রাউজানে খুনোখুনির তদন্ত সাপেক্ষে জরুরি বিচার করুন
চট্টগ্রামের রাউজানে খুন ও পাল্টা খুনের ঘটনাগুলো যেন অ্যাকশন মুভিকেও হার মানায়। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই উপজেলায় খুন, পাল্টা খুন চলছে; নেই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার। ফলে দিন দিন অপরাধ বেড়েই চলেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজান উপজেলায় এখন পর্যন্ত খুন হয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে সাতজন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। গুলিবিদ্ধ, জখম ও অন্যান্যভাবে আহত হয়েছেন অনেকে।
গতকাল রোববার (৩ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাউজানে এই খুন, পাল্টা খুন নতুন নয়। রাউজানের বাসিন্দা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও পুলিশ সূত্র বলছে, খুনোখুনি চলছে প্রায় চার দশক ধরে। এতে মোট কতজন নিহত হয়েছেন তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে সংখ্যাটি ১০০ থেকে ১১০ জন হতে পারে ধারণা তাদের। এর বাইরে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। গুলি, হামলা, পাল্টা হামলা- এসব রাউজানের নিত্যদিনের ঘটনা। যখন কোনো একটি পক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন খুনোখুনি কমে। যখন নিয়ন্ত্রণ অন্য কোনো পক্ষ নেয়ার চেষ্টায় থাকে তখন খুনোখুনি বেড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাউজানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। আট মাসে রাজনৈতিক খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যুবদলের তিনজন (কমর উদ্দিন, ইব্রাহিম ও মানিক আবদুল্লাহ) এবং আওয়ামী লীগের চারজন (আবদুল মান্নান, মুহাম্মদ ইউসুফ মিয়া, আবু তাহের ও মুহাম্মদ হাসান)। এর বাইরে একজন ব্যবসায়ীকে (জাহাঙ্গীর আলম) খুন করা হয়েছে। যাদের আসামি করা হয়েছে তারা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
বারবার খুন ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত আট মাসে রাউজান থানা-পুলিশের তিনজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়েছে; কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাউজানে উপজেলা প্রশাসন অথবা পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। এখানে বহু বছর ধরে ব্যক্তির শাসন চলে। ব্যক্তি বদলান, নতুন আরেকজন আসেন, সন্ত্রাস কমে না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাউজানে অনেক আলোচিত খুনের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে কারও সাজা হয়নি। মামলায় আসামিরা সবাই খালাস পেয়েছেন।
আমরা চাই এসব খুনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হোক, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রাউজানে এসব খুনের ঘটনা আরও বাড়বে, আরও অসংখ্য মানুষের প্রাণ যাবে। রাউজানের এই হানাহানির ঘটনা একদিন ছড়িয়ে পড়বে আশপাশের উপজেলাগুলোয়। আধুনিক একটি রাষ্ট্রে কোনোভাবেই এসব মধ্যযুগীয় রক্তপাতের ঘটনা চলতে পারে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে