বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তা এখনো কেউ ছুঁতে পারেনি: শর্মিলা ঠাকুর
গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ লাউঞ্জ সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ছিল পূর্ণ। অপেক্ষা, কখন আসবেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। সেই অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে স্মিত হাসি ছড়িয়ে নির্ধারিত সময়েই হাজির হলেন তিনি। কালো কুর্তির ওপর চেক রঙের মাফলার চাপিয়ে আবৃত করেছিলেন নিজেকে। সেই পোশাকের সঙ্গে পায়ে ছিল মানানসই কালো রঙের বুট। কুশল বিনিময় শেষে মঞ্চে উঠলেন। গণমাধ্যমের ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নের জবাবের পাশাপাশি নিজ থেকেও বলেছেন চলচ্চিত্রসহ জীবনের নানা বিষয়ে। সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভূতি, উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয়ের সুখস্মৃতি, ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের সিনেমা দেখাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। ‘প্রেস মিট উইথ শর্মিলা ঠাকুর’ শীর্ষক প্রাণবন্ত অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন খ্যাতিমান অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, ‘মাত্র ১৩ বছর বয়সে মানিকদা (সত্যজিৎ রায়) আমাকে ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় ছবিতে আমার অভিনয়ের ব্যাপারে পরিবার আগ্রহী ছিল না। শেষ পর্যন্ত মানিকদাই ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে আমার পরিবারকে রাজি করিয়েছিলেন। তিনি যদি সেটা না করতেন, তাহলে আমার চলচ্চিত্রে আসা হতো না। তখন হয়তো আমি শান্তিনিকেতনে পড়তাম এবং তারপর অন্য কোনো পেশায় জড়িয়ে যেতাম। আর প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই প্রশংসিত হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আমাকে স্ট্রাগল করতে হয়নি। এটা আমার অভিনয়জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভূতির বিষয়ে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, ‘অনেক ব্যস্ততার মাঝে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিংয়ের ফাঁকে তিনি সময় দিয়েছেন। মন খুলে আলাপ করেছেন। উৎসাহ নিয়ে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। পরদিন আবার সেই ছবি আমাকে পাঠিয়েও দিয়েছেন। এমনকি এর আগে আমি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতে এখানে এসেছিলাম, সে কথাও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাকে খুব সহজ মানুষ মনে হয়েছে। অমায়িক আচার-ব্যবহারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে তাকে সাধারণ মানুষ মনে হয়েছে। এ কারণে আমার কাছে তাকে আপনজন মনে হয়েছে। সুন্দর সময় কেটেছে তার সঙ্গে। নানা কথার মাঝে এই চলচ্চিত্র উৎসব নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার আচরণে আমি মুগ্ধ হয়েছি’
উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, “সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রের সূত্র ধরে আমার ও সৌমিত্রের ক্যারিয়ার শুরু হয়। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। সম্পর্কটা ছিল খুব সহজ-সরল। এ কারণে এখনো তাকে মিস করি। অন্যদিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল ফরমাল। শুরু থেকেই তাকে শ্রদ্ধা করতাম। এখনো করি। কারণ বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে এখনো কেউ ছুঁতে পারেনি।”
সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমালোচনা আমাকে আক্রান্ত করেনি। আমাকে নিয়ে অনেক কিছু লেখালেখি হতো, তখন আমার খুব খারাপ লাগত। তখন আমি ভাবলাম, পড়ছি কেন? ম্যাগাজিনগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিলাম। এটা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। সমালোচনা তো হবেই। সারা যখন ছবি শুরু করল, ওকে কেউ কিছু বললেই ও কেঁদে ফেলত। ওকে বললাম, ‘মানুষ কী বলছে সেটাকে মেনে নাও। ভালো কিছু হলে শিখতে পারো, ভালো কিছু না হলে এড়িয়ে যাও।’
বাংলাদেশের সিনেমা প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, “ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে ১৫টি চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে জয়া আহসান অভিনীত ‘ফেরেশতে’ নামের ছবিটি দেখে ভালো লেগেছে। ওই ছবিতে জয়া আহসানের অভিনয় ভালো লেগেছে। তার অভিনয় দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
ঢাকা সফরের অনুভূতি-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শর্মিলা বলেন, ‘এখানে আমাকে দারুণভাবে আপ্যায়ন করা হয়েছে। প্রচুর মজাদার খাবার খেয়েছি। যখন যা চেয়েছি, সেটাই হাজির করা হয়েছে। ফলে নিজেকে ভিআইপি মনে হয়েছে। অন্যদিকে আবার এই শহরে অনেক বেশি গাড়ির চাপে ট্রাফিক জ্যামে পড়তে হয়েছে। তাই অনেক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তবে কবিতার প্রতি অনুরাগ থাকায় সময় করে কিছু কাব্যগ্রন্থ সংগ্রহ করেছি। একটি কাব্য সংকলন উপহারও পেয়েছি।’
জীবনসঙ্গী মনসুর আলী খান পতৌদির বিষয়ে শর্মিলা বলেন, ‘নবাবের না থাকার শূন্যতা আমি কখনো অনুভব করি না। কারণ আমি মনে করি না যে সে নেই। শরীরীভাবে না থাকলেও মানসিকভাবে সে মিশে আছে আমার সঙ্গে। তার সঙ্গে আমার পরিচয়-প্রণয়সহ আমাদের পরিবারের নানা বিষয় নিয়ে একটি বায়োগ্রাফি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে