২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে কিছু কথা
আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুন মাসের ৫ তারিখ প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বর্তমানে যেহেতু জাতীয় সংসদ কার্যকর নেই, তাই আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে সামরিক শাসনামল এবং ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছর ছাড়া প্রতি বছরই বাজেট জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট নানা কারণেই ভিন্নতর হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক সরকার আমলে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা থাকে। সেখানে দলীয় নেতাদের তোষণ করার জন্য এমন কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয় বাস্তবে যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।
আবার সামরিক শাসনামলে মহল বিশেষকে খুশি করার জন্য বাজেটে নানা আয়োজন থাকে; কিন্তু এবারের সরকারের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্নতর। কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি আন্তরিক হন এবং ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেন তাহলে একটি সুষম বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব হতে পারে। রাজনৈতিক সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। কীভাবে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। অথবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন কতটা সম্ভব হবে, নাকি জাতীয় নির্বাচন দিয়ে তারা ফিরে যাবেন এসব প্রশ্ন নিয়ে রাজনৈতিক এবং বোদ্ধা মহল বর্তমানে আলোচনা মুখর রয়েছেন। ফলে জাতীয় বাজটে নিয়ে তারা খুব একটা আলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন না। অথচ স্বাভাবিক সময়ে অন্যান্য বছর অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক শুরু হলেই বাজেট আলোচনা আলোর মুখ দেখে।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা এখনো শুরু না হলেও বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন একটি বাজেট প্রণয়ন করতে চাচ্ছে, যা হবে বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী। আমাদের দেশের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, প্রতি বছরই বাজেটের আর্থিক আকার বা আয়তন বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের অহমিকা কাজ করে। তারা প্রচার করেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে। কাজেই বাজেটের আকারও বাড়ছে। ইতিবাচক তথ্যগুলো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়। যেমন,জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি তথ্যগুলোকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি, বেকারের হার, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর মাধ্যমে কৃতিত্ব প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয়; কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেহেতু দৃশ্যমান কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই, তাই আগামীতে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক সঠিকভাবে প্রদর্শনের চেষ্টা থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিগত সরকারের নানা ধরনের দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন করা হবে না। বরং বাজেটকে যতটা সম্ভব যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মতভাবে রূপ দেয়ার চেষ্টা থাকবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রণীত বাজেটের আর্থিক আকার বাড়বে না। কারণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটের আকার বাড়ানো হলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। উল্লেখ্য, বাজেট অর্থায়নের জন্য স্থানীয় সূত্র থেকে অর্থায়ন সংগ্রহের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করতে হয়; কিন্তু ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) এর পারফরম্যান্স খুব একটা সুবিধাজনক পর্যায়ে নেই। জুলাই-আগষ্ট গণআন্দোলন এবং আন্দোলন পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হয়। ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবার কোনোই সম্ভাবনা নেই। এনবিআর এর এক শ্রেণির কর্মকর্তার ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি এবং অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাবে রাজস্ব আদায় যেভাবে বৃদ্ধি পাবার কথা তা হচ্ছে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির আকার যদি হয় ১০০ টাকা, তাহলে ট্যাক্স আদায় হচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা। এটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। শ্রীলঙ্কার ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য কম। শ্রীলঙ্কার ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগামী বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত ট্যাক্সের হার কমিয়ে ট্যাক্স নেটওয়ার্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আর এনবিআরকে সুশাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উচ্চ মাত্রায় ট্যাক্স নির্ধারণ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্যাক্স ফাঁকি দেবার প্রবণতা বাড়ে। অনেকেই আছেন, যারা তুলনামূলক কম ট্যাক্স আরোপ করা হলে নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করবেন। যেসব ক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডে প্রদান করা আছে সেগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। কোনো খাতে ট্যাক্স হলিডে বা তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই পণ্যটি যাতে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হতে পারে এবং সাধারণ ভোক্তা শ্রেণি তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্যটি পেতে পারে; কিন্তু এই উদ্দেশ্য যদি সাধিত না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডে বা তুলনামূলক কম ট্যাক্স আরোপের কোনো কারণ থাকতে পারে না।
একদিকে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যর্থতা এবং বিদেশি সংস্থার নিকট থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক সহায়তা না পাবার কারণে আগামী বছরের জন্য বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় বাজেটের আকার বাড়ানো হলে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে অর্থ সংকুলান করতে হবে; কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঢালাওভাবে বিদেশি ঋণ গ্রহণের পক্ষপাতি নয়। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ পাবার ক্ষেত্রেও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) তথ্যমতে, বৈশ্বিক ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গৃহীত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে গেছে। সরকার এই অবস্থায় বৈদেশিক ঋণের স্থিতি আরও বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন না। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়েও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার সীমিত রাখা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আগামী বাজেটে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় বরাদ্দ আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, আগামী অর্থ বছরে এটা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। বেতন-ভাতা বাবদ বর্তমান বছরের বাজেটে বরাদ্দ আছে ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী বছর ৯০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ চলতি অর্থবছরে পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য এ খাতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। মূল্যস্ফীতির হার চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। আগামী অর্থবছরের জন্য এটা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়। বিগত প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক, মূল্যস্ফীতির ৯ দশমিক ৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তবে এটা কতটা স্থায়ী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা দেখা দিলে অধিকাংশ দেশ নানা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে এ হার কতটা অর্জনযোগ্য তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনো সূত্র মেনে চলে না। মনে করা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাবার কারণেই অভ্যন্তরীণ বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা ধারণা মোটেও প্রশ্নাতীতভাবে সত্যি নয়। কারণ বাংলাদেশ তার ব্যবহার্য পণ্যের মাত্র ২৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে থাকে। তাহলে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত ৭৫ শতাংশ পণ্যের মূল্য কেনো বৃদ্ধি পায়? বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের ওপরের মহল থেকে এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণের চেয়ে সহায়তা প্রদান করা হয় বেশি। রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজিসহ সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করা না গেলে কোনোদিনই পণ্যের মূল্য কমবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে সবাই প্রত্যাশা করেছিল কিন্তু সেই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বিগত সরকার আমলে কল্পিত উন্নয়ন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বাজেট বড় করা হতো। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হতো। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি বছর দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তার বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয় এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এই প্রবণতা রোধ করা দরকার। কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি নির্দিষ্ট সময়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে। জনগণ কেনো তার দায়ভার বহন করবে? প্রকল্প বিলম্বিত হওয়া এবং ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আকারে আদায় করা যেতে পারে।
আগামী অর্থবছরের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে প্রায় ৮ মাস হয়ে গেল; কিন্তু এখনো দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মাঝে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনীহা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এমনকি অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই বর্তমান নিষ্ক্রিয় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। অনেকে আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বিশেষ করে যারা বিগত সরকার আমলে নানা ব্যানারে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন তারা বর্তমানে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। শেয়ার বাজার নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা চলছে। ব্যাংকিং খাত তো চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছে; কিন্তু তারপরও কিছু ব্যাংক বাঁচানো যাবে না। এই বক্তব্য সঠিক হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এমন বক্তব্য প্রত্যাশা করা যায় না। এতে ব্যাংকিং সেক্টরে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। সবচেয়ে আশার ব্যাপার এই যে, এতদিন বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বেশি অংশ আসতো মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি মুসলিম দেশ থেকে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসতো। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, একক বৃহত্তম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার শীর্ষে উঠে এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বর্তমানে যেভাবে নগদ আর্থিক প্রনোদনা দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা। এতে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা কমে আসবে। ফলে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক করা হলে রিজার্ভ স্ফীতি হবে।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রণীত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। কোনোভাবেই যেনো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এতে অন্তর্ভুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে উপযুক্ততা বিবেচনায় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে আগামী দিনের চাহিদা পূরণে সক্ষম এমন একটি বাজেট প্রণয়ন করার চেষ্টা চালাতে হবে। এখন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। তাই চেষ্টা করা হলে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম এমন একটি বাজেট জাতিকে উপহার দেয়া সম্ভব হতে পারে।
এম এ খালেক: সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে