Views Bangladesh Logo

অর্থবছরের দ্বিতীয় ষাণ্মাসিক মুদ্রানীতি হবে চ্যালেঞ্জিং

M A  Khaleque

এম এ খালেক

ন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাঁচ মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্যের লক্ষণ দৃশ্যমান হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতির চেয়ে রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বেশি সময় ব্যয় করছে। নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রস্তাবিত মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২২ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই মুদ্রানীতি অনুমোদিত হবে এবং তারপর তা প্রকাশ করা হবে। এটি হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই প্রথম মুদ্রানীতি। নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ অন্যতম। তবে এ দুটি উদ্যোগ আরও আগেই গ্রহণ করা উচিত ছিল। আগে যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন তিনি এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে অর্থনীতির গতিপথ মন্থর এবং উল্টোমুখী হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিকট অতীতে যতগুলো মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তার কোনোটিই প্রস্তাবিত মুদ্রানীতির মতো এতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল না। যদিও বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সবসময়ই কঠিন একটি কাজ।

প্রস্তাবিত মুদ্রানীতিতে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানো এবং গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাটাই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতির মাঝে সমন্বয় সাধন করা খুবই জরুরি; কিন্তু সেই সমন্বয় কীভাবে করা হবে সেটাই বড় প্রশ্ন। কারণ সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূসকের হার দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রত্যাশা করছে, এতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বাংলাদেশের অনুকূলে যে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে সেই ঋণের কিস্তি ছাড় করানোর অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাজস্ব আহরণের হার বাড়াতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূলত আইএমএফের পরামর্শ বাস্তবায়নের জন্যই এই মুহূর্তে বিভিন্ন পণ্যের ওপর করহার বাড়িয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে করহার বাড়ানোর ফলে শুধু ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগই বাড়বে কর আদায় খুব একটা বৃদ্ধি পাবে না। কারণ কর আদায় ব্যবস্থায় দুর্নীতি বিদ্যমান। এই দুর্নীতি রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কোনোভাবেই কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে না। বরং উচ্চ হারে কর দিতে অপারগ ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবে মাত্র।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এবং সেকেলে ধরনের। ফলে করদাতারা কর প্রদানের পরিবর্তে কর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাই বেশি করেন। প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় কোনো বছরই তা অর্জিত হয় না। অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাজস্ব আহরণ করতে না পারার কারণে উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য বিদেশি ঋণ গ্রহণের প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন আগের হিসাব মতে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে গেছে। অবস্থা এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি ঋণগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত হবে। আমাদের উন্নয়নের নানা কল্পকাহিনি শোনানো হলেও তার বেশিরভাগই ছিল রূপকথার কাহিনির মতো। একটি দেশের উন্নয়ন কতটা হচ্ছে তা বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়। এর মধ্যে একটি সূচক হচ্ছে দেশটির উন্নয়ন অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস কতটা অবদান রাখছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য মূলত রাজস্ব আহরণের ওপরই জোর দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র শ্রীলংকাই ট্যাক্স-জিডিপি রেশিওতে বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৫০। আর শ্রীলংকার ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে জাপানের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৩৪ দশমিক ০১ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩২ শতাংশ, চীনে ২০ দশমিক ০১ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১৯ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১২ দশমিক ২ শতাংশ, ভুটানে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ১০ শতাংশ। কাজেই আমাদের অবস্থান কোথায় তা সহজেই অনুমেয়। এত নিম্নমাত্রার ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও নিয়ে একটি দেশ নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের চিন্তা করতে পারে না। বিগত সরকার তাই উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। বিদেশি ঋণনির্ভর উন্নয়ন কৌশলের সুবিধা হচ্ছে এতে জবাবদিহির প্রশ্ন থাকে গৌণ এবং উন্নয়নের নামে ব্যয়িত অর্থ আত্মসাতের সুযোগ থাকে বেশি।

চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে তার সঙ্গে মুদ্রানীতিতে সঙ্গতি সাধন করা খুবই কঠিন হবে। কাজেই মুদ্রানীতি বাস্তবসম্মত করতে হলে অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্জনযোগ্য নয়। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হবে। গত কোয়ার্টারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২ শতাংশেরও কম। আগামীতে অবস্থার খুব একটা উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা করা যায় না।

অনেকদিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২২/২৩ শতাংশে উঠানামা করছে। কোনোভাবেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অনুপাত বাড়ানো যাচ্ছে না। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় না নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই অর্জনযোগ্য নয়। গত ৬ মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা বিগত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ব্যাপকভাবে। এই অবস্থায় কি করে জিডিপির ২৭ শতাংশ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হবে? মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা ব্যতীত কোনো গত্যন্তর নেই। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হলে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। আর উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে দারিদ্র্য বিমোচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

দেশের ব্যাংকিং সেক্টর বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অন্তত ৩০টি ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংক যে কোনো সময় মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। সরকার চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হবে না। কারণ অধিকাংশ ব্যাংকই এখন তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বিনিয়োগ চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগে বলেছিল, নোট ছেপে ব্যাংকের তারল্য সংকট মেটানো হবে না। কিন্তু কিছুদিন আগে সেই অঙ্গীকার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সরে এসেছে এবং সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার নোট ছেপে সমস্যাগ্রস্ত কয়েকটি ব্যাংককে তারল্যের জোগান দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নোট ছেপে ব্যাংকিং সেক্টরে দিলে বাজার তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে। বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট বাড়ানো হয়েছে। তিন বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ। এখন তা ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগে পলিসি রেট বাড়ানো হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে ক্যাপ করে রাখা হয়েছিল। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ তুলনামূলক সহজ হয়ে পড়েছিল। এমন কি ব্যাংক ঋণের সুদের বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির হারের চেয়েও কম ছিল। ফলে সরকারের অনুগত একশ্রেণির ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। এমনকি বিদেশেও পাচার করেছেন। ব্যাংক ঋণের সুদের বাজারভিত্তিক করার ফলে এখন তা বেড়ে ১৬/১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও পলিসি রেট বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিই ডেকে আনবে।

দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা দেখানো হলেও এর পরিমাণ আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, অবলোপনকৃত ঋণ, পুনঃতফসিলিকৃত ঋণ এবং মামলাধীন প্রকল্পের কাছে দাবিকৃত ঋণ একত্রিত করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমেটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একটানা শাসনামলে দেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে লেনদেনকৃত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেটা বিবেচ্য বটে। যদিও এটা মুদ্রানীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহে বেশি গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল থাকা। এর আগে বিগত সরকারের আমলে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকায় নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। সেই সময় কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলার ১২০/ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রার বেশি অর্থ পাওয়ার প্রত্যাশায় হুন্ডির মাধ্যমে তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করতেন। কিছু দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ফলে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৭ টাকায় উন্নীত হয়। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার আরও উদারীকরণ তথা বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটা করা হলে প্রবাসী আয় অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি পণ্য রাপ্তানি আয় তাৎক্ষণিকভাবে দেশে আসার প্রবণতা বাড়বে। বর্তমানে পণ্য রপ্তানি বাবদ যে আয় হচ্ছে তার পুরোটা তাৎক্ষণিকভাবে দেশে আসছে না। ধীরে ধীরে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক করার প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিদেশে ব্যবসায়রত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো যাতে প্রবাসীদের আবাসস্থলে গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারে তার উদ্যোগ নিতে হবে। উল্লেখ্য, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবাসস্থলে গিয়ে সরাসরি রেমিট্যান্স আহরণ করে থাকে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান যে অবস্থা চলছে তাতে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আবেগের পরিবর্তে বাস্তবতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে তা যেন সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মিথ্যাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার চেয়ে সত্যকে ধারণ করে ডুবে যাওয়াও ভালো। কোনোভাবেই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক সাফল্য প্রদর্শনের মাঝে কোনো কৃতিত্ব নেই। মুদ্রানীতি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যা সময়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়।

এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।    

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ