অন্তর্বর্তী সরকার
ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ বড় সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করবে
একটি বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের দেশে ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড কিংবা মোবাইল ইন্টারনেট উভয় ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের স্পিড এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে কম। আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যারা টেলিযোগাযোগ খাতের নেতৃত্বে আছেন, তাদের মধ্যে একটা সদিচ্ছা দেখা গেছে। তারা চান দেশের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যাক। এ সদিচ্ছার সঙ্গে যারা ইন্টারনেট ভ্যালু চেনে বিভিন্ন পর্যায়ের অপারেটর আছেন, তাদের মধ্যে যদি আস্থা এবং সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা দেওয়া কঠিন কিছু নয়।
ক্ষমতায় থাকার পুরোনো তরিকা
‘রাস্তা থেকে মানুষ বলে আপনারা আরও ৫ বছর থাকেন।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এই বক্তব্যের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের বেশ মিল রয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে
বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন যা মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার জটিলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহা, কায়েমি স্বার্থবাদীদের প্রভাব এবং সামাজিক চাহিদার দুর্বলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে নীতি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তবে তা কাঠামোগত ও কার্যকর রূপ লাভ করতে পারেনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত প্রকৃতি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোতেই গণতন্ত্রের অভাব থাকায় তারা জাতীয় পর্যায়েও গণতন্ত্র ও সুশাসনের সংস্কার বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়। দলীয় নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্য, উত্তরাধিকারভিত্তিক নেতৃত্ব এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনিয়মিত প্রক্রিয়া রাজনৈতিক সংস্কারের পথে বড় অন্তরায়।
সত্য বললে আর নির্বাচন চাইলে বলে ভারতের দালাল
রাজনীতির চারণকবিখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। সাবেক সংসদ সদস্য, কিশোরগঞ্জ-৩। কিশোরগঞ্জ জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি। দেশ, মাতা, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় যে কোনো সংকট-দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে তিনি আবির্ভূত হন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে। সর্বোচ্চ সোচ্চার থাকেন ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আপসহীন এ ব্যক্তিত্ব কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের করনসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সম্প্রতি ভিউজ বাংলাদেশের মুখোমুখি হন বরেণ্য এ রাজনীতিবিদ। কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী বাংলাদেশ, রাজনীতি, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানসহ সমসাময়িক বিষয়ে। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব।
এক বিস্মৃত মুক্তিযোদ্ধার গল্প ও বাংলাদেশের অবহেলিত ইতিহাস
বুয়েটে পড়ুয়া প্রকৌশলীরা যদি কূটনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করতেন, তবে হয়তো জাতির জন্য ভালো হতো; কিন্তু সেটি না করলেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আজ সেই দায়িত্ব বিশ্বমঞ্চে পালন করে দেখাচ্ছেন। তার ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। এতে আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে- শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেই কি সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সহজ হয়? নিশ্চয়ই নয়। কারণ জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এর প্রয়োগ ও চর্চা না থাকলে, সেই বিদ্যাও মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে চলুন ফিরে যাই এক সময়ের এক মুক্তিযুদ্ধের বার্তাবাহকের জীবনে।
স্বাধীনতার ঘোষণা-বিতর্ক এখনো কতটা প্রাসঙ্গিক?
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর পরেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছিলেন- তা নিয়ে বিতর্ক করা কতটা সমীচীন এবং অর্ধশতাব্দী পরেও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে না ওঠা তথা এরকম একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্কের অবসান করতে না পারা রাজনৈতিক ব্যর্থতা কি না এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি একটি বড় ধরনের লজ্জা কি না- সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নেই বলেই স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষক বিতর্ক নিয়ে নতুন করে কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআর ট্রান্সমিটারের সাহায্যে যে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা দেশে সম্প্রচারের জন্য পাঠিয়ে দেন, সেটিই স্বাধীনতার প্রথম তথা আনুষ্ঠানকি ঘোষণা। পরদিন ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটি স্পষ্টতই ছিল বঙ্গবন্ধুর পক্ষে।
টেকনিক্যাল অনুসন্ধান করুন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিন
টেলিযোগাযোগ খাতে সংস্কার নিয়ে সরকার এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি দৃশ্যত, কিংকর্তব্যবিমূঢ অবস্থায় পড়েছে। একদিকে ‘সুযোগ বুঝে’ মোবাইল অপারেটররা চাচ্ছে নিজেদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে। ‘সুযোগ বুঝে’ শব্দটা এ জন্য বলছি যে, এর আগে দুটি রাজনৈতিক সরকারের আমলে বার বার চেষ্টা করেও মোবাইল অপারেটররা নিজেদের পক্ষে পছন্দমতো সিদ্ধান্ত পায়নি। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে যদি কোনোভাবে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করিয়ে নেওয়া যায়, তার একটা প্রচেষ্টা বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন অপারেটর, ইন্টারকানেকশস এক্সচেঞ্জ, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে এবং ইন্টারন্যাশাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অপারেটররা নিজেদের ব্যবস্থার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়।
পদে পদে চাঁদাবাজি বন্ধ করুন
বাংলাদেশের বহু ব্যবসাই যে চাঁদাবাজির ওপর চলে এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিন ধরেই এটা বাংলাদেশের এক ভয়াবহ দুর্নীতিচক্র। সরকার আসে-যায়; কিন্তু চাঁদাবাজির ধরন একই থেকে যায়। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কার হচ্ছে তখন আশা করা গিয়েছিল চাঁদাবাজিও কিছুটা কমবে; কিন্তু কমার লক্ষণ তো নেই-ই, কিছু ক্ষেত্রে বরং বেড়েছে। ঢাকার একজন ব্যবসায়ী সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আগে চাঁদা দিতে হতো একজনরে, এখন দিতে হইতেছে চার-পাঁচজনরে’।
বাণিজ্য সম্প্রসারণের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে
পৃথিবীর ১৫০টি দেশের মধ্যে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ চীন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে। ২০০২ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ, বর্তমানে তা প্রায় ২৬.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চীন থেকে আমদানি করা কাঁচামাল আমাদের রপ্তানি ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু কাঁচামাল নয়, আমরা চীন থেকে প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতিও আমদানি করি। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নৈকট্য সম্পর্ক এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তুলনামূলক ক্রয়মূল্য কম পাওয়ায় দেশটি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম কেন্দ্রীয় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর পশ্চিমাদের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করবে কি না!
বর্ণিত পটভূমিতে আমাদের দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাচ্ছেন। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের বিষয়ে চীনের বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের জন্য বিশেষ প্লেন পাঠাবে। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, চীন ড. মোহাম্মদ ইউনূসের এই প্রস্তাবিত সফরের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। বাংলাদেশে চীনের প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ আছে। তারা আমাদের উন্নয়ন কাজে সহায়তা করছে। চীনের বিভিন্ন ধরনের পণ্যদ্রব্য আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ এক সময় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানি করত। বর্তমানে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান সবার শীর্ষে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ-ভারতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন টাকা। ওই বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি বাণিজ্যে চীনের অংশীদারত্ব বৃদ্ধি পায় ১৫ দশমিক ১৭। আর বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য হ্রাস পায় ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করে। এর বিপরীতে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ২২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এই বাস্তবতায় ড. মোহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে যাচ্ছেন।