ঝালকাঠিতে ট্রাক চাপায় নিহত ১৪ জনের দাফন সম্পন্ন, গ্রামে জুড়ে কান্নার রোল
ঝালকাঠির গাবখান টোল ঘরে ট্রাক চাপায় ঝরে গেছে ১৪ প্রাণ। এরমধ্যে নিহত হয়েছেন একই পারিবারের ৬ জন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় গ্রামজুড়ে চলছে কান্নার রোল। প্রাইভেট কারে থাকা রাজাপুরের একই পরিবারের ছয় জনসহ নিহত সকলের দাফন সম্পন্ন হলেও গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতাম।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরের মধ্যে নিহতদের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলার উত্তর সাউথপুর গ্রামে নিহতদের মৃতদেহ নিয়ে আসা হলে আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের শোকে বারবার জ্ঞান হারান বৃদ্ধ মা।
এদিন সকাল থেকেই দূর দূরান্ত থেকেই নিহতদের দেখতে আসতে শুরু করেন আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসী। শেষবারের মত প্রিয়জনের মুখ দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েন অনেকে।
বুধবার দুপুর দেড়টায় বরিশাল - খুলনা মহাসড়কের ঝালকাঠির গাবখান ব্রিজের টোল প্লাজায় টোলের টাকা পরিশোধ করছিল একটি প্রাইভেটকার। ঠিক সেই সময়ে ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেট কারসহ অন্য তিনটি ইজিবাইক ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মুহূর্তেই ঝরে যায় নারী শিশুসহ ১৪ জনের তাজা প্রাণ। সেই প্রাইভেট কারের চালক সহ ৭ জন আরোহী নিহত হন।
নিহতরা হলেন রাজাপুর উপজেলার উত্তর সাউথপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান (৩৩), তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার সোনিয়া (২৮), তাদের মেয়ে তাকিয়া আক্তার (৩), তাহমিদ রহমান (০১), সোনিয়ার সদ্য বিবাহিতা বোন উপজেলার সদর এলাকার নিপা আক্তার (২২) ও তার স্বামী বিমান বাহিনীর সদস্য ইমরান হোসেন (২৩) ও প্রাইভেট চালক উত্তর উত্তমপুর গ্রামের ইব্রাহিম(৩৫)। তারা প্রাইভেট কার নিয়ে বরিশাল যাচ্ছিলেন এবং সেখান থেকে কুয়াকাটা ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল।
উত্তর সাউথপুর গ্রামে একই পরিবারের ৪ জনের জানাজা হয় সকাল ১০ টায়। নিহত নিপা আক্তার ও তার স্বামী ইমরান হোসেনের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দুপুরের মধ্যে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে গাড়ি চালক ইব্রাহিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯ টায়। প্রত্যেকের জানাজায় ছিল হাজারও মানুষ ঢল।
এদিকে গাড়ি চালক ইব্রাহিমের বৃদ্ধ মা আক্ষেপ করে বলেন, ছেলে তার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছিল, মায়ের যত্নে ছিল খুব সচেতন। এখন কে তার যত্ন নেবে। কে দেখবে তার দুই শিশু সন্তানকে।
নিহত অন্যরা হলেন গাবখানের সেলিম হাওলাদারের ছেলে নজরুল (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের মান্নান মাঝির ছেলে শফিকুল মাঝি (৫০), ঝালকাঠির শেখের হাটের নওপাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে আতিকুর রহমান সাদি (১১), কাঁঠালিয়ার তালগাছিয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরজাহান (৭), স্ত্রী তাহমিনা (২৫), রাজাপুরের উত্তর সাউথপুরের হাসিবুর রহমানের স্ত্রী সনিয়া বেগম (৩০), স্বরূপকাঠির রুহুল আমীন ও টোল প্লাজার সামনের ভিক্ষুক শহিদুল ইসলাম (৪৫)।
নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, গাবখান সেতু টোল প্লাজার টোল ঘরটি দুরে সরিয়ে নেওয়া হোক অথবা টোল ঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হোক। এছাড়াও এ দুর্ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর বিচারের দাবি জানান তারা।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল শোকাহত কন্ঠে জানান, নিহতদের সকলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুর্ঘটনার চার ঘন্টার মধ্যেই আমরা ঘাতক ট্রাকের চালক আল আমিন ও হেলপার নাজমুলকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, দুর্ঘটনা তদন্তে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে