নতুন শ্রমবাজারের বিকল্প নেই
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। অধিক বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায়। এসব প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপিও বৃদ্ধি পায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো খবর রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহে ফের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রবাসীরা তাদের দেশে থাকা স্বজনদের জন্য বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা জুন মাসের প্রথম ১৪ দিনে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন, যা দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা ধরে) ১৯ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঈদের সময় দৈনিক রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯১ কোটি টাকার বেশি, যা দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ বার্তা।
মূলত বাংলাদেশি কর্মীদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য সৌদি আরব। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোয় প্রবাসী কর্মীদের সংখ্যা বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, রেমিট্যান্সের সিংহভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটিতে শ্রমবাজার বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, উপসাগরীয় দেশগুলোয় ভারত, মেক্সিকো, রাশিয়া ও চীন প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক পাঠাচ্ছে। যার ফলে দক্ষতা ও যোগ্যতার মানদণ্ডে প্রতিযোগিতা করে টিকতে হচ্ছে বাংলাদেশি কর্মীদের।
অন্যদিকে বেকার যুবকদের একটা অংশ বিদেশ যাওয়ার মোহে অসাধু দালালের খপ্পরে প্রায়ই পড়েন। তাই কাঙ্ক্ষিত দেশে যাওয়ার আগে সে দেশের ভাষা, সংস্কৃতি জেনে ও সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ হয়ে যেতে হবে। এতে আয়ও ভালো আসবে। অনেকে অবৈধভাবে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকেন, কেউ কেউ লাশ হন, নিখোঁজ হন। আবার তীরে পৌঁছলেও অভিবাসন পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। পরে তারা মাদক বহন, মানব পাচার ও পতিতাবৃত্তির মতো অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
আবার অনেকে নির্দিষ্ট কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিদেশে গেলেও সেখানে পৌঁছে ওই কাজ ছেড়ে দিয়ে আরেক দেশে অন্য কাজে চলে যান। এতে নিজ দেশের বদনাম হয়। সরকারকে দালালনির্ভর অভিবাসন প্রক্রিয়া পুরোপুরি রোধ করে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে হবে। সেইসঙ্গে যোগ্য ও সৎ শ্রমিক বেছে নিতে হবে। তাহলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সে জন্য আমরা কর্মীদের জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে