মুনীম হোসেনের হাত ধরে এগিয়ে যাক বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞান বাংলাদেশে কেবল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের বিষয় হিসেবে পরিচিত। এর বাইরে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কোনো উচ্চতর গবেষণা বা চর্চা হয় বলে আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশে পরমাণু শক্তির কাজ কী, আমরা জানি না। বাংলাদেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর যেসব বড় বড় প্রকল্প হয়, যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শুনেছি সেখানেও সব কাজ করেছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। অন্য দিকে আমাদের দেশে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকেন, না-হয় বড় জোর শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
পদার্থবিজ্ঞান থেকে পড়াশোনা শেষ করেও অনেকে ব্যাংকে চাকরি করেন এমন নজিরও আছে। এহেন অবস্থায় বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রদের আশা জাগিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পদার্থবিদ মুনীম হোসেন রানা। গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তিনি সম্প্রতি সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ার ও ফটোস্ফিয়ার স্তরের ছবি তুলেছেন, যা একটি প্রায় অসম্ভব কাজ এবং তা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে মুনীমের তোলা ছবি।
সংবাদমাধ্যমকে মুনীম হোসেন বলেন, সূর্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা বেশ কম বলা যায়। সূর্যের কেন্দ্র বা কোরে পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া ঘটছে। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াই শক্তির মূল উৎস। এখানকার তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর আছে তেজস্ক্রিয় বা রেডিও অ্যাকটিভ জোন। এই স্তর কোরের ওপরে অবস্থিত। এখানে শক্তি ফোটনের আকারে বিকিরণ হিসেবে স্থানান্তরিত হয়। শক্তি কোর থেকে এই স্তরে চলে আসে ধীরে ধীরে। এরপরে আছে কনভেকটিভ জোন, ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার আর সর্বশেষ স্তরের নাম করোনা। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫ হাজার ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। আর কেন্দ্রে দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তাপমাত্রার কারণে সূর্যের ছবি তোলা বেশ কঠিন।
এই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন শৌখিন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার মুনীম হোসেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে তার অদম্য কৌতূহলের জন্য। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি সূর্যের পেছনে লেগে ছিলেন ক্যামেরা হাতে। অবশেষে গত ৬ নভেম্বর তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি তুলতে সক্ষম হন। এর জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন নেক্সটার ৮এসই কম্পিউটারাইজড টেলিস্কোপ। সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ার ও ফটোস্ফিয়ারের গভীরের ছবি তুলতে তিনি ৭০ মিলিমিটার অ্যাপারচার ও ৪০০ ফোকাল লেন্থের বিশেষ ধরনের সোলার টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন।
এটা নিশ্চয়ই একটা আশাজাগানিয়া খবর। আমাদের জন্য গর্বের। আমরা চাই, আমাদের দেশের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্ররা বিশ্বজগৎ সম্পর্কে আরও কৌতূহলী হয়ে উঠুক। তাদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতাও দেয়া হোক। রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ব্যয়বহুল স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়; কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ বিজ্ঞানের ছাত্রই নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাদের আজীবনের লক্ষ্য থাকে লেখাপড়া শেষ করে কোনোরকম একটা চাকরি। গবেষণার পেছনে সময় ব্যয় করার সময় ও সাধ্য তাদের থাকে না।
রাষ্ট্রেরও এ ক্ষেত্রে তেমন উৎসাহ নেই। এক সময় প্রতিটি বড় স্কুল-কলেজেই ল্যাবরেটরি থাকত। এখন তাও নেই। বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষাকে খুবই অবহেলা করা হয়েছে। আমরা চাই এ ধরনের মনোভাব দূর হোক। বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে গড়ে না উঠলে দেশে সাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশ করে। আমরা চাই, বিজ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশেও বিজ্ঞান নিয়ে অনেক বড় বড় গবেষণা হোক। একটা রাষ্ট্র যখন বিজ্ঞানমনষ্ক না হয়, তখন সেখান থেকে হঠাৎ কোনো বিজ্ঞানী, গবেষক বের হতে পারে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে