Views Bangladesh Logo

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকান

রকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বর্তমানে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। প্রতি বছর গড়ে জন্ম হচ্ছে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর। ফলে এমনিতেও রোহিঙ্গা সংখ্যা বাড়ছে; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন করে অনুপ্রবেশ। নিরাপত্তার অভাবে প্রতি মাসেই অসংখ্য রোহিঙ্গা মিয়ানমার, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, যাদের সংখ্যাটা থেকে যাচ্ছে অজানা। এর মধ্যে রোববার (২ মার্চ) সংবাদমাধ্যমের প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বাধার পরও ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে, যা দেশের জন্য উদ্বেগজনক!

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নীতিগত অনুমতি না থাকলেও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বিভিন্নভাবে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা গ্রহণ করতে হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও প্রায় একইরকম বিবৃতি দিয়েছেন, অনেক সময় মানবিক কারণে বাধা দেয়া যায় না। সঙ্গে বিদেশিদের একটা চাপ থাকে। এ জন্য আমরাও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা বাড়াতে বলেছি। আর এটাও তো ঠিক, যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটা জায়গায় আটকা।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডিকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে দিল্লি ও এর আশপাশে বাস করা ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ ও রোহিঙ্গাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে আবারও হুমকি দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ জন্য এরই মধ্যে দিল্লি পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা সংকট কি আসলেই সমাধান হবে না কি এভাবেই চলতে থাকবে বছরের পর বছর। বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটি কার হবে- মিয়ানমার না কি আরাকান আর্মির, তা বলা মুশকিল। বিজিবি তাই উভয়পক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। বিজিপি যদিও বলছে, ‘আমাদের সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত। এখানে কোনো সমস্যা নেই’; কিন্তু আমরা দেখছি প্রতি মাসে নতুন নতুন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ চলছেই, তার সঙ্গে অবৈধ পথে আসছে চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য।

রোহিঙ্গা সংকটের প্রধান ভুক্তভোগীই বাংলাদেশ। এমনিতেই বাংলাদেশ ছোট দেশ, ঘনবসতির দেশ; এর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যুক্ত হওয়ায় তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও কমে আসছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে। ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে তৈরি হয়েছে ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়। আমরা চাই বর্তমান সরকার কেবল আগের সরকারের মতো কথার কথা বলে আমাদের সান্ত্বনা না দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাস্তব পদক্ষেপ নেবে। আগের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি নতুন অনুপ্রবেশ ঠেকাবে।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের রাখাইন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে হবে। যতদিন রোহিঙ্গারা ফিরে না যাচ্ছে, ততদিন ওই সব ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে যথাযথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ