Views Bangladesh Logo

শতভাগ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তাব বাস্তবায়িত হোক

স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি উন্নত ও মানবিক সমাজ গঠনে স্বাস্থ্যসেবার সুলভ ও নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনো আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের জনগণ প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আর যারা পান, তাদের অনেককেই উচ্চ ব্যয়ের ভার বহন করতে হয়। এই পরিস্থিতি নিরসনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শতভাগ বিনামূল্যে করা এখন সময়ের দাবি। আশার কথা হলো, শতভাগ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৬ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। সংস্কার প্রতিবেদনে সরকারি হাসপাতালে সেবা বিকেল ৫টা পর্যন্ত করা, বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল তৈরি, স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য সার্ভিস গঠনসহ ৩২টি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সুপারিশগুলো প্রশংসিত হলেও কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়ত আকাশকুসুম কল্পনা। বিশেষ করে প্রতি রোগীর পেছনে অন্তত ১০ মিনিট সময় দেয়া বিনামূল্যে তো দূরের কথা, হাজার টাকা ভিজিটেও বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। সুপারিশে বলা হয়, দেশে ন্যায্য ও আর্থিকভাবে সুরক্ষিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ বিনামূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এর আওতায় মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, টিকাদান, সাধারণ রোগের চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধ ও সেবা সরকারি হাসপাতালে প্রদান করা হবে। এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ ও অস্ত্রোপচার সেবা রোগীরা বিনামূল্যে পাবেন। এটা চালু হলে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে ব্যক্তি পর্যায়ে খরচ কমবে।

এই মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের চাহিদা অনুযায়ী রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, যত্নসহ বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনো কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তবে তা অনেকটা কাগজ-কলমে। ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা; কিন্তু হাসপাতালে তা পাওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাযন্ত্র বছরের পর বছর অকেজো থাকে, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করা হয়। কমিশনের প্রস্তাব শতভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার। এজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে নিজের পকেট থেকে যাতে কোনো অর্থ খরচ করতে না হয়।

সুপারিশের অর্ধেকও যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলেও ধরে নিতে হবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। কারণ এখনও নামমাত্র যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায় তার সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের খুবই তিক্ত ধারণা আছে। দুচারটে কম দামি ওষুধ ছাড়া কোনোটাই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ দেয়া তো দূরের কথা, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক সরকারি হাসপাতালে এই সুযোগ নেই। তারপরও আমরা চাই সুপারিশগুলো যতটা সম্ভব শিগগির বাস্তবায়ন হোক। শতভাগ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সুশাসনের বিকল্প নেই। এটি একদিকে যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতে অর্থনৈতিক বৈষম্যও কমাবে। উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যেই এই মডেল অনুসরণ করে জনস্বাস্থ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশও পারবে, যদি আমরা আন্তরিকভাবে চাই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ