Views Bangladesh Logo

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

বাংলাদেশের নারীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক

জ ৮ মার্চ, ২০২৫। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য- “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন”। যদি প্রতিপাদ্যগুলোর দিকে তাকাই তাহলে অনিবার্যভাবেই প্রশ্ন আসবে- আজ বাংলাদেশে নারীর অবস্থান কেমন? তার অধিকার কতটুকু? সমাজে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা হলো কতখানি? নারীর ক্ষমতায়নই-বা হলো কতদূর? কন্যার উন্নয়নে আমরা কী ভূমিকা রাখতে পারছি সমাজে-রাষ্ট্রে?

প্রশ্ন অনেক। তার উত্তর সব পাওয়া যাবে না। বরং অস্বস্তি তৈরি করবে কারও কারও মনে। কারণ বাংলাদেশে আজ নারীর মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে পদে পদে। নারী নির্যাতন বাড়ছে আতঙ্কিত হারে। বাড়ছে ধর্ষণের সংখ্যা। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত কয়েকদিনের সংবাদমাধ্যম বলছে, গত এক সপ্তাহেই কমপক্ষে ৩ শিশু ধর্ষিত হয়েছে। এ অবস্থায় কন্যার উন্নয়ন অতি জরুরিভাবেই দরকার; কিন্তু আশঙ্কাও সৃষ্টি করে মনে, এত সব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে নারী ও কন্যার জন্য কতদূর কী করতে পারব আমরা?

আজকের সমাজ-রাষ্ট্র নারী-বান্ধব নয়, বরং নারীর জন্য প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করছে প্রতি পদে পদে। বাংলাদেশের নারীরা এখনো শিকার হচ্ছেন পোশাক রাজনীতির। নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। বাল্যবিবাহ থেকে যৌতুক প্রথার শিকার হচ্ছেন নারীরা; ক্ষমতায়ন তো দূরের কথা আজকের বাংলাদেশে তো নারীদের মানবিক মর্যাদা নেই বললেই চলে। শিক্ষায়-কর্মে হয়তো অনেক নারী এগিয়ে গেছেন, বড় বড় পদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন; কিন্তু তা দিয়ে নারীর সামগ্রিক ক্ষমতায়নের বিষয়টি বোঝা যাবে না; বরং বুঝতে হলে যেতে হবে প্রান্তিক নারীদের কাছে; তাহলে দেখা যাবে এখনো নারী-পুরুষের আয়ের বৈষম্য সীমাহীন; এবং নারীরা সামাজিকভাবেই অবহেলা-বঞ্চনার শিকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি যেমন জরুরি, তেমনি শিক্ষায়-সংস্কৃতিতেও নারীকে এগিয়ে যেতে হবে এবং তার জন্য পুরুষকেও নারীর প্রতি সহনশীল হতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে; কারণ সমাজ আজও পুরুষতান্ত্রিক; এখানকার সংস্কৃতি-রাজনীতি-অর্থনীতি এখনো পুরুষতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নারীর ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন’ প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই এই পুরুষতন্ত্রের ক্ষমতাতন্ত্র ভাঙতে হবে সবার আগে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুরুটা হয় শ্রমিক আন্দোলন থেকে যা একসময় জাতিসংঘ স্বীকৃত বাৎসরিক দিবস হয়ে ওঠে। শুরুটা হয় ১৯০৮ সালে, যখন এক সঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার নারী নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমে আসে কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন বৃদ্ধি ও ভোটের অধিকারের দাবিতে। এর এক বছর পর সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা প্রথম জাতীয় নারী দিবসের ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে দেশে দেশে নারীরা অনেক অধিকারই পায়। তারা শিক্ষার অধিকার পায়, ভোটের অধিকার পায়, কর্মের অধিকার পায়, ক্ষমতায়নের অধিকার পায়; কিন্তু, এ-কথা আজও স্বীকার করতে হবে, অনেক দেশেই নারীদের এখনো মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার বাকি। এখনো নারীরা যেন দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক। এখনো অনেক দেশে নারীদের আড়াল করে রাখার রাজনীতি-সংস্কৃতি বিদ্যমান।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ অনেক পুরুষ আজও নারীর অবদান অস্বীকার করতে পারলেই পার পেয়ে যায়। এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য পুরুষকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে আপন অধিকার আদায়ের জন্য আরও শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে। আমরা চাই বাংলাদেশের নারীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বের সব নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ