ডায়ালাইসিস চিকিৎসা সহজলভ্য করুন
ডায়ালাইসিস দীর্ঘমেয়াদি এক ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি। কিডনি একেবারে বিকল হয়ে গেলে, কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে অনেক রোগীকে সারাজীবন ধরেই এই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। রোগীর জন্য এটি একটি অত্যন্ত শারীরিক কষ্টদায়ক ব্যাপার। তার সঙ্গে যদি যোগ হয় মাত্রাতিরিক্ত খরচ, তাহলে সেই কষ্টের মাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা যায়, ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে ৯৩ শতাংশ রোগী আর্থিক সংকটে পড়েন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ চিত্র।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ডায়ালাইসিসের পেছনে দেশের একজন কিডনি রোগীকে মাসে সর্বনিম্ন ৬ হাজার ৬৯০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গড় ব্যয় ৪৬ হাজার ৪২৬ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৩৫ শতাংশের মতো খরচ হয় ডায়ালাইসিস ফি বাবদ। প্রায় ২৩ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধ বাবদ। সব মিলিয়ে হাসপাতালে খরচ মোট ব্যয়ের প্রায় ৭৯ শতাংশ। যাতায়াত, খাবার, থাকা, অনানুষ্ঠানিক (ঘুষ, বকশিশ) খরচ ইত্যাদির পেছনেও ব্যয় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় যাতায়াতে, মোট ব্যয়ের প্রায় ৯ শতাংশ।
এখন একটি নিম্নআয়ের পরিবারের কথা চিন্তা করুন। যে পরিবারের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা, সে পরিবার যদি শহরাঞ্চলে ভাড়া বাসায় থাকে, নিত্যদিনের খরচ মিটিয়ে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে ওই বাড়তি সাত-আট হাজার টাকা একজন ডায়ালাইসিস রোগীর পেছনে সে কীভাবে খরচ করবে? ডায়ালাইসিস চিকিৎসা সব হাসপাতালে নেইও, অনেক সময় দূর-দূরান্তরের বিশেষ হাসপাতালে যেতে হয়, এতে যে যাতায়াত খরচসহ অন্যান্য খরচ পড়ে, তাতে অনায়াসেই ব্যয় সর্বনিম্ন দশ-বারো হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। ফলে আর্থিক সংকট কতটা চরমে পৌঁছায় তা সহজেই অনুমেয়।
ব্যয় বাঁচাতে অনেক গরিব পরিবার রোগীর কম ডায়ালাইসিস করার, তার মানে তাতে রোগীর কষ্ট অনেক বাড়ে। জরিপ মতে, তাদের হার শতকরা ১৯ শতাংশ। কারণ হিসেবে তারা অনেক বেশি ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, মাসে মাসে বিপুল ব্যয়ের চাপ থেকে বাঁচতে অনেকে কিডনি প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালান। তখন তারা প্রতারকের খপ্পরেও পড়েন।
এনজিওভিত্তিক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা নেয়া খরচ কম হলেও তা আরও বেশি সময়সাপেক্ষ এবং ভোগান্তিরও বেশি। সব জায়গায় এনজিওভিত্তিক হাসপাতাল নেইও। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়েই সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালেই যেতে হয়। তাই আমরা বলতে চাই, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা আরও সহজলভ্য ও ব্যয়সাশ্রয় করা হোক। দেশে নানা কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে