বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষার খরচ কমান
দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংখ্যাও তুলনায় কম। ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে নির্ভর করতে হয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর; কিন্তু দফায় দফায় বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাবিষয়ক পড়াশোনার খরচ বাড়ছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছিল ২০ শতাংশ। এবার অধিভুক্ত ফি বাড়ানো হচ্ছে ছয় গুণ, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রোববার (১৪ জুলাই) সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি অধিভুক্তি ও নবায়ন ফি পুনর্নির্ধারণ করেছে। এ পটভূমিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ইচ্ছামাফিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে অভিভাবকের ওপর খরচের বোঝা চাপাচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের অধিভুক্তি খরচ ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
নবায়ন খরচ করা হয়েছে ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। হোমিওপ্যাথিক ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের অধিভুক্তি খরচ আগে ছিল ৫০ হাজার টাকা; ছয় গুণ বাড়িয়ে এখন করা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। একই সঙ্গে নবায়ন খরচ ছয় গুণ বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়েছে। নার্সিং কলেজে অধিভুক্তি খরচ ৫০ হাজার থেকে ছয় গুণ বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ফিজিওথেরাপি, রিহ্যাবিলিটেশন, হেলথ টেকনোলজি, চিকিৎসা প্রকৌশল কোর্স পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিভুক্তি ও নবায়ন খরচও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি নির্ধারণে এখনো সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই।
দুর্বল তদারকির কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন টিউশন ফি নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত অভিভাবকরা। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বেরোতে একজন শিক্ষার্থীর শুধু পড়ার খরচই পড়বে ৩০ লাখ টাকার ওপর। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৩০ লাখ টাকা খরচ করার পর ওই শিক্ষার্থী যখন ডাক্তার হবেন তখন ওই টাকাটা তিনি কত বছরে আয় করবেন? আর কার কাছ থেকেই-বা আয় করবেন? নিশ্চিতভাবেই রোগীর কাছ থেকেই।
চিকিৎসা সেবামূলক পেশা; কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা যে লাভজনক পেশাও- এতে কারও দ্বিমত নেই। এ কারণেই প্রচুর টাকা খরচ করে হলেও অনেক পরিবার ছেলেমেয়েদের ডাক্তার বানাতে চান। ডাক্তার হয়ে সেই টাকাটা পরে সুদে-আসলে আদায় করা হয় রোগীর কাছ থেকে। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার এটা এক অরাজক দিক।
তাই আমরা চাই, প্রথমে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা শিক্ষার খরচ কমানো হোক। চিকিৎসক হতে কোনো শিক্ষার্থীকে যেন বাড়তি চাপ না নিতে হয়, যাতে তা পরে রোগীর ওপর চাপ ফেলে। বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা শিক্ষা খরচ না কমলে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসাব্যবস্থার তেমন উন্নতি হবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে