Views Bangladesh Logo

ভালো অনুবাদ না হওয়ার কারণে বাংলা কবিতার সম্ভাবনা বিনষ্ট হচ্ছে

বারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি ও কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হানের কাব্যগ্রন্থ ‘মূকাভিনেতার ডায়েরি’। তার ধারণা বাংলা কবিতা, পৃথিবীর অনেক ভালো কবিতার পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে; কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশ, নিজেদের অগোছালো ও অযৌক্তিক রেষারেষি, ভালো অনুবাদ না হওয়া- বিভিন্ন কারণে সব সম্ভাবনা বিনষ্ট হচ্ছে। ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাহফুজ সরদার

ভিউজ বাংলাদেশ: এবারের বইমেলায় আপনার কাব্যগ্রন্থ ‘মূকাভিনেতার ডায়েরি’ প্রকাশিত হয়েছে। এমন নাম কেন দিলেন?

রাসেল রায়হান: মূলত এই বই এমন একজনের লেখা কবিতা, যে স্বাভাবিকভাবে অন্য ‘আমজনতার’ ভাষায় কেবল খাওয়া, ঘোরাঘুরির গল্প, ছবি নিয়ে মেতে থাকেনি। আবার সরাসরি যে অনেক বিরূপ কথা বলতে পেরেছে বা প্রতিবাদ করতে পেরেছে সবকিছুতে, সব সময়- এমনটাও নয়। তাকে কথা বলতে হয়েছে ইশারায়, অভিব্যক্তিতে। অনেকটা মূকাভিনেতার ভূমিকায় নেমে যেতে হয়েছিল। এই ভূমিকায় থেকে প্রকাশ করতে হয়েছে নিজের বক্তব্যগুলোকে, দীর্ঘদিন ধরে। দিনের পর দিন বহু কৌশল নিতে হয়েছে। ডিজিটাল আইনের ভয় তো ছিলই। ফলে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে নিজের মতো একটি ভাষার। সেই ভাষায় নিজের আনন্দ আছে, বেদনা আছে, প্রেম-প্রতিবাদ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আছে; অন্যেরটাও আছে। ফলে এই বই এক অর্থে একজন মূকাভিনেতারই লেখা।

ভিউজ বাংলাদেশ: জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের কবিতায় কতটা প্রভাব ফেলেছে।

রাসেল রায়হান: যে কোনো বড় ঘটনাই কবিতায় প্রভাব ফেলে। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সবচেয়ে বড় ঘটনা। ফলে সেই প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই কবিতায় পড়েছে। পড়ার কথা ছিলই। এখন প্রায় সব কবিতাতেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জুলাই আসছে। সামনেও আসবে দীর্ঘদিন, হয়তো। এই প্রভাব সামগ্রিক অর্থে কবিতার জন্য ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক- সেটা সময়ই নির্ধারণ করবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: কোন চেতনা বা ভাবনা আপনাকে কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে।
রাসেল রায়হান: কবিতায় আমি তা-ই লিখি, যা আমি একটা ফেসবুক পোস্টে বা মুখের কথায় প্রকাশ করতে পারি না; পারলেও সেটার অভিঘাত চিরকালীন না হয়ে সাময়িক হবে। তবে আমার নিজস্ব কিছু আদর্শ আছে, চিন্তা আছে, ভাবনা আছে। কবিতা বা সাহিত্যের যে কোনো মাধ্যমেই আমি সেটা প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করি।

ভিউজ বাংলাদেশ: কবিতায় আপনি কী বলতে চান?

রাসেল রায়হান: কবিতায় আমি আমার নিজের কথাই বলতে চাই। তবে সেই কথাগুলো, যা আসলে সমগ্রের কথা। সমগ্রের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি। তবে কবিতা যে শেষপর্যন্ত একটা আর্ট, সেটা মাথায় নিয়েই লেখার চেষ্টা থাকে।

ভিউজ বাংলাদেশ: জীবনকে আপনি কীভাবে দেখেন?

রাসেল রায়হান: জীবনকে আমি সরলভাবে দেখতে চাই। প্রত্যেকের জীবন সুন্দর হতে পারে, যদি মানুষ চায়। সমস্যা হলো, মানুষ নিজের জীবনের দিকে সরাসরি তাকানোর চেয়ে অন্যের জীবনের দিকে বেশি তাকায়। অনেকটা আয়না দেখার মতো; কিন্তু আয়না যে আসলে মানুষকে উলটে দেখায়, সেটা মাথায় থাকে না। অন্যের জীবনের দিকে তাকালেও একই ব্যাপার ঘটে। মানুষ নিজের জীবন দেখার অবচেতন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অন্যের জীবনে তাকায় এবং সেই জীবন তাকে ভুল মেসেজ দেয়।

ভিউজ বাংলাদেশ: লেখকদের কতটা রাজনীতি সচেতন হওয়া দরকার?

রাসেল রায়হান: প্রতিটি মানুষেরই রাজনীতি-সচেতন হওয়া দরকার। লেখকদের (কিংবা যারাই অন্যকে প্রভাবিত করতে পারেন) তো প্রতিটা মুহূর্তেই রাজনীতি সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্পই নেই, যেহেতু তারা অন্যদের প্রভাবিত করেন। লেখকের অসচেতনতা অন্যদের ভুল পথে নেয়ার পথটা তৈরি করে দেয়।

ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশের তরুণ কবিরা বর্তমানে কোন ধরনের কবিতা রচনায় মনোযোগী হয়েছেন বলে আপনার মনে হয়?

রাসেল রায়হান: বর্তমানে তরুণ কবিদের বেশিরভাগই বোধের দিকে মনোযোগী। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাই পছন্দ করি। তবে অন্য আরও কয়েকটি অংশ আছে। সব অংশ মিলেই অবশ্য বৈচিত্র্য আনে।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনি কবিতার পাশাপাশি কথাসাহিত্যও রচনা করছেন। এর কারণ কী?

রাসেল রায়হান: আলাদা কোনো কারণই নেই সেভাবে। দুই মাধ্যমেই আমি স্বচ্ছন্দ, তাই দুই মাধ্যমেই আছি। কিংবা বলতে পারেন, দুই ধরনের লেখাই আমি লিখতে পারি বলেই লিখি। একটা পারলে এক মাধ্যমে থাকতাম। কোনোটাই না পারলে কোনোটাতেই থাকতাম না।

ভিউজ বাংলাদেশ: সমসাময়িক বাংলা কবিতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

রাসেল রায়হান: সমসাময়িক অনেক বাংলা কবিতা, আমার ধারণা, পৃথিবীর অনেক ভালো কবিতার পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে; কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশ, নিজেদের অগোছালো ও অযৌক্তিক রেষারেষি, ভালো অনুবাদ না হওয়া- বিভিন্ন কারণে সব সম্ভাবনা বিনষ্ট হচ্ছে। তবে তাতে তো আর ভালো কবিতা লেখা বন্ধ হবে না। নিশ্চয়ই সমকালে বহু বহু ভালো কবিতা লেখা হবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: বর্তমান সময়ের কবিতা পাঠকের কাছে ততটা পৌঁছায় না, এটা কী লেখক নাকি প্রকাশকের ব্যর্থতা?

রাসেল রায়হান: মুখ্যত দায় সমাজবাস্তবতার, গৌণত প্রকাশকের। লেখকের দায় কেন থাকবে? লেখকের কাজ নিজের মতো লেখা। হাজার হাজার বছর ধরে তা-ই হয়ে আসছে। ওই বাস্তবতার মধ্যেই পাঠক নিজের রুচিমতো সাহিত্য বেছে নিয়েছেন। এখন পাঠক যদি পড়ার উপযুক্ত না হন, পড়তে আনন্দ না পান, সাহিত্যকে মনের খোরাক মনে না করেন, বিকল্প অন্য মাধ্যমে পরিতৃপ্ত হন, তাতে লেখক-প্রকাশকদের কীই-বা করার থাকবে? কতটাই-বা থাকবে?

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ