Views Bangladesh Logo

গাজাবাসীর কান্না কি পৌঁছাচ্ছে বিশ্বনেতাদের কানে?

গাজায় তখন শেষ রাত। পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় গাজার অনেক লোক সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই বোমারু বিমানের শব্দ। মুহুর্মুহু বোমার বিস্ফোরণ। খাবার ফেলেই তাদের পালাতে হলো। চোখের সামনে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল তাদের ঘরবাড়ি। যুদ্ধবিরতি চলছে। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি অতর্কিতে এমন ভয়ংকর হামলা নেমে আসবে। চোখের সামনেই মারা গেল অনেক প্রিয়জন। ছোট্ট শিশুরা পিতা-মাতাকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে একা একা রাস্তায় দৌড়াতে লাগল। একটু পর ভেসে এলো ফজরের আজান। মোয়াজ্জিনের কণ্ঠও কান্নাভেজা।

পরদিন সকাল থেকেই বিশ্ববাসী জানল এই নিষ্ঠুর হামলার কথা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ৩৬ ঘণ্টার ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৩৬ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ১৪৩ জনই শিশু। আহত হয়েছেন শতাধিক। গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গাজার বেইত লাহিয়া, রাফা, নুসেইরাত ও আল-মাওয়াসি এলাকায় মঙ্গলবার বিমান হামলা চালানো হয়। এতে এসব এলাকার মানুষ গত জানুয়ারি থেকে যে আপেক্ষিক শান্তি বোধ করছিলেন, তা কার্যত ভেস্তে গেছে। হাসপাতালগুলো আবারও হতাহতে ভরে গেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ যুদ্ধবিরতির পর এবারই গাজায় সবচেয়ে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে। গাজায় হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ মানুষ হত্যার পর নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এটা কেবল শুরু’! গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো থেকে ব্যাপক পরিসরে হামলা শুরুর পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করলেন। যদিও ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা শুধু হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে।

নতুন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরুর নিন্দা জানিয়েছে মিশর। দেশটি হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনায় মধ্যস্ততা করছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ অভিযোগ এনে হামাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েল গাজায় বন্দি অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের ‘একটি অজানা ভাগ্যের’ দিকে ঠেলে দিলো। তবে হামাস এখনো ঘোষণা করেনি যে তারা যুদ্ধ পুনরায় শুরু করছে, পরিবর্তে মধ্যস্থতাকারীদের এবং জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের বারবার অস্বীকৃতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জবাবে এই হামলা।’

যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি পর্যায় রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা ছয় সপ্তাহ আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তা হয়নি। তার আগেই ইসরায়েলি হামলায় গাজা আবার জাহান্নামের রূপ নিয়েছে। মৃতদেহ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাটিতে পড়ে আছে এবং আহতরা তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো ডাক্তার খুঁজে পাচ্ছে না।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি শেষ পর্যন্ত সত্যিই আর কার্যকর হবে কি না, হলেও তা কবে হয়, তা নিয়েও অনেকের রয়েছে অনিশ্চয়তা। তাহলে কি এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে অনন্তকাল! আর কত গাজাবাসী এভাবে মারা যাবে? আর কত শিশু কাঁদতে কাঁদতে গাজার রাস্তায় ছুটে বেড়াবে? কেউ জানে না। বাংলাদেশের অনেক বিবেকবান মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন, আর সহ্য করতে পারছি না।

এমন আর্তনাদ পৃথিবীর আরও অনেক দেশের মানুষেরই; কিন্তু গাজাবাসীর কান্না কি পৌঁছাচ্ছে বিশ্বনেতাদের কানে? দুঃখের বিষয় অনেক মুসলিম দেশও এই হামলার বিরুদ্ধে নীরব; কিন্তু গাজাবাসীর কান্না একদিন না একদিন পৌঁছতে হতে হবেই বিশ্বনেতাদের কানে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা না করে কোনোভাবেই এর চিরস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ