২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ
প্রথম রাউন্ড টপকানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ
ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টির মধ্যে এমন সব উপাদান আছে, যা বয়স নির্বিশেষে পুরুষ ও নারী সবাইকে আকৃষ্ট করে। যাদুর মতো টানে। ক্রিকেট অনুরাগীদের (সংখ্যা বেড়েই চলেছে) এখন ‘ফাস্ট চয়েজ’ ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুই দলের জন্য নির্ধারিত ১২০+১২০ = ২৪০ বলের ক্রিকেট। মাদকতা, রোমাঞ্চ, বিনোদন, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা জন্ম দেওয়া এই খেলা ইতিমধ্যেই ‘সেরা উৎসব’ হিসেবে গলায় মেডেল ঝুলিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টির জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে, আর এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান হলো ভারতের আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রফেশনাল লিগ) এর। পুরো ক্রিকেট বিশ্বে শুধু এই লিগের দিকে গভীর আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে না, পাশাপাশি তাদের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়ে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক বিনোদন উপহার, খেলোয়াড়দের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিতকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ অবদান ও ভূমিকা এবং ক্রিকেটের অন্য দুটি স্বীকৃত সংস্করণে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। পাল্টে দিয়েছে ক্রিকেট নামের খেলাটির দর্শন এবং রং। বাস্তবতায় সব সময় ক্রিকেটারদের ভয়ডরহীন স্বাধীন ক্রিকেট খেলতে অনুপ্রাণিত করছে।
ক্রিকেটারদের ‘ইনোভেটেড’ শক্তি খেলাটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আমরা তো লক্ষ্য করছি। কুড়ি ওভারে ২৭০ রানের বেশি করেও স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই-প্রতিপক্ষ তো এই রান তাড়া করেও শেষ হাসি অনায়াসে হাসছে। বলে বলে চার আর ছক্কা ব্যাটারদের। বোলাররা মহাবিপদে। খেলা হয়ে পড়ছে পুরোপুরি ব্যাটারদের। বোলাররা নীতি নির্ধারকদের কাছে বার বার ‘প্রটেকশন’ চাচ্ছেন। কিছু একটা করা হোক। টি-টোয়েন্টিতে সত্যি বোলাররা এখন স্বস্তির আবহে নেই। পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম এই যুগের বোলার না হওয়ায় পরম করুণাময়ের দরবারে শুকরিয়া জানিয়েছেন। তার কথা হলো ভাগ্য ভালো এই যুগে আমি ক্রিকেট খেলছি না। কিছুদিন আগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ফিল্ডিং কোচ বায়ান টেন ডেমকার্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘বোলারদের সাহসী হয়ে উঠতে হবে। ব্যাটসম্যানদের থামানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এই লড়াইয়ে পাল্লা দিতে হলে বোলারদের যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। রানের এই স্রোত আটকাতে না পারলে এমনটা চলতেই থাকবে।
টি-টোয়েন্টিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ‘স্ট্রাইকরেট’। এটি খেলার প্রাণভোমরা। যে দলের ব্যাটারদের ‘স্ট্রাইকরেট’ যতবেশি তাদের পক্ষে লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা ততবেশি। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানে বাংলাদেশ জাতীয় দল এখনো ভীষণভাবে পিছিয়ে আছে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চাপ সামাল দিয়ে স্বাধীন ক্রিকেট খেলতে পারলেই ‘স্ট্রাইকরেট’ বাড়ানো সম্ভব। সম্ভব নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারলে। টি-টোয়েন্টি ভালোভাবে ধাতস্থ না করতে পারলে নির্ভার ক্রিকেট খেলা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ দল এই ঘাটতি নিয়েই টি-টোয়েন্টি খেলে। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামবে। এ দুর্বলতা অবশ্যই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে যদি বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে কাজ করা হয়। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভুলনীতি ক্রিকেটকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে এখনো দূরে রেখেছে।
গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের সবচেয়ে বড় পূজারি হলো টি-টোয়েন্টি উৎসব। ক্রিকেটের আর কোনো সংস্করণে খেলাকে ঘিরে এত মাতামাতি সমাজের সর্বমহলের সম্পৃক্ততা, অধিকার এবং সাম্যের আবহ কি আছে? অন্য কোনো সংস্করণে কি আসরের প্রাণের মূল স্রোত নিয়ে এতো ভাবা হয়? নবীনদের তেজ আর প্রবীণের অভিজ্ঞতার মিশ্রণে টি-টোয়েন্টিতে দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি এবং শৃঙ্খলার বিষয়টি গণতান্ত্রিক চর্চায় সবচেয়ে বেশি যায়। একা নয় সবাই মিলে এক সঙ্গে। সবার আগে দল। দলের চেয়ে কেউ বড় নয়। কোচ, খেলোয়াড় আসবেন-যাবেন দল কিন্তু তার মূল্যবোধ, লক্ষ্য নিয়ে থেকে যাবে।
ক্রিকেটে অনিশ্চয়তা নিয়ে সবাই কথা বলেন, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে কিন্তু সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি আর চ্যালেঞ্জ। মনোসংযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো লড়াইয়ের মঞ্চ। সৃজনশীল, ইতিবাচক টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ‘মেডিটেশন’ চর্চার বিষয়টি জড়িত আছে। মাঠে কিছু ব্যক্তি করণীয় পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। যেমন ব্যাটিংয়ে শুরুতেই রীতিবদ্ধ কাজ হলো নিজস্ব অবস্থানকে রান অর্জনের মাধ্যমে দৃঢ় করার চেষ্টা। প্রথম ছয় ওভারের ‘পাওয়ার প্লে’ যথাযথভাবে ব্যবহার করা মানেই এগিয়ে যাওয়া। মাঠের ফিল্ডাররা তো তখন ‘রেস্ট্রিকশনের’ গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেন। পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা মানেই দলকে চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দেওয়া। বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত আস্থা এবং সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লের যথাযথ ব্যবহার খুব কম করতে পেরেছে। এটি একটি বড় দুর্বলতা। এই ক্ষেত্রে ওপেনার এবং টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দায় অনেক বেশি। প্যাভেলিয়নে ফিরে এসে অনুশোচনা করে তো লাভ নেই। এগুলো স্রেফ লোক দেখানো। পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামনে দেয়ার জন্য।
‘ডট বল’ শব্দটি সব সময় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয় টি-টোয়েন্টির আলোচনায়। ১২০ বলেন খেলায় (মাঝে মধ্যে ওয়াইড এবং নো বল হয়ে বল বাড়ে) কতগুলো বল নষ্ট করা হলো- এই প্রশ্ন উঠবেই। চার, ছক্কা আর বলে বলে রানের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি। স্বাধীন ও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে বল নষ্ট করার সুযোগ নেই। ৭০ বলে ৫০ রান করা এই ক্রিকেটে মূল্যহীন। এই ক্রিকেট রান দৌড়াবে বলের অনেক আগে। এবারের আইপিএল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে বেশি রান করো আর ‘ডট বল’ বিষয়টা মাঠের বাইরে রেখে আসো। আমাদের দল টি-টোয়েন্টি নিয়মিত খেলছে অনেক বছর ধরে- এরপরও এই ক্রিকেট কীভাবে খেলার প্রয়োজনে খেলতে হবে এই ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হতে পারেনি। ভালো ব্যাটিং উইকেটেও বাংলাদেশ দল বড় রান সংগ্রহ করতে পারে না। আর তাই বার বার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইসিসির পূর্ণ সদস্য এবং সহযোগী সদস্যদের বিপক্ষে খেলতে নেমে অধিকাংশ সময় সুবিধা করতে পারেনি। মাঠে নামতে হবে স্বচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে তার আগেই খেলাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখতে হবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যৌথ স্বাগতিক দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেট দুনিয়ার ক্রিকেট রসিকদের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ভ্যানুতে নিবদ্ধ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্ব মর্যাদার লড়াইয়ে লড়াইয়ে অংশ নেবে ২০টি দেশ। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন গতবারের তুলনায় এবার আসন্ন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং আনন্দঘন হবে। ‘ইনোভেটিব’ চিন্তার সফল বাস্তবায়ন প্রতিদিন এই ক্রিকেটকে বদলে ফেলছে। দুনিয়াজুড়ে পেশাদারি লিগগুলো যারা অনুসরণ করেন তারা লক্ষ্য করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা কীভাবে মাথা ঘামাচ্ছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বৈশিষ্ট্য এবং রং পরিবর্তন সাধনের জন্য। এই ক্রিকেটে শক্তি, সম্ভাবনা এবং হুমকি নিয়ে সব সময় কাজ করা হচ্ছে বলেই খেলার আবেদনের ‘গ্রাফ’ সব সময় ঊর্ধ্বমুখী।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ ২ জুন আমরা দেখব যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে। দুটি দেশই আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে স্বাগতিক দেশ হয়েছে। বিষয়টি তাৎপর্যময়। বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতি কথা দূরে সরিয়ে রেখে এই নিবন্ধে শুধু বলব ক্রিকেট বিশ্বায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সংপৃক্ততা এবং উৎসাহ প্রদর্শন কল্যাণময়ী খেলাটির জন্য ইতিবাচক। ক্রিকেট পুরো বিশ্বের খেলা- এই কথাটি উচ্চারিত করার দিন আসতে বুঝি আর বেশি বাকি নেই। কেউ কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবছেন আসন্ন বিশ্বকাপে উজ্জ্বল বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরা সম্ভব! বাস্তবতায় এটি পুরোপুরি অসম্ভব। বাংলাদেশ দলের যে সামর্থ্য এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম রাউন্ডের বেড়া অতিক্রম করাটা এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে সবার উচিত দলের সামর্থ্য, খেলোয়াড়দের ফর্ম সবকিছু বাস্তবতার আলোকে বিচার করে প্রত্যাশার ঘুড়ি আকাশে উড়ানো। প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করতে পারলে (বাংলাদেশের ডি গ্রুপে আছে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও নেদারল্যান্ডস) তখন অন্য চিন্তা। গ্রুপটি শক্তিশালী, বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আর নেপাল ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিলসেন্টে খেলবে। আইসিসি যখন তার টুর্নামেন্টে উইকেট তৈরি করে তখন বোলার এবং ব্যাটসম্যান উভয়ের কথা মাথায় রেখেই করে। একপেশে উইকেট তৈরি করে না। আর তাই উঠোন বাঁকা বলে রব তোলার খুব একটা সুযোগ হয় না।
আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খারাপ সময় পার করছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। এই সংস্করণের বিশ্বকাপ আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিশ্বকাপে দলকে ঘিরে অস্বস্থির পাশাপাশি আছে উদ্বেগ। সমস্যা হলো দলের যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকুই খেলবে এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। মিডিয়া বরাবর হাইপ সৃষ্টি করে- তবে আকাশে তোলা এবং মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা কোনোটাই কাম্য নয়। ক্রিকেটকে যদি বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবতার আলোকে দেখা হয় তাহলে কিন্তু অনেক বিতর্ক এবং হতাশা থেকে ক্রিকেট মুক্ত থাকতে পারবে।
বিশ্বকাপে যাবার আগে প্রস্তুতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন দেশের ক্রিকেটের পুরোনো সংস্কৃতি অনুযায়ী। লক্ষণীয় হয়েছে এখানেও ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বার্থে কৌশলী খেলার প্রতিফলন।
আমাদের জাতীয় দল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ভালো খেলতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে কাজও করা হয়নি। মুখে অনেক কথাই বছরের পর বছর বলা হয়েছে। হঠাৎ করে বিশ্বকাপে খেলতে নেমে খেলোয়াড়রা জাদু দেখাতে সক্ষম হবেন, ক্রিকেটে এ ধরনের চিন্তার স্থান নেই। কে খেলবেন আর কে খেলবেন না, কে খেলতে চান, কয়েকজন খেলোয়াড় আবার বর্তমানে ‘অফ ফর্মে’ আছেন। কেউ কেউ ভুগছেন ইনজুরিতে প্রকাশ্যে এবং গোপনে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে একরাশ জটিলতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খেলোয়াড়দের যে ধরনের পারফর্ম করা উচিত তা তারা করতে পারছেন না ব্যাটিংবোলিং উভয় ক্ষেত্রে। এটি সবচেয়ে বড় অস্বস্থি। বাংলাদেশ দল যুক্তরাষ্ট্রে যেয়ে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেমে সিরিজে করুণভাবে পরাজিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অধিবাসীদের নিয়ে গঠিত দল। তারা এবারই প্রথম টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। এটি তাদের জন্য স্মরণীয়। অপরদিকে যেটি ভাবা হয়েছিল যে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা গুছিয়ে ক্রিকেট খেলবেন। ফর্ম ফিরে পাবেন। বোলিং ও ব্যাটিংয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এখন পর্যন্ত তা হয়নি। ক্রিকেটের এই অবস্থায় ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট এবং দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন।
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে কথা উঠেছে। এখানেও পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক। মিডিয়ার বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালিয়েই গেছে। নিজস্ব অবস্থান তো থাকবেই- তারপর মনে রাখতে হবে ক্রিকেট কিন্তু সবার। এই বিষয়টি আমাদের ক্রিকেটে গুরুত্ব পেলে খেলার চত্বর থেকে বাজে ধরনের অস্থিরতা কমবে। প্রথমে বিপিএল। এরপর দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে সিরিজ। তারপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিপক্ষীয় তিন ম্যাচের সিরিজ। কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ। এরপর দুটি অফিসিয়াল প্র্যাকটিস ম্যাচ। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রেই বিশ্বকাপের প্রথম খেলা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে পাঁচটি ম্যাচে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ।
প্রধান নির্বাচন গাজী আশরাফ হোসেনের নির্বাচক কমিটি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন অধিনায়ক যথারীতি নাজমুল হোসেন এবং চোটে থাকা তাসকিন আহমেদকে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে। বিশ্বকাপের দলে আছেন- নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, তানভির ইসলাম, মেহেদী হাসান, রিসাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান। রিজার্ভ হাসান মাহমুদ ও আফিফ হোসেন।
২০২১ সালের পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদ উল্লাহ। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে স্থান হয়েছে তানভীর ইসলাম, জাকের আলী, রিসাদ হোসেন, তানজিম হাসান ও তানজিদ হাসান। টিম সিলেকশন নিয়ে কথাবার্তা হওয়া দোষের কিছু নয়। এবার যেটি লক্ষণীয় প্রধান নির্বাচক কেন কাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কেনো করা হয়নি, ফর্মে নেই তা সত্বেও দলে রাখা হয়েছে, তাসকিন শেষ পর্যন্ত ফিট না হলে- তার অবস্থান কি হবে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এতে করে কথাবার্তা ঝড়ের আকার ধারন করেনি। বুঝতে হবে আমাদের যা আছে তারাই আমাদের দল।
আইসিসির সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে নেমেই সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ দল। যুক্তরাষ্ট্র দল গঠিত হয়েছে অধিবাসীদের নিয়ে। এর আগেও বাংলাদেশ আরেক সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম খেলতে নেমে পরাজয়ের বোঝা ঘাড়ে তুলে নিয়ে মাঠ ছেড়ে এসেছে।
লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার ফুটবল এশিয়া।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে