Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

তরুণের মৃত্যু: ডিবির অভিযানে প্রেমিকার পরিবারের সদস্য থাকার দাবি

Nazrul  Islam

নজরুল ইসলাম

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

য়মনসিংহে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের পর ফয়সাল খান শুভ নামের এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে তার পরিবার। স্বজনদের অভিযোগ, শুভর প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা ডিবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাঁচতলা থেকে ফেলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি করেছে।

স্বজনরা বলছেন, হত্যার দুই-তিনদিন আগে শুভ’র প্রেমিকার পরিবারের সদস্যদের বাসার আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার না করায় বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা।

সরেজমিনে ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দায় বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিল্প নগরীর পূর্ব পাশে বিলের ভিতরে একটি পাঁচতলা বাসা। বাসার দক্ষিণে বিল, পূর্ব পাশে বাউন্ডারি করা খালি জায়গা। সেখানেই ফয়সাল খান শুভকে ‘ফেলে’ দেওয়া হয়।

তবে ডিবি দাবি করেছে, ওইদিন অভিযানে শুভকে বাসায় না পেয়ে তারা ফিরে আসে। ঘটনাটি নিয়ে নগরীতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘শুভ’র মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি আছে কি-না সেই লক্ষ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রামই অ্যান্ড অপস) মো. শামীম হোসেন। এই কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফয়সাল খান শুভ’র দুলাভাই মোহসিনুল হক জানান, শুভ’র সঙ্গে একই এলাকার এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এরপর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হলে শুভ’র সঙ্গে তরুণীর দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে তরুণীর বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে শুভ’র বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। ডিবির অভিযানের সময় দুজন বহিরাগত সঙ্গে ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন তরুণীর খালাতো ভাই। ডিবি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পর বাসার সামনে শুভকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করলে ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। অভিযানের সময় তরুণীর খালাতো ভাই ও অজ্ঞাতপরিচয়ের আরেক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে যায় ডিবি।

শুভ আহত হওয়ার ঘটনায় ১২ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা করেন তার বাবা সেলিম খান। এতে তরুণীর বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও পাচজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

ডিবি পুলিশের অভিযানের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ১০ নভেম্বর রাত ৯টা ৩৮ মিনিটে বাসার নিচের কলাপসিবল গেট খুলে দিচ্ছেন মোহসিনুল হক। এ সময় ডিবি পুলিশের পোশাক পরিহিত চারজন, পোশাকবিহীন চারজন সিঁড়ি বেয়ে দোতলার দিকে যান। পোশাক বিহীন একজনের হাতের ওয়াকিটকি ছিল। বাকি তিনজনের মধ্যে শেষের দিকে থাকা দুজনের একজনের মুখে মাস্ক ও একজনের মাথায় ক্যাপ ছিলো।

ফয়সালের পরিবার দাবি করেছে, অভিযানে মোট ছয়জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। অন্য দুজনের একজন ওই তরুণীর খালাতো ভাই আসিফ সাইফুল্লাহ।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবি পুলিশের এসআই সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ছয়জন পুলিশ সদস্য ওই বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সিসিটিভি ভিডিওতে যে দুইজনকে দেখা গেছে, তাদের বিষয়ে আমরা অবগত নই। হয়তো তারা আমাদের অভিযানে কৌশলে ঢুকে যেতে পারে।’

তাদের ছাদে যাওয়ার বিষয়টিও জানেন না জানিয়ে এসআই সোহরাব বলেন, ‘বাসায় ঢুকে যখন শুনেছি, ফয়সাল নেই তখন আমরা চলে এসেছি। আসার পরদিন শুনি, ফয়সাল পাঁচতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এমন হতে পারে, পুলিশের ভয়ে ছাদে গিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করলে হাত ফসকে পড়ে গেছেন।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ