Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পোশাক কারখানার নৈরাজ্য দ্রুত সমাধান করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-বিক্ষোভ চলছে গাজীপুর অঞ্চলে। বেতন বকেয়া রাখার কারণেই শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ-আন্দোলন। এর মধ্যে কয়েকটি কারখানা বকেয়া বেতন চুকিয়ে দিয়ে কারখানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেছে।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই মাসের বেতন বকেয়া রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য পোশাক কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন একটি কারখানার শ্রমিকরা।

বেতন বকেয়া রেখে কীভাবে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়? গত দুমাস যেসব শ্রমিক বেতন পাননি তারা তাহলে এখন খাবেন কী? কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও নিশ্চয়ই মালিকপক্ষের দুবছর খেয়ে-পরে টিকে থাকার সক্ষমতা থাকে; কিন্তু আমরা জানি কারখানার শ্রমিকরা প্রায় দিন এনে দিনে খায়। এক মাসের বেতন না পেলেই তাদের সংসারে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। সেখানে দুমাসের বেতন বকেয়া, তার ওপর কাজ হারানোর অনিশ্চয়তা, তারা এখন যাবেন কোথায়?

পোশাক কারখানাটির নাম এইচডিএফ অ্যাপারেলস। মূল ফটকের সামনে কারখানাটি বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে, সেখানে লেখা- ‘গত ১২ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকরা অযৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া তারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বেতন ও হাজিরা বোনাস পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। গত দুই দিন ধরে বকেয়া বেতনের দাবি করে আসছিলেন শ্রমিকরা। আজ সকালে কারখানার ফটকে বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। এতে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে তারা কারখানা ফটকের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।

এতে করে ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে। আঞ্চলিক সড়কটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় সেখানেও যানজটের প্রভাব পড়েছে। এ বিষয়ে এইচডিএফ অ্যাপারেলস কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। ভেতর থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। কারখানাটির মূল ফটক খোলা হচ্ছিল না। ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’

এখানে কয়েকটা বিশৃঙ্খল ব্যাপারই চোখে পড়ছে। প্রথম কথা, বেতন-ভাতা ক্লিয়ার থাকলে শ্রমিকরা অযৌক্তিক দাবি কেন করবেন? দ্বিতীয় কথা, মালিকপক্ষের কোনো দোষ না থাকলে আইনি সহযোগিতা না নিয়ে তারা কারখানা বন্ধের হুমকি কেন দেবেন? আর পুলিশই-বা কেন শ্রমিকদের বোঝাতে যাবেন? এখানে বোঝানোর কী আছে? বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কী করছে!

কেন এই সমস্যাটা এত দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রাখা হচ্ছে? এতে করে অর্থনীতির ওপর যেমন চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ঘোলাটে হচ্ছে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের জনগনের ভোগান্তি তো চরমে। যানজটের কারণে এখন গাজীপুরের দিয়ে আসা-যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা কি চলতেই থাকবে একের পর এক কারখানায়? আমাদের পোশাক শিল্পের ভঙ্গুর দশাই কিন্তু এতে ফুটে উঠবে। তাই আমরা চাই মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ এবং সরকারের সহযোগিতায় এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ