স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা
তারুণ্যের চোখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে যে অল্প কিছু দেশ, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ার পরও পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। সমস্ত শান্তিপূর্ণ আলোচনা ব্যর্থ হয়, যার ফলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের নামে ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তান ছিল একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। অসাম্য ও অবিচারের কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র দুই টুকরো হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
পাকিস্তান ছিল নামমাত্র একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। দুই পাকিস্তানের মধ্যে বাঙালিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তথাকথিত ‘মুসলিম জাতীয়তা’র নামে গঠিত হলেও প্রথম থেকেই বাঙালিরা বুঝে যায় পশ্চিম পাকিস্তানির মধ্যে কোনো গণতান্ত্রিক বোধ নেই। ধর্মকে পুঁজি করেই তাদের রাজনীতি। ভ্রাতৃত্বের বদলে তাদের নীতি পূর্ববাংলার জনগণের ওপর শোষণ-শাসন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর তাদের আক্রমণ এটা আরও স্পষ্ট করে দেয়। বাঙালিরা বুঝতে পারে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেলেও তারা এখন নতুন করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পরাধীনতার জালে আটকা পড়েছে। শিগগিরই শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন। তৎকালীন সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান এগিয়ে আসেন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে। এর জন্য ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তিনি গ্রেপ্তার হন এবং কিছুদিন জেল খাটেন।
তারণ্যের জ্বলে-ওঠা এই শক্তি কেবল আর রাষ্ট্রভাষার অধিকার আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা ছড়িয়ে পড়ে বাঙালির অর্থনৈতিক সমতা ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান বারবার জেলে যেতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রত্ব বাতিল হয়। তিনি জেলে থাকা অবস্থাতেই গঠিত হয় অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ (পরবর্তীতে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়)। শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে তিনি নেতৃত্বের আসনে চলে আসেন। আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে তারুণ্য ও জনগণের শক্তি। জেলে থাকা অবস্থাতেও শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা-আন্দোলন বেগবান করার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের অবসান ঘটাতে শেখ মুজিবের ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি দেন। এতে করে দেশের যুবকশ্রেণি ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি নায়ক বনে যান। তার দল আওয়ামী লীগই হয়ে উঠে একমাত্র কাণ্ডারী। দুর্ভাগ্যবশত, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানের সমতার আহ্বানকে সাড়া দেয় সহিংসতার ভাষা দিয়ে। তাকে বারবার কারাবন্দি করা হয়; কিন্তু তার অনুসারীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তভূমি তৈরি করতে থাকে এই বাংলায়।
একদিকে যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বেগবান হতে থাকে অন্য দিকে পাকিস্তানি শাসক শ্রেণি তাদের দমন-পীড়ন আরও জোরদার করতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। এতে করে পূর্ববাংলার মানুষের স্বায়ত্তশাসনের দাবি আরও জোরদার হয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি।
আপসহীন নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তি বাঙালির মনে চিরতরে গাঁথা হয়ে যায়। যার জন্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইয়াহিয়া খান ঠিকই সাধারণ নির্বাচন দেন। রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বঙ্গবন্ধু এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার ৬ দফা আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। যুবক-কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী আর সাধারণ মানুষের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়; কিন্তু ভুট্টো ও পাকিস্তানি অভিজাতদের প্ররোচনায় ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের দাবিতে শুরু হয় দীর্ঘ অসহযোগ আন্দোলন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বঙ্গবন্ধু দেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হবার আগে। বঙ্গবন্ধুর ওপর দলের তরুণ নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন মহলের চাপ ছিল ৭ মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেবার; কিন্তু, সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় পড়বেন, এ জন্য তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি; কিন্তু স্পষ্ট করে এ কথা বলেন, যদি সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া না হয় এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না হয় তাহলে সংগ্রাম চলবে। যার যা আছে তা-ই নিয়ে তিনি শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি হুকুম দিয়েছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার জন্য। অর্থাৎ একরকম গেরিলা যুদ্ধেরই স্পষ্ট সংকেত তিনি দিয়েছেন।
তরুণরা জানত বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার মধ্যে আলোচনা কেবল সময়ক্ষেপণ। গণহত্যা সংঘটিত করার জন্য এই সুযোগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে এসে জড়ো হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণও তখন একটি জনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার জন্য তলে তলে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
এর মধ্যেই আসে সেই কালরাত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বর্বর হামলা চালায় ঘুমন্ত ঢাকাবাসীর ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো তারা তছনছ করে দেয়। পুলিশ লাইনে এবং পিলখানায় গিয়ে ‘ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস’-এর ওপর হামলা চালায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে (শারীরিকভাবে নয়, আত্মিকভাবে) বাংলাদেশের মানুষ শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। দেশজুড়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই হচ্ছেন কৃষক-শ্রমিকদের সন্তান। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্র-চাকরিজীবীরাও যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের রক্তে যে স্বাধীনতার আগুন জ্বেলে দিয়েছেন, সেই আগুন বুকে নিয়ে তারা টগবগ করে ফুটতে থাকেন। ৯ মাসব্যাপী এ যুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত হয়। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন, ২ লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারান। বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে আসা কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্য শহীদ হন। শেষ পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর হাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করে।
বঙ্গবন্ধুকে কাছে না পেয়ে বিজয় সম্পন্ন হচ্ছিল না। তিনি তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন বিকেলে তাকে কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছিল; কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে তারা মাথা ছিল সমুন্নত। যে রেসকোর্স ময়দান থেকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই রেসকোর্স ময়দানেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি আজীবনের লালিত্য স্বপ্ন স্বাধীনতার বাতাস বুক ভরে টেনে নিয়ে স্মরণ করেন এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যেসব অগণিত মানুষ শহীদ হয়েছেন তাদের কথা। তিনি এ কথাও বলতে ভুলেন না যে এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি বাংলার মানুষ খাবার না পায়। বাংলার ছেলেমেয়েরা কাজ না পায়। এসব শুধু কথার কথা ছিল না। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ যখন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়।
আজকের তরুণ-তরুণীরা জানে এ দেশ গড়ে তোলার পেছনে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম অবদানের কথা। তারা তাকে জাতির পিতা হিসেবে বুকে ঠাঁই দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ও তার সহনেতাদের নেতেৃত্বেই যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এ কথা তাদের মনে গাঁথা হয়ে আছে। এই ইতিহাসের সঙ্গে তারা নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে চিরদিনের জন্য।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় আমরা জাতির পিতা সম্পর্কে তরুণ-তরুণীদের উপলব্ধি নিয়ে একটি অনলাইন জরিপ পরিচালনা করেছি। এটা সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল যে তরুণ-তরুণীরা তার নান্দনিক ব্যক্তিত্বকে অনুভব করতে পারে হৃদয়ের গভীর থেকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে তারা জানে। জরিপ অনুযায়ী, ৬৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী জানিয়েছে, যখন তাদের বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ হয় তখন বাংলাশের স্বাধীনতা-আন্দোলনের ইতিহাসটিই তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ৭৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণই তাদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। তরুণ-তরুণীদের কাছে যখন আমরা জানতে চাই, কেন বঙ্গবন্ধু তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? তখন তারা উত্তর দেয়, বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক নেতৃত্বের জন্য।
এদের মধ্যে ৮১ শতাংশ তরুণ-তরুণী বলেছে যে, বঙ্গবন্ধু চিরস্মরণীয় তার নান্দনিক ব্যক্তিত্বের জন্য। ৭৩ শতাংশ মনে করে জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর তাৎপর্য স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তার আপোষহীন নেতৃত্বের জন্য। ৭২ শতাংশ মনে করে তার নেতৃত্বের মূল বৈশিষ্ট্য স্বার্থহীন এবং সব সময়ই জনমুখী। আজকের রাজনীতি ও সামাজিক নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি তারুণ্যের হৃদয়ে মহান নেতা হিসেবে অঙ্কিত এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।
আরেকটি জরিপের (২০২৩) ফলাফল দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক নানা বিষয় নিয়ে তরুণদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারুণের অভিযোগ রাজনীতিবিদের ও সংশিষ্ট নীতিনির্ধারকদের শুনতে হবে । বঙ্গবন্ধুও রাষ্ট্রের অনেক বিষয়ে সমালোচনা করেছেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি নিয়ে তিনি সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। তবুও তিনি তরুণদের মতোই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময়ই আশাবাদী ছিলেন।
যখন তার রাজকোষে এক ডলারও ছিল না, দারিদ্র্যসীমা ছিল ৮০ ভাগের নিচে, বেশির ভাগ মানুষ দুই বেলা পেট পুরে খেতে পারত না, তখনো তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি কখনো আশা হারাননি। তিনি ভেবেছেন বাংলাদেশের জমি উর্বর, আর এ দেশের মানুষও পরিশ্রমী, তারা ঠিকই শ্মশান বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
বঙ্গবন্ধুর মতো, জরিপের ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ-তরুণীরা বিশ্বাস করে, আগামী বছরগুলোতে দেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত অবস্থারও উন্নতি হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৯৭২ সালে গঠন করেছিলেন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন, তার মতোই এ সময়ের ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন, তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন। তাদের মধ্যে আরো ৬৯ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের প্রস্তুত করার জন্যও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু যেমন শিক্ষকদের মানের দিকে মনোনিবেশ করতেন, তরুণদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করেন যে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য শিক্ষকদের মান বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন বাংলাদেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা দূর্নীতি। ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন বেকারত্বও তাদের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী আজকের পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে চিন্তিত। বৈশ্বিক পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার একটা বড় প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে মানুষ এত উদ্বিগ্ন ছিল না; কিন্তু তিনি আজকের তরুণদের মতোই সুন্দরবন নিয়ে ভেবেছেন। সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাকর্তা। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় থেকে সুন্দরবন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল অনেকটাই। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, আরও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসছে। যার কারণে দেখা দিচ্ছে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। আজকের তরুণরা বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, খাদ্যঘাটতি নিয়ে চিন্তিত। তাদের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শই কাজ করছে।
আজকের তারুণ্যের মধ্যে যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-গুণাবলি খুঁজে পাই, তাহলে এ-দেশের উন্নতি নিয়ে ভয় নেই। কারণ, আজকের তরুণরাই গড়ে তুলবে ভবিষ্যতের সোনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বহুমাত্রিক নেতা। প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে গড়ে নিতে পারতেন। আজকের তরুণদেরও তার মতো হতে হবে। আর তার মতো হতে হলে দরকার তার সম্পর্কে আরও বেশি করে জানা। সে জন্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আরো অনেক বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক নেতৃত্ব সম্পর্কে যদি আমাদের তরুণ-তরুণীরা না জানেন তাহলে স্বাধীনতার সর্বোচ্চ শিখরে আহরণ করতে পারবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রমের প্রকৃত অর্থ তারা অনুভব করতে পারবে না। তাই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের তরুণদের আরও বেশি সংযুক্তি ঘটানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করা উচিত। কারণ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের আরেক নাম।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে