লাশবাহী গাড়িতে ডাকাতি: এ কেমন বাংলাদেশ
সমাজে-রাষ্ট্রে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সেসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সম্পাদকীয় লেখা হয়। সরকার ও জনগণকে সতর্কবার্তা দেয়া হয় এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে; কিন্তু বাংলাদেশে এখন লাশবাহী গাড়িতেও ডাকাতি হচ্ছে- এ নিয়ে কার উদ্দেশ্যে কী বলা যেতে পারে? একটা দেশের আত্মা কতটা দূষিত হয়ে গেলে সে দেশের মানুষ এরকম হীন কাজ করতে পারে! ডাকাতি থেকে রক্ষা পায় না লাশবাহী গাড়িও। মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে, ডাকাতি করতে গিয়ে ডাকাতরা লাশের গায়েও আঘাত করেছে।
গতকাল শনিবার (২৪ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে গাছ ফেলে হামলা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে অ্যাম্বুলেন্সটির গতিরোধ করে মুখোশধারী ডাকাত দল। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া মুকবুলপুর গ্রামের ছবদর আলীর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সটিতে নেয়া হচ্ছিল।
লাশবাহী গাড়িটিতে থাকা আত্মীয়স্বজনদের ওপর দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ১০-১৫ জনের ডাকাত দল। তারা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে এবং এক নারীসহ ৯ জনকে পিটিয়ে আহত করে। এমনকি মরদেহের ওপর থেকে কাফনের কাপড় সরিয়ে মৃত ব্যক্তির পা তুলে দেখে টাকা বা মূল্যবান কিছু লুকানো হয়েছে কি না। ডাকাতরা অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ যাত্রীদের কাছ থেকে অন্তত ১০টি মুঠোফোন ও ৫০ হাজার টাকার বেশি লুট করে।
এ ঘটনায় নিহত ছবদর আলীর বড় ছেলে ও পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আলমগীর মিয়া বাদী হয়ে নাসিরনগর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৩-১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। অপরাধীদের না-হয় আটক করা হলো; কিন্তু কেন তাদের এমন পাশবিক পরিণত হলো তার কারণটিও খতিয়ে দেখা দরকার। ঘটনাটির ‘অপরাধ মনস্তত্ত্ব’ অন্বেষণের দাবি রাখে।
মৃতমানুষের প্রতি সবারই একটা স্বাভাবিক শ্রদ্ধাবোধ থাকে। আজ তাও হারিয়েছে কিছু মানুষ। বাংলাদেশে আজ এমন অনেক ধরনের ঘটনা ঘটছে যার ‘অপরাধপ্রবণতা’ নিয়ে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় শোকসন্তপ্ত পরিবারটির কী অবস্থা হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। তাই এ ঘটনাটিকে নিছক ডাকাতির ঘটনা হিসেবে না দেখে সামাজিক অবক্ষয়ের এক নিষ্ঠুর চিত্র হিসেবে দেখে তা নিয়ে উপযুক্ত গবেষণা ও বিচার জরুরি।
কোনো ঘটনাই সমাজ-বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনাকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আজ যে নৈতিক অবক্ষয় চলছে, আইনশৃঙ্খলার অরাজক পরিস্থিতি চলছে এটা তারই ধারাবাহিকতা। আমরা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে