Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা কি আসলেই হুমকিতে?

Amin Al  Rasheed

আমীন আল রশীদ

শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

বরটি সত্যি হলে গা শিউরে ওঠার মতো। খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শীর্ষ দশে বাংলাদেশ। জার্মানির বন থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক খাদ্যসংকট প্রতিবেদন বা গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪-এর বরাত দিয়ে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সংকটে থাকা সূচকে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এই সূচকের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ৫৯টি দেশের প্রায় ১৭৬ মিলিয়ন মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে, যাদের মধ্য কিছু মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কঙ্গো, দ্বিতীয় নাইজেরিয়া, তৃতীয় সুদান, চতুর্থ আফগানিস্তান, পঞ্চম ইথিওপিয়া, ষষ্ঠ ইয়েমেন, সপ্তম সিরিয়া, অষ্টম বাংলাদেশ, নবম পাকিস্তান ও দশম মিয়ানমার। (খবরের কাগজ, ০১ জুন ২০২৪)।

দেখা যাচ্ছে, এই দশটি দেশের মধ্যে প্রথম তিনটিসহ চারটি দেশ বহু বছর ধরে আর্থ-সামাজিক সংকটে থাকা আফ্রিকা মহাদেশের। আছে অভ্যন্তরীণ সংকট ও বৈশ্বিক নানা রাজনীতির শিকার আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়া। আছে সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট মিয়ানমার এবং বহুদিন ধরেই যাকে একটি ‘অকার্যকর রাষ্ট্র’ বলা হচ্ছে, সেই পাকিস্তানও আছে তালিকায়; কিন্তু এরকম দেশগুলোর সঙ্গে উর্বর জমি ও সুন্দর আবহাওয়ার জন্য খ্যাত বাংলাদেশের মতো একটি কৃষিনির্ভর দেশ কী করে তালিকাভুক্ত হলো- সেটি বিরাট প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ শিশু তহবিল এবং আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের যৌথ উদ্যোগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই সতর্ক করে বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের ৪৫টি দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা বিশ্বের অন্তত ২৭৬ মিলিয়ন মানুষকে মারাত্মক খাদ্য সংকটে ফেলবে। এরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রতি ইঞ্চি আবাদের পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও প্রস্তুত থাকতে বলেন। যদিও তার ‘দুর্ভিক্ষ’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। বস্তুত তিনি বৈশ্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনেছেন- তে বাংলাদেশ এ ধরনের পরিস্থিতিতে না পড়ে বা খাদ্য নিরাপত্তার সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় সবাই প্রস্তুতি নিতে পারেন।

একটু পেছনে ফেরা যাক। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। তখন মানুষ ছিল সাড়ে ৭ কোটি। দেশে এখন মানুষ ১৭ কোটির বেশি (জনশুমারি অনুযায়ী সংখ্যাটা আরও কম)। তার মানে গত অর্ধ শতাব্দীতে দেশে মানুষ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, মানুষের বাসস্থান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাটসহ নানারকম অবকাঠামো উন্নয়ন করতে গিয়ে এই সময়ের মধ্যে আবাদি জমিও কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ; কিন্তু তার বিপরীতে খাদ্যশস্য উৎপাদনও বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ গুণ। বৈশ্বিক নানা রাজনৈতিক সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের মধ্যেও দেশে কোথাও দুর্ভিক্ষের মতো খাদ্য সংকট নেই। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকলেও কোথাও না খেয়ে কারো মৃত্যু হয়েছে- সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো সংবাদ গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়নি। তার মানে নানাবিধ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এখন পর্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি; কিন্তু গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিসের এই তথ্য কি তাহলে অমূলক?

২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে বদলে যাওয়া দৃশ্যপট (২০০৬ থেকে ২০২৩) শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। যেমন ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়, আলু ও আমের উৎপাদনে সপ্তম, ইলিশ আহরণে প্রথম, স্বাদু পানি ও চাষের মাছে তৃতীয়, গবাদি পশু উৎপাদনে ১২তম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২-২৩)-এ বলা হয়েছে, এই অর্থবছরে দেশে খাদ্যশস্যের সর্বোচ্চ মজুত ছিল ২০ লাখ ৭৭৫ মেট্রিক টন এবং সর্বনিম্ন মজুত ছিল ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন।

গত অর্ধ শতাব্দীতে বাংলাদেশের যেসব ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থেই উন্নয়ন হয়েছে এবং যে উন্নয়ন নিয়ে কারো দ্বিমত নেই, সেটি হচ্ছে কৃষি। কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন এবং কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন একই জমিতে দুই বা ততধিকবার চাষ হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে চারবারও। বন্যা, খরা ও লবণসহিষ্ণু ফসল আবাদ হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নেও বাংলাদেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষুধা সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। ২০১৩ সনের ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (IFPRI) প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র এক বছরেই এ সূচকে ১১ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রশ্ন হলো, এরকম অবস্থায়ও বাংলাদেশ কেন শীর্ষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন দেশের তালিকার ৮ নম্বরে উঠে এলো? এটি কি বিশ্বাসযোগ্য? যে বাংলাদেশকে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয় বরং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা হয়, সেই দেশটি কীভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীন শীর্ষ দেশের তালিকায় যুক্ত হলো? যদি এই তথ্য সঠিক হয়, তাহলে ১৭-১৮ কোটি লোকের দেশের জন্য এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি এবং সারের উচ্চ খরচ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও সাপ্লাই চেইনসহ উচ্চ খাদ্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ভুক্তভোগী মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি বর্ষা থেকে বন্যা, চরম আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড় একটি বহুবর্ষজীবী উদ্বেগ। এ ছাড়া সংঘর্ষের আশঙ্কা মিয়ানমার বা আফগানিস্তানে বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। তবে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য চলতি বছরের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণ করা না গেলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পূর্বাভাস, কম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণ এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা বেসরকারি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া দেশের ২০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা রয়েছে বলে একাধিক সংস্থার তথ্য রয়েছে।

তার মানে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যেরকম সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছে বা দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তার সংকটে পড়তে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেখানে ধারণাগত অস্পষ্টতা রয়েছে। তাহলে ‘প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ছাড়া’ কীভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম যুক্ত করা হলো- এটি একটি প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্ন এক পাশে রেখে কিংবা এই প্রতিবেদনকে আমলে না নিয়েও বলা যায়, বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরির নানাবিধ আয়োজন ভেতরে ভেতরে চলছে। বিশেষ করে নানারকম উন্ননয়ন কর্মকাণ্ড এবং বালুর সহজলভ্যতার কারণে যেভাবে নিম্নভূমি ও ফসলের জমি ভরাট হচ্ছে- তাতে আগামী ২০ বছর পরে দেশের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে- সেটি নিয়ে আরও আগেই চিন্তা করা তো বটেই, কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত কৃষি জমি রক্ষার যে তাগিদ দেন- মাঠ পর্যায়ে সেই নির্দেশনার প্রতিফলন নিয়ে প্রশ্ন আছে। কৃষিনির্ভর দেশ যেভাবে শিল্পনির্ভর হচ্ছে এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে যেভাবে কৃষিজমি কমছে, সেটি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ সত্যিই খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বলা হচ্ছে যে, কৃষিকাজ লাভজনক না হওয়ায় এবং কৃষকের সামাজিক মর্যাদা না থাকা তথা কৃষিকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে মনে না করার কারণে কৃষি কাজে মানুষের আগ্রহ কমছে। কৃষকের সন্তানরা কৃষক হতে চাচ্ছে না। তারা চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে অথবা প্রবাসী শ্রমিক হওয়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী। এখানে প্রধানত কারণ অর্থনৈতিক; দ্বিতীয়ত, সামাজিক মর্যাদা। সুতরাং এখন অনেক শিক্ষিত তরুণ আধুনিক কৃষি তথা দামি ফল ও ফসল আবাদে আগ্রহী হলেও সামগ্রিকভাবে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা যে কমছে, সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

যন্ত্রনির্ভর আধুনিক কৃষিব্যবস্থায় কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে, এটি যেমন ঠিক, তেমনি কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিও এখন একটি বড় উদ্বেগ্বের বিষয়। অতএব, উৎপানদন খরচ যদি বেড়ে যায় এবং কৃষক যদি সেই তুলনায় দাম না পায়, তাহলে কৃষিকাজে মানুষের আগ্রহ আরও কমবে, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে। অতি প্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যশস্যও তখন আমদানি করতে হবে, যা বাংলাদেশেই উৎপাদন করা যায়; কিন্তু তারপরও এটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা যায়, বাংলাদেশের খাদ্য-নিরাপত্তাহীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা কম। বরং এখানে মূল উদ্বেগটা নিরাপদ খাদ্যের। অর্থাৎ খাদ্য-সংকট কিংবা খাদ্য-সংকটজনিত কারণে হয়তো দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না; কিন্তু মানুষ যা খাচ্ছে, সেগুলো কতটা নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত তা নিয়েই প্রশ্ন আছে। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে-পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, মাছ মাংস সবজি ও ফল তাজা রাখতে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য কতটা বিপদ ডেকে আনছে এবং এখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কতটা আছে, সেটিই বরং মূল তর্ক।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম প্রধান সমস্যা বাজারব্যবস্থা। মধ্যস্বত্বভোগী এবং নানা খাতে চাঁদাবাজির কারণে উৎপাদিত পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতা পর্যায়ে গিয়ে অনেক বেড়ে যায়। বগুড়ায় যে করোলা ২০ টাকা কেজি, ঢাকায় এসে সেটি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সুতরাং এখানে যে বিরাট ‘সিস্টেম লস’, এখানে হাত দিতে হবে। এইসব জায়গায় কঠোর নজরদারি ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খাদ্য থাকার পরেও অসংখ্য মানুষের পক্ষে খাদ্য কিনে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বাজারে খাদ্য আছে কিন্তু সেটি কিনতে গিয়ে যদি বিরাটসংখ্যক মানুষকে হিমশিম খেতে হয় বা জীবনধারণ পুষ্টি নিশ্চিতের জন্য ন্যূনতম খাদ্য কিনতে গিয়েই যদি তার উপার্জনের বিরাট অংশ চলে যায়, সেটিও এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা।

অতএব, বৈশ্বিক কোনো প্রতিবেদনে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কী বলল আর তালিকার কত নম্বরে বাংলাদেশ থাকল, সেটি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না হলেও দেশের স্বল্প আয়ের, তথা সবচেয়ে কম উপার্জনকারী ব্যক্তিটিও, এমনকি যিনি উপার্জনে সক্ষম নন, তারও জীবনধারণের জন্য যাতে ন্যূনতম খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকে, সে বিষয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখাই সরকারের প্রধান কাজ। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নয়নকে যতই দৃশ্যমান করা হোক না কেন, বাজারে গিয়ে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য মানু কিনতে না পারে, তাহলে সেই উন্নয়নকে টেকসই বলার সুযোগ নেই। কেননা রাষ্ট্রের উন্নয়ন শুধুমাত্র সরকার, সরকারি দলের নেতাকর্মী, ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার এবং নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারীদের জন্য নয়। বরং প্রকৃত উন্নয়নের ভাগিদার ও সুবিধাভোগী রাষ্ট্রের প্রান্তিক মানুষটিও। তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন খাদ্য। অতএব, খাদ্য নিরাপত্তা তথা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ