Views Bangladesh Logo

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত

যুদ্ধ না, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ‘প্রতিক্রিয়া’ স্বরূপ ৬ মে গভীর রাতে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠছে, যা শুধু এশিয়া-দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বকেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। দুটিই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ এবং এই দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ সংঘটিত হলে তা যেমন একদিকে অসংখ্য মানুষের প্রাণনাশের কারণ হবে অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতিতেও তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

গতকাল বুধবার (৭ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ভারত গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ভারতের এই হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন বলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র থেকে জানানো হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কিশোর ও শিশুও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সীটি ছিল তিন বছর।

পেহেলগামে নিহত ২৬ পর্যটকও ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। তার মানে এসব পাল্টাপাল্টি সংঘাতে কেবল বেসামরিক নাগরিকরাই মারা যাচ্ছেন। তাহলে কার বা কোন গোষ্ঠীর স্বার্থে ও উসকানিতে এসব যুদ্ধ-হানাহানি সংঘাত চলছে? বেসামরিক নাগরিকরা কখনোই যুদ্ধ চায় না। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে এসব যুদ্ধ-হানাহানির পেছনে রাজনৈতিক উসকানিই মূলত দায়ী। মানুষের জীবন নিয়ে এ ধরনের রাজনীতি চলতে পারে না।

আমরা জানি ভারত-পাকিস্তান দুই প্রতিবেশী দেশ, এবং এই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস আছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনা দুটি দেশকে একটি বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে; কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যদি কোনো দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত সংঘটিত হয়, তা শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং আশপাশের দেশগুলোকেও এই যুদ্ধ প্রভাবিত করবে এবং অস্থির করে তুলবে।

আমরা জানি দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হলে শক্তিশালী কিছু দেশ লাভবান হয়, আর যুদ্ধাক্রান্ত এবং আশপাশের দুর্বল ও ছোট দেশগুলোকেই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তানের চলমান সংঘাতে বাংলাদেশেরও প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। এবং অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে নিরপেক্ষ ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত অঞ্চলে কড়া নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি কোনো কূটনৈতিক চালেও যেন বাংলাদেশ না পড়ে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এই সংঘাতকে ঘিরে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিক্রিয়া মিলেছে। ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। উভয়পক্ষকেই তারা শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারও গতকাল বুধবার (৭ মে) দুপুরে এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় চলমান উত্তেজনা কমে শান্তি বিরাজ করবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ। যুদ্ধ না, আমরা চাই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশজুড়ে গতকাল অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আহ্বান জানিয়েছেন। শান্তির এই আহ্বান সারা পৃথিবীর মানুষের।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ