Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা কতটা পেশাদার?

ন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ ঘটা করেই পালিত হলো মহান মে দিবস। শ্রমজীবীদের এই দিবসে বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ করেছে। আয়োজন করা হয়েছে সভা-সেমিনার। সব জায়গায়ই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কড়া বক্তব্য এবং কিছু আশার বাণী শোনা গেছে। এই আশার বাণী প্রতি বছরই আমরা শুনি; কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয় না; বরং বছর বছর শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় বাড়ছে। এর প্রমাণ মেলে শ্রম ভবনে গেলে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।

মে দিবস নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকে সংবাদ মাধ্যমগুলো। মাথায় ইট-পাথরের টুকরি কিংবা হাতুড়ি দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করা নারী-পুরুষের ছবি প্রকাশ করে থাকে পত্রপত্রিকাগুলো। শ্রমিকের অধিকার-বঞ্চনা নিয়ে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়ও প্রকাশ করা হয়। দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের লেখা প্রকাশ করা হয়। টেলিভিশনগুলো বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়া টকশোরও আয়োজন করা হয়ে থাকে। সব জায়গায়ই শ্রমিকদের বঞ্চনা আর অধিকার না পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। সরকারের কাছে পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়। বিভিন্ন ধরনের সুপারিশও আসে; কিন্তু আমার জানতে ভীষণ ইচ্ছে হয় শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চনার প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষ যে সাংবাদিকদের দিয়ে তৈরি করাচ্ছেন; সেই সাংবাদিকের অধিকার কি আপনারা পূরণ করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা; কিন্তু কেউ মুখ খুলবেন না।

এবার মে দিবসে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সব পত্রিকা এবং অনলাইনগুলো ঘেঁটে গতানুগতিক লেখাগুলোই পেলাম। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম কোনো সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে একটি শব্দও লেখেনি। তার মানে দাঁড়ায় সাংবাদিকদের অধিকার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে! আবার অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সাংবাদিকরা কী শ্রমিক? কেননা, সাংবাদিকদের জন্য প্রণীত ওয়েজবোর্ডে সাংবাদিক এবং শ্রমিক-কর্মচারী আলাদা করা আছে। এ কারণে সাংবাদিকদের শ্রমিক বলা যাবে না। আবার সাংবাদিকদের পাওনা সংক্রান্ত মামলার বিচার হয় শ্রম আইনে। এ হিসেবে সাংবাদিকদের শ্রমিক বলা যায়। অনেকে নিজেকে কলম শ্রমিক হিসেবেও পরিচয় দেন। সাংবাদিকরা শ্রমিক কি না- সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। তাদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করাই মূল উদ্দেশ্য।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সাংবাদিকরা অধিকার বঞ্চিত। বিশেষ করে বেতনের ক্ষেত্রে তারা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আমার কথা-ই যদি বলি, আমি সর্বশেষ ওয়েজবোর্ডে চাকরি করেছি আলোকিত বাংলাদেশ-এ। এরপর আরও কয়েকটি হাউজে কাজ করেছি। সবখানে বেতন ওয়েজবোর্ডের কাছাকাছি। কোথাও আবার বেশিও পেয়েছি; কিন্তু ওয়েজবোর্ড অনুসারে দেয়া হয়নি। কারণ শুভঙ্করের ফাঁকি। ওয়েজবোর্ডে থাকলে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। মাস তিনেক আগে প্রমিনেন্ট হাউজের এক সহকর্মী দেখা করতে এসেছিলেন আমার অফিসে। আলাপচারিতায় বললেন, তার ওয়েজবোর্ড বাতিল করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যদিও বেতন-ভাতা ওয়েজবোর্ডের সমানই আছে। দেশের বেশ কয়েকটি বড় হাউজেও এখন ওয়েজবোর্ডে কর্মী আছেন হাতেগোনা। বাকিরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। আমি যখন কর্মী নিয়োগ করি তখন বেতনের কথা বললে মাথা নিচু করে। কারণ কর্তৃপক্ষ আমাকে সিলিং দিয়ে দেয়। এর বেশি টাকা তারা দিতে পারবেন না। সংবাদমাধ্যমে প্রচলিত অষ্টম ওয়েজবোর্ডের চেয়ে বেশ কম টাকা অফার করতে হয়। অনেক চাকরিপ্রার্থী বলে ফেলেন- এই টাকায় কেমনে চলব ভাই? আরেকটু বাড়িয়ে দিন। অনেকে চলে যান; আবার অনেকে কম টাকায় জয়েন করেন! নির্মম এই বাস্তবতার মধ্যদিয়েই দিন যাচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ পেশা: ১৫-১৬ বছর আগে এক সিনিয়র সহকর্মীকে জিজ্ঞাসা করলাম সাংবাদিকতাকে কেন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বলা হয়। তার জবাবটা ছিল এরকম- সাংবাদিকরা যুদ্ধের ময়দানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন। এছাড়া সংঘাত-সংঘর্ষের সময়ও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থাকেন সংবাদ সংগ্রহ করতে। এ কারণে সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। অন্যদিকে, সাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বলে মন্তব্য করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তার ভাষ্য, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সত্যকে ধারণ করে মিথ্যার সঙ্গে লড়াই করা। সত্য নিয়ে কাজ করলে ঝুঁকি থাকে বেশি। এদিক বিবেচনায় সাংবাদিকতা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। গত বছরের ৯ মার্চ পিআইবির অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন। তবে এই শ্রদ্ধাভাজন দুই ব্যক্তির সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করতে চাই। সাংবাদিকতার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো তার চাকরির অনিশ্চয়তা। আজ যে লোকটি অফিস করে বাসায় গেলেন; আগামীকাল তিনি অফিসে ঢুকতে পারবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা কোনো হাউজে নেই। আমার দেশ-এর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী বলেছিলেন- সাংবাদিকদের চাকরি হলো বাসে মহিলা সিটে বসার মতো। যে কোনো সময় আপনাকে এসে কর্তৃপক্ষ বলতে পারেন সিট ছাড়ুন। অন্য একজন বসবেন।

দুই ধাক্কা: দেশে সাংবাদিকতায় বড় দুটি ধাক্কা লেগেছে। প্রথম ধাক্কা লাগে করোনাভাইরাস মহামারির সময়। তখন বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মীর চাকরি চলে যায়। আবার অনেকের বেতন অর্ধেক বা এর কাছাকাছি কমানো হয় বিজ্ঞাপন না আসার অজুহাতে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়; বিজ্ঞাপন বাড়ে; কিন্তু বেতন আর বাড়েনি। অনেক হাউজে বেতন বকেয়া পড়ে যায়। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। দ্বিতীয় ধাক্কাটি লাগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। হাতেগোনা দুয়েকটি বাদ দিয়ে মিডিয়ার শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থি সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের বসানো হয়েছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সদস্যরা আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত এবং অপর অংশ বিএনপি-জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত। যদিও উভয় অংশেই অনেক দল নিরপেক্ষ সাংবাদিক রয়েছেন। এই সদস্য পদও চাকরি যাওয়ার অন্যতম কারণ। অতীতে সরকার পতনের পর মিডিয়া হাউজের শীর্ষ পদে এত পরিবর্তন কখনো আসেনি।

হাউজ পলিটিক্স: প্রায় প্রত্যেকটা হাউজেই ‘ইন হাউজ’ পলিটিক্স থাকে। দল-উপদল থাকে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সহ্য করতে পারে না। চাকরি খাওয়ার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যায় যারা বেশি তারাই সফল হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন নিরপেক্ষরা। তাদের কেউ বিশ্বাস করেন না। সুতরাং তাদের চাকরিটাই আগে যায়। সাংবাদিকতায় আরেকটা বড় দোষ হলো মাই ম্যান (আমার লোক)। অনেক অথর্বকে দেখেছি বেশি টাকায় কাজ করতে। কারণ তাদের মাথার ওপর বড়দের হাত থাকে। আবার দক্ষ-ভালো কর্মীরও বেতন কম। প্রমোশন হয় না। বঞ্চনার শিকার। দক্ষ কর্মীকে শুধু ‘নিজের লোক’ না হওয়ার অজুহাতে বের করে দেয়া হয়। এমন ঘটনার নজির ভূরি ভূরি রয়েছে।

অনৈক্য: সাংবাদিকতা পেশার আরেকটা বড় সমস্যা হলো অনৈক্য। নিজেরা দল-উপদলে বিভক্ত। পাশের সিটের সহকর্মীর যখন চাকরি চলে যায় তখন অন্যজন চুপ থাকেন, হাসেন। কিছুদিন পর ঘুরেফিরে তারও একই অবস্থা হয়। এই গার্মেন্টসকর্মীদের কথাই ধরুন। গাজীপুরে কোনো কর্মীর চাকরি গেলে ঢাকার কারখানার শ্রমিকরা প্রতিবাদে মাঠে নামেন। সরকার নির্ধারিত বেতন-ভাতা না পেলে তারা আন্দোলন করেন। অথচ আমাদের চিত্র পুরো উল্টো। পাশের সহকর্মীর চাকরি খেলে আমরা দিব্যি ভালো থাকি! সরকার নির্ধারিত বেতন আমরা কতজন পাচ্ছি? নিয়মিত বেতন হচ্ছে কতগুলো হাউজে সেই হিসেব কারও কাছে আছে? দুদিন আগে ফেসবুকে দেখলাম, বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন জনকণ্ঠের কর্মীরা। সেখানে অন্য হাউজের লোকজন নেই। এমনকি সাংবাদিকদের এতো সংগঠন থাকলেও কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। এই অনৈক্যর সুযোগ নিচ্ছে মালিকপক্ষ।

৪৩ শতাংশ সাংবাদিক বিষণ্নতায় ভুগছেন: দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ সাংবাদিক পেশা নিয়ে বিষণ্নতায় ভুগছেন। প্রায় ৭২ শতাংশ তাদের পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ‘অ্যান ইনভেস্টিগেশন ইনটু রিস্ক টু মেন্টাল হেলথ অব বাংলাদেশি জার্নালিস্টস’ শীর্ষক এক গবেষণা দেশের সংবাদপত্র, স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোয় কর্মরত ১৯১ জন সাংবাদিকের ওপর পরিচালনা করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা আইজিআই গ্লোবালের ‘হ্যান্ডবুক অব রিসার্চ ইন ডিসক্রিমিনেশন, জেন্ডার ডিসপ্যারিটি অ্যান্ড সেইফটি রিস্ক ইন জার্নালিজম’ শীর্ষক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ সালে এই জরিপ চালানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৪২.৯% সাংবাদিক তাদের পেশা নিয়ে বিষণ্নতায় ভুগছেন। বিষণ্নতায় ভোগা ৪২.৯% সাংবাদিকের মধ্যে ৪৮.৪৮% পুরুষ এবং ৪১.৭৭% নারী। আর পেশাগত হতাশার কারণেই সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে চান ৭১.৭% সাংবাদিক। গবেষণায় বলা হয়, পেশাগত অনিশ্চয়তাই সাংবাদিকতা বিমুখতার প্রধান কারণ। প্রায় ৮৫% সাংবাদিকই চাকরির অনিশ্চয়তায় ভোগেন। হতাশার কারণের মধ্যে রয়েছে সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়া, কম বেতন পাওয়া এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ। সাব-এডিটর বা কপি এডিটরদের তুলনায় বেশি বিষণ্নতায় ভুগছেন রিপোর্টাররা। বিষণ্নতার হার রিপোর্টার ৪৪.৩২%, কপি এডিটরের ৩৪% এবং নিউজ এডিটরের বিষণ্নতার হার ২৮.৫৭%। নানামুখী হতাশার কারণে অনেক মেধাবী কিছুদিন সাংবাদিকতা করার পর পেশা পরিবর্তন করেন। গবেষক দলের প্রধান আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ নিয়ে দেশে সচেতনতার মাত্রা খুবই কম।

মফস্বলের অবস্থা ভয়াবহ: ‘নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো’ বলে একটা কথা আছে। মফস্বল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে কথাটি পুরোপুরি প্রযোজ্য। সিংহভাগ মিডিয়া হাউজ মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন দেন না। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠিত হাউজও ঢাকার বাইরে সাংবাদিকদের বেতন দেন না। উপরন্তু অনেক বস তাদের কাছে ‘গিফট’ প্রত্যাশা করে থাকেন। অনেকে চেয়েই গিফট নেন। কয়েক দিন আগে সিরাজগঞ্জের এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন তার অফিসের এক কর্মকর্তা নিউজ ছাপার জন্য এক হাজার টাকা চেয়েছেন! আহ্! কী নির্মমতা। কিছু হাউজ ঢাকার বাইরে সাংবাদিকদের নামমাত্র সম্মানী দিয়ে থাকে। তবে কিছু হাউজ লেখার ওপর বিল দিয়ে থাকে। মফস্বল সাংবাদিকদের আয়ের একমাত্র পথ হলো বিজ্ঞাপন। তাদের পাঠানো বিজ্ঞাপন থেকে একটা অংশ তাদের দেয়া হয়। অনেক হাউজ সেটাও দিতে চায় না। দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকে; কিন্তু তাদের ত্রিমুখী কাজ করতে হয়। সংবাদ পাঠানো, ছবি পাঠানো, বিজ্ঞাপন সংগ্রহ তো তাদের নিয়মিত কাজ। এর বাইরে বসদের ফরমায়েশ তো আছেই। স্থানীয় সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের সঙ্গে লড়াই করেই তাদের কাজ করতে হয়।

সিরাজুল ইসলাম: সাংবাদিক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ