ুর ভরের অনুপাতই হচ্ছে নির্দিষ্ট আর্দ্রতা। যেমন ১ ঘন মিটার বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের ভর যদি ১০ গ্রাম হয় এবং ওই ১ ঘন মিটার স্থানে থাকা বাতাসের মোট ভর ৫০০ গ্রাম হয়। তবে নির্দিষ্ট আর্দ্রতা হবে, ১০ গ্রাম/ ৫০০ গ্রাম বা ০.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়, কোন স্থানের বায়ুতে কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এবং ওই বায়ু সর্বোচ্চ কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারবে, এর অনুপাতকে শতকরায় প্রকাশ করাকে বলা হয় আপেক্ষিক আর্দ্রতা। যেমন: মনে করুন, ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, কোনো একটি স্থানের বায়ুতে ২০ গ্রাম জলীয় বাষ্প আছে এবং ওই বায়ু সর্বোচ্চ ৭০ গ্রাম জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারবে। তাহলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা হবে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তারমানে আপেক্ষিক আর্দ্রতার মাধ্যমে কোনো একটি স্থানে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার কত শতাংশ জলীয় বাষ্প উপস্থিত আছে, তা জানা যায়।
এই যে তিন ধরনের আর্দ্রতা পরিমাপ পদ্ধতি, এর মধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক আর্দ্রতা উল্লেখ করা হয়ে থাকে অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়াসহ যে কোনো মিডিয়াতে মূলত আপেক্ষিক আর্দ্রতা উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বাতাসে কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প রয়েছে সেটা কীভাবে জানা যাবে? এ বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের কিছুটা পেছনে ফিরে যেতে হবে। ১৭৮৩ সালে সুইস পদার্থবিজ্ঞানী (physicist) এবং ভূবিজ্ঞানী (geologist) "Horace Bénédict de Saussure" মানুষের চুলের মাধ্যমে আর্দ্রতা পরিমাপক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যাকে বলা হয় Hair Tension Hygrometer। যেদিন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, খেয়াল করবেন সেদিন সোজা চুল কিছুটা কোঁকড়ানো হয়ে যায় এবং কোঁকড়ানো চুল কিছুটা বেশি কোঁকড়ানো হয়ে যায়। কারণ বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের হাইড্রোজেন পরমাণু চুলের কিছু প্রোটিনের সঙ্গে হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি করে যার ফলে চুল কিছুটা কুঁকড়ে যায়।
মানুষের চুল আর্দ্রতার বিপরীতে যথেষ্ট স্পর্শকাতর এবং এজন্যই প্রথম আর্দ্রতা পরিমাপক যন্ত্রে মানুষের চুল ব্যবহার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তৈরি হাইগ্রোমিটারের কাজ করার পদ্ধতি একই হলেও চুলের পরিবর্তে ভিন্ন উপাদান ব্যবহার হয়েছিল। বর্তমানে অবশ্য ওয়েট(Wet) বাল্ব থার্মোমিটারের মাধ্যমে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
আমরা সাধারণত যে থার্মোমিটার দেখি বা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করি সেগুলো হচ্ছে ড্রাই(Dry) বাল্ব থার্মোমিটার। অন্যদিকে ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারের নিচের দিকে যেখানে পারদ জমা থাকে সে অংশকে ভেজা কাপড় দিয়ে আবৃত রাখা হয় এবং থার্মোমিটারে বাতাসের প্রবাহ দেখা হয়। এতে থার্মোমিটারে রিডিং ড্রাই বাল্ব থার্মোমিটার থেকে কম পাওয়া যায়। এখন কোনো একটি স্থানে ড্রাই এবং ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারে তাপমাত্রার কত পার্থক্য পাওয়া গেল, তা থেকে আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়।
কোনো এক দিনের আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক হবে না কি অস্বস্তিদায়ক হবে, এ বিষয়টি আর্দ্রতার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন মানুষ ঘামে পরবর্তীতে সেই ঘাম জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এখন শরীরে থাকা ঘাম জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে যে তাপশক্তির প্রয়োজন তা আমাদের শরীর থেকে শোষণ করে যার ফলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমে আসে এবং আমরা স্বস্তিবোধ করি। এখন খেয়াল করুন, বাতাসে যদি আগে থেকেই আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প বেশি থাকে তখন কিন্তু আমাদের শরীরে তৈরির ঘাম পুরোপুরি জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে পারবে না। ফলে শরীরের তাপমাত্রা ও যথেষ্ট কমবে না ফলাফল শরীর ঘামে ভিজে যাবে এবং অস্বস্তি বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ দিনের তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে, তার ওপর আর্দ্রতাও বেশি থাকে সেক্ষেত্রে আমরা চরম অস্বস্তি বোধ করব এবং তাপমাত্রা যা থাকবে তার চেয়ে বেশি অনুভব করব।
এখন তাপমাত্রা যা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি অনুভব করার বিষয়টিকে বলা হয় হিট ইনডেক্স (Heat index). তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার সম্মিলিত ফলাফলই হচ্ছে, প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা অনুভব করা। যেমন কোনো এক দিনের তাপমাত্রা যদি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় এবং ওই দিনের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৫ শতাংশ হয় তবে আমরা ৫৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভব করব। এই হিট ইনডেক্স নির্ণয়ের একটি দীর্ঘ সমীকরণ রয়েছে। তবে আপনি অনলাইনে হিট ইনডেক্স নির্ণয়ের ক্যালকুলেটর পেয়ে যাবেন। সেখানে ইনপুট হিসেবে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দিলেই হিট ইনডেক্স কত হবে তা পেয়ে যাবেন।
শীতকালেও কিন্তু আর্দ্রতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার ফলে ওই সময়ে বাতাস কম পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে। কারণ বাতাস সর্বোচ্চ কতটুকু জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারবে তা বাতাসের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে।
তারমানে শীতকালে যেহেতু তাপমাত্রা কম থাকে সেহেতু অল্প জলীয় বাষ্পেই শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কথা; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে কারণ শীতে কম জলীয়বাষ্পেই আর্দ্রতা বেড়ে গেলেও সেই কম পরিমাণ জলীয় বাষ্পই বাতাসে যায় না। হলে শীতে দিনের বেলা আর্দ্রতা কম থাকে এবং এই জন্যই আমাদের ত্বক শুষ্ক থাকে হালকা আঁচড়েই দাগ পড়ে যায়। তবে শীতের রাতের চিত্র কিন্তু ভিন্ন, দিনে তৈরি হওয়া জলীয় বাষ্প রাতেও বাতাসে থাকে অন্যদিকে আবার রাতে তাপমাত্রা কমে যায় যার ফলে দিনেরবেলা তৈরি হওয়া জলীয় বাষ্পেই শীতের রাতে আর্দ্রতা বেড়ে যায় এবং এই জন্যই শিশির তৈরি হয়। এ ছাড়াও শীতের দিনে আর্দ্রতা বেশি হলে, ঐদিন যতটা ঠান্ডা তার চেয়ে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। অর্থাৎ গরমকালে যেমন প্রকৃত তাপমাত্রা চেয়ে বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হতে পারে, ঠিক তেমনি শীতকালেও এমনটা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ঘটনাটি ঘটবে উল্টোভাবে, প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হতে পারে।
বাতাস সর্বোচ্চ কতটুকু জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারবে তা বাতাসের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ একই পরিমাণ জলীয় বাষ্প বিভিন্ন তাপমাত্রার বাতাসে থাকলে তাদের আপেক্ষিক আর্দ্রতা এক হবে না বরং তাপমাত্রা অনুযায়ী ওঠানামা করবে। যেমন: ১০ গ্রাম জলীয় বাষ্প যদি বিভিন্ন তাপমাত্রার বাতাসে উপস্থিত থাকে। সেক্ষেত্রে যেই বাতাসের তাপমাত্রা বেশি হবে তার আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হবে এবং যেই বাতাসের তাপমাত্রা কম থাকবে তার আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি হবে। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়তে বাড়তে ১০০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হলে কি ঘটবে?
কোনো এক স্থানের বাতাস সর্বোচ্চ যতটা জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারবে ঠিক ততটা জলীয় বাষ্প বাতাসে থাকলে তাকে বলা হয় ১০০ শতাংশ আর্দ্রতা। এই মাত্রা অতিক্রম করার পর, অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হতে শুরু করে অর্থাৎ জলীয় বাষ্প তরলে রূপ নেয়। এই বিষয়টি আপনি সহজে দেখতে পাবেন শীতের সকালে। শীতের সকালে ঘাসের ওপর শিশির জমতে দেখা যায়। এমনটা হয়ে থাকে আর্দ্রতা ১০০ শতাংশ অতিক্রম করার ফলে। ঠিক একই কারণে মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয়। মেঘের জমা জলীয় বাষ্প ১০০ শতাংশ আর্দ্রতা অতিক্রম করার ফলে সেখানের জলীয় বাষ্প তরলে রূপ নিতে শুরু করে এবং একসময় তা বৃষ্টিরূপে পৃথিবীতে ফিরে আসে। অবশ্যই এসব ক্ষেত্রে আর্দ্রতা ১০০ শতাংশ অতিক্রম করা লাগে না বরং ১০০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি আর্দ্রতাতেই জলীয় বাষ্প তরলে রূপ নিতে শুরু করে।
এখানে অবশ্য আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন এবং তা শিশিরাংক (Dew point). মনে করুন কোনো স্থানের বাতাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ ২০ গ্রাম জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারবে; কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প রয়েছে ১০ গ্রাম। এখন এই স্থানের তাপমাত্রা যদি কমিয়ে আনা হয় তবে সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমবে, এইভাবে তাপমাত্রা কমাতে কমাতে যে তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বাতাসে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের সমান হবে সেই তাপমাত্রাকেই বলা হবে শিশিরাংক।
এখন আমাদের বিবেচনা করা পরিবেশের তাপমাত্রা যদি ২০ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার ফলে বাতাসের সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা ১০ গ্রাম হয় তবে তা বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের সমান হবে। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে শিশিরাঙ্ক হবে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তখন বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প তরল শিশিরে রূপ নিতে শুরু করবে। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ঠান্ডা পানির পাত্র। ঠান্ডা পানির পাত্রের আশপাশের তাপমাত্রা ঠান্ডা পানির প্রভাবে কমতে থাকে। এখন তাপমাত্রা কমার ফলে ঠান্ডা পানির আশপাশের বাতাসের আর্দ্রতা বাড়তে থাকে এবং একসময় তা এক শতাংশ হয়, তারমানে শিশিরাংক পৌঁছায়। এর ফলে ঠান্ডা পানির পাত্রের আশপাশের বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প তরল রূপে বা শিশির রূপে ঠান্ডা পানির পাত্রের গায়ে জমতে শুরু করে।
শিশিরাংক নির্দিষ্ট কোনো তাপমাত্রা নয়, এটি বায়ুর চাপ এবং আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে এবং এই শিশিরাংকের বৈচিত্র্যের কারণেই কোথাও শিশির জমে তো কোথাও তুষার পরে। বাতাসে কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প রয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রচণ্ড গরমের দিনে বাতাসের আর্দ্রতা যত বাড়বে, ততই অস্বস্তি বাড়তে থাকবে। তারমানে গরমকালে অস্বস্তি কমাতে হলে আর্দ্রতা কম রাখতে হবে। এখন আপনি যদি প্রচণ্ড গরমের দিনে পানি স্প্রে করে ছিটান সেক্ষেত্রে সাময়িক স্বস্তি লাগলেও কিন্তু সর্বোপরি অস্বস্তি বাড়াবে। কারণ স্প্রে করে পানি ছেটানোর ফলে সেই পানি সহজে জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে পারবে, তাছাড়া ছেটানো পানি যখন তপ্ত পিচের ওপর পড়বে, তা সহজেই জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে পারবে। এতে বাতাসের আর্দ্রতা দ্রুত বাড়বে ফলাফল অস্বস্তি ও বাড়বে।
এই বিষয়টি আপনি সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন যখন প্রচণ্ড গরমে হালকা বৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমের দিনে হালকা বৃষ্টি হবার পর মুহূর্তেই কিন্তু প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়। কারণ বৃষ্টির ফলে, বৃষ্টির পানির মাধ্যমে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে ভ্যাপসা গরমের অনুভূতিও বেড়ে যায়। এ ছাড়াও একটি নিত্যদিনের বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে, গরমকালে দেয়াল করা কিংবা টাইলস করা বাথরুমে গোসল করার সময় শীতল অনুভূতি হয় ঠিকই কিন্তু খেয়াল করবেন গোসল শেষ করার পরম মুহূর্তেই বাথরুমের ভেতর বেশি গরম অনুভূত হয় এবং বাথরুম থেকে বের হলেই তুলনামূলক শীতল অনুভূতি হয়। এমনটা হবার কারণ হচ্ছে, গোসল করার সময় ছিটানো পানির ফলে বাথরুমের ভেতরে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বা আর্দ্রতা বেড়ে যায় ফলে অনুভূত তাপমাত্রাও বেড়ে যায়।
সর্বোপরি আবহাওয়া আমাদের কেমন অনুভূতি দিবে এই বিষয়টি আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে। আর্দ্রতা বেশি হলে যেমন অস্বস্তি তৈরি করবে, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত কম হলেও অস্বস্তি তৈরি করবে।
মো. জুম্মান ভূইয়া: বিজ্ঞান লেখক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও শিক্ষক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে