স্টারলিংকের গল্প এবং বাস্তবতা
স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের গল্পটা আজকের নয়। এর শুরুটা হয়েছিল মূলত নব্বইয়ের দশকে। যদিও আজকের প্রেক্ষাপটে স্টারলিংকের যে বাস্তবতা, সেই নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে, সে সময়কার ট্রাম্প সরকারের ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ নীতির ফল হিসেবে। যে নীতি বিশ্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ‘যুক্তরাষ্ট্র’ ও ‘চীন’ নেটওয়ার্ক নামে ইন্টারনেট দুনিয়াকে দ্বিখণ্ডিত করার বড় ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে বিস্তারিত অধ্যায়ে যাওয়ার আগে নব্বই দশকের ইতিহাসের পটভূমিটা ঘুরে আসি।
প্রেক্ষাপট নব্বই দশক
১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে টেলিডেসিক নামে একটি কোম্পানি যাত্রা শুরু করে, যার মূল ব্যবসায়িক লক্ষ্য ছিল একটি ব্রডব্যান্ড স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরি করা। সে সময় এই ব্যবসায়িক লক্ষ্য আকাশকুসুম কল্পনা মনে হলেও বাস্তবে টেলিডেসিক চার বছরের মধ্যেই এর নকশা তৈরি করে ফেলেছিল। যদিও তখন বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক দ্রুত সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। টেলিডেসিকের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনায় যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তার বিপরীতে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক তৈরি ও ব্যবস্থাপনার ব্যয় প্রায় অর্ধেক ছিল। যে কারণে টেলিডিসিকের এই উদ্যোগ খুব বেশি আলোড়িত করেনি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের।
১৯৯৬ সালে এসে ‘ইন্টার অন দ্য স্কাই’ নামে একটি প্রকল্প নেয় টেলিডেসিক। যার লক্ষ্য ছিল আকাশে উড়োজাহাজের ভেতর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা। এর মধ্য দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের মন গলাতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়; কিন্তু লোকসানের দায় নিয়ে কোম্পানির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত অপমৃত্যুর কারণ হয় টেলিডেসিকের। অন্যদিকে ২০০১ সালে মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাস নিশ্চিত করতে গ্রিন হাউস প্রতিষ্ঠার অতি উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা নিয়ে ‘মার্স ওয়েসিস’ প্রকল্প গ্রহণ করে ইলন মাস্ক। সেই পরিকল্পনা থেকেই ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্পেসএক্স।
২০০৪ সালে স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক টেলিডেসিকের পরিত্যক্ত ‘ইন্টারনেট অন দ্য স্কাই’ প্রকল্পের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ল্যারি উইলিয়ামসকে স্পেস এক্সের স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। এবার নতুন বিনিয়োগে, নতুন উদ্যমে শুরু হয় ‘স্কাই অন দ্য ইন্টারনেট’। তবে এবার এই প্রকল্প শুধু উড়োজাহাজে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার লক্ষ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বিশ্বজুড়ে সাবমেরিন কেবলের সমান্তরাল বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিস্তৃত হয়। শুরু হয় নকশা তৈরি, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদনের প্রক্রিয়া।
শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন স্পেস এক্স-এর ‘স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের জন্য ‘স্টারলিংক’ নামটি অনুমোদন করে। অবশ্য ‘স্টারলিংক’ নামটি এসেছে জনপ্রিয় মার্কিন কথা সাহিত্যিক জন গ্রিনের ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টার' উপন্যাস থেকে।
নতুন প্রেক্ষাপটে স্টারলিংক
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর স্টারলিংকের গল্পের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ নীতি গ্রহণ করে। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্লিন ইন্টারনেট হচ্ছে ‘চীন মুক্ত ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা। এই নীতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চীনের কোম্পানির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তৈরি কোনো নেটওয়ার্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির সার্ভারে প্রবেশ করা যাবে না। মাইক পম্পেই এর ঘোষণার পর ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন খোদ মর্কিন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরাই। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক জন চিপম্যান বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সভায় তার বক্তব্যে ট্রাম্পের ক্লিন ইন্টারনেট নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এই নীতি বরং চীনকে বিশ্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কারণ ইন্টারনেট ব্যবস্থা দ্বিখণ্ডিত হলে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
কংগ্রেসের বিতর্কেও ক্লিন ইন্টারনেট নীতি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। ফলে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতার থাকার সময়ে ট্রাম্প সরকার ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ নীতি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। তবে ইলন মাস্কের স্টারলিংক বসে থাকেনি। তাদের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরির কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে স্টারলিংক। ২০২৩ সাল থেকে বিশ্বের কয়েকটি বড় বড় বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সকেও উড়োজাহাজের ভেতরে ১৫০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সরবরাহ শুরু করে। ২০২৪ সালের মধ্যেই বিশ্বের ১৩০টি দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার সক্ষমতা অর্জন ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করে স্টারলিংক। এখানেই ট্রাম্পের সেই ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ নীতি বাস্তবায়নের নতুন অধ্যায়ের শুরু।
প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশ্বে সাবমেরিন কেবল নেটাওয়ার্কের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রযুক্তিগত বিকল্প হচ্ছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক। আমরা জানি, বিশ্বে বর্তমানে যেসব সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়াম আছে তার বেশির ভাগই চীনা প্রযুক্তিতে তৈরি। আবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ফাইবার অপটিক কেবল এবং রেডিও মাইক্রোওয়েভ- উভয় নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে দুটি চীনা কোম্পানির যন্ত্রপাতি। ফলে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক বিবেচনা করলে এই নেটওয়ার্ক মূলত চীনের দখলেই। এ কারণে বিভিন্ন দেশে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের ল্যান্ডিং স্টেশন এবং গেটওয়েতে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কিংবা নজরদারি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। আবার ট্রাম্পের ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ নীতিও চীনকে আরও বেশি শক্তি অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল।
এই বাস্তবতায় স্যাটেলাইটভিত্তিক সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের বিকল্প নেটওয়ার্ক তৈরির কোন বিকল্প ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। কারণ সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কে আধিপত্য হারালেও এখন পর্যন্ত স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। গত ২৫ এপ্রিল ভিয়েতনামের ন্যাশনাল ডিফেন্স জার্নালের অনলাইন ভার্সনে ‘ইউএস-চায়না কমপিটিশন ইন লো-অরবিট স্যাটেলাইট অ্যান্ড দেয়ার ইমপ্যাক্ট অন দ্য রিজন’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬ হাজার লো-অরবিট বা লিও স্যাটেলাইট রয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজারই যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের আছে ৬০০টি। তবে চীন দ্রুত তাদের স্যাটেলাইট সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে স্টারলিংকের নিজস্ব ঘোষণা উল্লেখ করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাণিজ্যকে সেবা দেয়ার জন্য এরই মধ্যে স্টারলিংক ৭ হাজার লিও স্যাটেলাইট তৈরি করেছে। এই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আগামী পাঁচ বছরে ১২ হাজারে উন্নীত করা। এ ছাড়া আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ৩৪ হাজার ৪০০ লিও স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। চীনের বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট উৎপাদন ও উৎক্ষেপণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এটা নিশ্চিত চীন বসে থাকবে না। বর্তমান বিশ্ব বাজারের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার ধরন অনুযায়ী চীন অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান্তরাল গতিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর অদূর ভবিষ্যতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ঘিরেই বিশ্বে গড়ে উঠবে সেই ‘ক্লিন ইন্টারনেট’ নীতির দ্বিখণ্ডিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য
সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই নেটওয়ার্ক থেকে কোনো দেশের অভ্যন্তরে সেবা পেতে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন দরকার হয়, সংশ্লিষ্ট দেশের গেটওয়েতে সংযুক্ত হয়ে ওই দেশের অভ্যন্তরীণ ফাইবার অপটিক কেবলে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে হয়। ফলে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথের উপর সংশ্লিষ্ট দেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। অন্যদিকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই প্রযুক্তিতে যে কোনো দেশের গেটওয়েতে সংযুক্ত না হয়েই সরাসরি ওই দেশের গ্রাহকের ডিভাইসে সংযোগ দেওয়া সম্ভব। আবার কোনো দেশ চাইলে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ সেদেশের নিজস্ব গেটওয়ে এবং আভ্যন্তরীণ ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবহারে বাধ্যও করতে পারে।
সেক্ষেত্রে একটি গ্রাউন্ড স্টেশনেরও প্রয়োজন হবে; কিন্তু কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের পরিবহন সক্ষমতা স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের গতির চেয়ে কম হলে সেক্ষেত্রে স্টারলিংকের মতো প্রতিষ্ঠান পূর্ণ সক্ষমতায় গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে পারবে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগতভাবেই যেখানে একটি দেশের গেটওয়ে এবং আভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক ব্যবহারের প্রযুক্তিগত বাধ্যবাধকতা আছে, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে সেটা নেই। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে একটি দেশে সেবা দেয়ার জন্য শুধু সে দেশের বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থা বা স্পেকট্রাম ব্যবহারের অনুমতি পাওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক হচ্ছে মূলত সেবা প্রদানকারী দেশ ও কোম্পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্টারলিংকের নিয়ন্ত্রণে সেই উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে।
আগামী কিছুদিনের মধ্যে চীনও নিশ্চিতভাবে সমান্তরাল স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ে হাজির হবে। ফলে বিশ্বে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের বিপরীতে দুটি সমান্তরাল সক্ষমতার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এখানে চাইলেই যুক্তরাষ্ট্র তার নেটওয়ার্কে চীনের যে কোনো কোম্পানির সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি নাও দিতে পারে। আবার চীন চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো কোম্পানির সার্ভারকে তার নেটওয়ার্কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রাখতে পারবে। চীন বর্তমান সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও তাদের গেটওয়েতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুক, গুগলের মতো সেবা নিয়ন্ত্রিত রেখেছে; কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু নিজেদের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক থাকলে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থারও প্রয়োজন হবে না, এমনিতেই পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব হবে।
নির্ভরতার নতুন ক্ষেত্র
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমান্তরাল দুটি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক গড়ে উঠলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ভূমিকা কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা। আমাদের দেশ শুধু নয়, স্বল্পোন্নত এমনকি অনেক উন্নয়শীল দেশকেও কূটনীতির ক্ষেত্রে শুধু দুই নৌকা নয়, বরং হাফ ডজন নৌকায় পা রেখে চলতে হয়। এ অবস্থায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টারলিংকে যেমন বিনা বাক্য ব্যয়ে ব্যবসার অনুমতি দিতে হবে, তেমনি কয়েক দিন পর চীনের একই ধরনের কোনো কোম্পানি অনুমতি চাইলেও দিতে হবে। এখানে এই দুই পরাক্রমশালী দেশের মধ্যে কার কি শর্ত, তার ফলে কি ধরনের লাভক্ষতি তা ভাবার সুযোগ খুবই কম। কারণ বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তিগত বাস্তবতায় দুটি দেশই তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য প্রধান শর্ত হিসেবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার শর্ত বেঁধে দেবে।
অতএব, স্টারলিংকের সংযোগ নিয়ে একটা সরকারকে দায়ী করার কোনো কারণ নেই। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে যে দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি ব্যবসার অনুমতি দিতে হবে। না দিলে ভবিষ্যতে আরও একটা বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংঘাত কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক আগামীতে সাময়িক বা দীর্ঘ মেয়াদে বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ কারণে স্টারলিংক নিয়ে কোনো মুখরোচক গল্পে বিভ্রান্ত না হয়ে গভীর তথ্যানুসন্ধানে যেতে হবে দেশের আজকের এবং ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারকদের।
রাশেদ মেহেদী: সম্পাদক ভিউজ বাংলাদেশ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে