Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ভূমিমাইন থেকে মানুষকে বাঁচান

মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি বাংলাদেশে শুধু বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা ঠেলে দিয়ে বসে থাকেনি, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে তারা পুঁতে রেখেছে বিপুলসংখ্যক ভূমিমাইন, যাতে এই রোহিঙ্গারা আর মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে- এমনই সন্দেহ পোষণ করছেন বাংলাদেশের মিয়ানমারের সিটওয়েতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান। গতকাল শনিবার (৩ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রায়ই মাইন ও আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে হতাহত হচ্ছেন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান এক তরুণ। বিস্ফোরণের ঘটনা বেশি ঘটেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায়। মাইন বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পঙ্গু হয়ে গেছেন। জীবিকা হারিয়ে অনেকেরই এখন দুর্বিষহ জীবন। চিকিৎসা ব্যয়সহ নানা খরচ সামাল দিতে হতাহতদের পরিবারও অনেকটা নিঃস্ব।

মিয়ানমারে দেশটির সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাতে ব্যাপক হারে প্রাণঘাতী ভূমিমাইন ও গোলাবারুদ ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজ্যটির বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বান্দরবান ও কক্সবাজার অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমানা রয়েছে ২৭১ কিলোমিটারের মতো। অভিযোগ উঠেছে, আরাকান আর্মিও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ব্যাপক হারে মাইন পুঁতে রেখেছে, যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। মূলত আরকান আর্মির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র দলের সদস্যদের ঠেকাতেই মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মতো আরাকান আর্মিও সীমান্ত এলাকায় মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু ব্যান ল্যান্ডমাইনসের (আইসিবিএল) ‘ল্যান্ডমাইন মনিটর ২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যে জানা যায়, ভূমিমাইনে বিশ্বে যেসব দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মিয়ানমার। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূমিমাইন ও বিস্ফোরক ধারণকারী গোলাবারুদের আঘাতে ২০২৩ সালে মিয়ানমারে এক হাজার তিনজন হতাহত হয়েছেন। একই সময়ে সিরিয়ায় হতাহত হয়েছেন ৯৩৩ জন। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি হয়। ভূমিমাইন তৈরি, ব্যবহার ও মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই চুক্তিতে। যেসব দেশ এই চুক্তিতে সই করেনি মিয়ানমার তার মধ্যে একটি।

এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার কারণে বাংলাদেশিরাও মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছেন। আহত হয়ে অনেকে মাসাধিকাল ধরে হাসপাতালে পড়ে আছেন। তাদের চিকিৎসার অর্থও নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সীমান্তের কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে কীভাবে বাংলাদেশিরা শূন্যরেখার ওপারে যান? নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের মতো। সব স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। বিজিবির টহল দলকে ফাঁকি দিয়ে তাই অনেকেই মিয়ানমারের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারাই মাইন বিস্ফোরণে আহত হচ্ছেন। ইউএনও আরও বলেন, যারা হতাহত হচ্ছেন বেশিরভাগই চোরাকারবারি। কেউ যাতে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে জীবনঝুঁকিতে না পড়েন, সে বিষয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি সীমান্তে কড়া নিরাপত্তাও জরুরি। তার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিমাইন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ ও নিষ্ক্রিয়করণ প্রক্রিয়াও জরুরি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে এখনই জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা আরও বাড়বে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ