জিডিপি প্রবৃদ্ধি
আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে
বিশ্বব্যাপী জাতীয় বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ বা জিডিপির ৬-৮ শতাংশ শুধু শিক্ষার জন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়; কিন্তু আমাদের দেশে বরাবরই প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ দেওয়া হয় শিক্ষা খাতে। বিশ্বের চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতির মুখে আমাদের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে বাজেট করা কঠিন কাজ। অর্থনীতির প্রচলিত নিয়মে একে বাঁধা যায় না। রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক, মেধা মননের বিকাশের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। এ খাতটি একটি রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের মেধা, চিন্তা, শক্তি স্বাভাবিক জীবন বোধের জাগরণের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যভাবে এ খাতের উন্নয়ন কল্পে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা থেকে রাষ্ট্র অনেক দূরে। বড় সমস্যা আমাদের শিক্ষার উন্নতি কল্পে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ খুবই কম। অথচ আমাদের পাশ্চাত্য দেশ ভারত, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণের চেয়ে বাংলাদেশে অত্যন্ত কম।
আগামী বাজেটে কৃষি খাতের অগ্রাধিকার প্রয়োজন
নয়া বাজেট আসন্ন। আগামী জুন মাসের ২ তারিখ উপস্থাপিত হতে পারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। এখন বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে জানা গেছে যে, আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল বাজেটের তুলনায় তা হবে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার হ্রাস পাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এ বাজেট হবে সংকোচনমূলক। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আহরণের ধীরগতি ও বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাবহেতু একটি আঁটসাঁট বাজেটই আমাদের কাম্য।
বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করুন
পুঁজিবাজার একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির দক্ষতা প্রকাশ করে। জনগণ, সরকার ও পুঁজিপতিদের মধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তোলে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কতিপয় রাঘববোয়ালদের বারবার দায়ী করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার জন্য অনেক ধরনের আলাপ-আলোচনা হয়েছে, অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে; কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত কাজে লাগেনি।
মে দিবসে জোরালো হোক কর্মসংস্থানের দাবি
শ্রমিকের হাতুড়ির আঘাতে সভ্যতা এগিয়েছে। শ্রম দিলেই শ্রমিক- এটা যেমন ঠিক, আবার শ্রমিক বলতে প্রথমে শিল্প শ্রমিকের ধারণা চলে আসে; কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের বিস্তৃতি আরও অনেক ব্যাপক। কেননা পৃথিবীর সব মানুষই কোনো না কোনো কাজ করে আর যে কোনো কাজ করতে গেলেই প্রয়োজন হয় শ্রমের। এই নিরিখে পৃথিবীর সব মানুষকেই শ্রমিক বলা যায়। আবার মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রমিক শ্রেণি হলো সবচেয়ে আধুনিক এমন এক শ্রেণি, যারা সমাজবিপ্লবে নেতৃত্ব দেবে। কার্ল মার্কস কারখানার শ্রমিকদের বিপ্লবী শ্রেণি হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন। কেননা তারা শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন শ্রমিকশ্রেণি হিসেবে দাস ব্যবস্থার বিপরীতে উঠে এলেও তারা কারখানার এক ছাদের তলায়, একই স্বার্থে একটি সংঘটিত শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
দেশে শ্রম আইন থাকতে বাস্তবায়নে অবহেলা কেন?
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নেপথ্যের তিন চালিকাশক্তি হলো- কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল ধান, শ্রমনিবিড় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প এবং বিদেশে কর্মসংস্থান থেকে রেমিট্যান্স। আবার এ তিনের মুখ্য চালক শ্রম এবং শ্রমজীবী মানুষ। তবে উন্নয়নের হিস্যায় এ শ্রমজীবী মানুষের ভাগ খুবই কম। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনো ক্ষেত্রেই মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের দেশের শ্রমিক-কর্মচারীরা এখনো বাঁচার মতো মজুরি, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ অন্যান্য ন্যায়সংগত অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।
বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি না করে শুধু সম্মেলন করে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ অসম্ভব
শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্যও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারেন; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দেশে স্থানীয় এবং বিদেশি কোনো বিনিয়োগই প্রত্যাশিত মাত্রায় হচ্ছে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে; কিন্তু এ ধরনের বিনিয়োগ সম্মেলন করে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে খুব একটা লাভ হয় বলে আমি মনে করি না। কারণ বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন ব্যতীত শুধু বিনিয়োগ সম্মেলন করে লাভ হবে না
সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৪ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বিনিয়োগ সম্মেলন নানা কারণেই ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, সম্মেলনে আগত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব থেকে পাইপলাইনে থাকা কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাবও রয়েছে। এটা অবশ্যই অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এমন এক পরিস্থিতিতে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া সত্যি আশা জাগানিয়া একটি সংবাদ। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, খুব শিগগিরই চীনের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। তার এই সফরকালে ২০০ জন বিনিয়োগকারীও বাংলাদেশে আসবেন। প্রাপ্ত সংবাদগুলো যে কোনো বিচারেই উল্লেখের দাবি রাখে।
কৃষি খাতের পুনর্মূল্যায়ন ও কৃষি কমিশন গঠন প্রসঙ্গে
উৎপাদনে আধুনিক উপকরণ ব্যবহার ও ভূমি উন্নয়নে এদের আগ্রহ থাকে কম। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রাপ্তি ও কৃষি যন্ত্র সংগ্রহে এদের প্রবেশাধিকার কম। ফলে তাদের প্রতি ইউনিট জমির উৎপানে প্রবৃদ্ধির হার কম। অপরদিকে বড় ও মাঝারি কৃষকগণ ক্রমাগতভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষাবাদে। তারা ক্ষয়িষ্ণু কৃষক। চাষাবাদে তাদের বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তাদের উৎপাদন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণ: বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে
উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবার জন্য যে তিনটি আবশ্যিক শর্ত পরিপালন করতে হয়, বাংলাদেশ তার সবই বেশ ভালোভাবে পূরণ করেছে। এরপর কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে ছিল বাংলাদেশ। আগামী বছর (২০২৬) বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। স্বাধীনতার পর থেকে এটাই হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অর্জন। কোনো দেশই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের চিরদিন ধরে রাখতে চায় না। প্রতিটি দেশেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে কীভাবে এবং কত দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়। একটি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকলে উন্নত দেশগুলো থেকে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়; কিন্তু সেটা কোনোভাবেই মর্যাদাপূর্ণ নয়। বরং এক ধরনের করুণা থেকেই এটা করা হয়। কোনো দেশই স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ হিসেবে থাকতে চায় না। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হতে পারা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাকর।
নারী ক্ষমতায়নের অর্থনৈতিক তাৎপর্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির বাইরেও অস্তিত্বশীল
১৭২.৯২ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয়ার একটি ছোট দেশ। গত কয়েক দশকে দেশটি উন্নয়নের একটি সাফল্যের গল্প হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নারী জনসংখ্যা ৮৮.০৭ মিলিয়ন যা পুরুষ জনসংখ্যা ৮৪.৮৫ মিলিয়নের চেয়ে কিছুটা বেশি। সঙ্গতকারণেই নারীরা দেশের জনসংখ্যাগত এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তা সত্ত্বেও শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং পেশাগত প্রতিনিধিত্বে লিঙ্গবৈষম্য এখনো প্রকট যা নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। নারী ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র সামাজিকভাবে আবশ্যক নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অর্থনৈতিক অপরিহার্যতা। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ এবং তাদের অগ্রগতিতে বাধাগুলো দূর করে দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে এবং ত্বরান্বিত করতে পারে উন্নয়নের গতিকে।