স্বাগত শুভ নববর্ষ ২০২৫
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে খ্রিষ্টীয় দিনপঞ্জিকা ২০২৪ অতিক্রম করে ২০২৫ সালে প্রবেশ করল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ এক বিরাট মাইলফলক। পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির এক আদেশানুসারে এই বর্ষপঞ্জির প্রচলন ঘটে ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রথমে রোমান ক্যাথলিক দেশে এই বর্ষপঞ্জি পালিত হলেও ১৭৫২ সাল থেকে ব্রিটেন ও আমেরিকায় এই বর্ষপঞ্জি অনুসরিত হতে থাকে। পরে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনপঞ্জিকা গৃহীত হয়।
নিজস্ব ক্যালেন্ডার থাকলেও এখন বিশ্বের বহু দেশে এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে। খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জি এখন আন্তর্জাতিক দিনপঞ্জিকা হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমান বিশ্বে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি সবচেয়ে প্রভাবশালী বর্ষপঞ্জি। তাই খ্রিষ্টীয় নতুন বছর এখন বিশ্বের বহু দেশেই নিজেদের সাংস্কৃতিক উৎসবের মতোই পালন করে।
আমরাও এখন খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারনির্ভর। আমাদের বাংলা বর্ষপঞ্জি খাতা-কলমে থাকলেও, বছর শেষে অত্যন্ত আড়ম্বরতার সঙ্গে আমরা বাংলা নববর্ষ পালন করলেও আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের সব অফিসিয়াল কাজকর্ম এখন খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারেই হয়। তাই আমরাও অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর পালন করি। তারপরও বাংলা নববর্ষ ও ইংরেজি নববর্ষের সঙ্গে একটা স্পষ্ট পার্থক্য সহজেই দৃশ্যমান হয়।
ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের দেশের এলিট শ্রেণি, তরুণ প্রজন্ম যেমন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে, যা অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খলার পর্যায়েও যায়, আমাদের বাংলা নববর্ষে এরকম কখনো ঘটে না। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের দেশের সব শ্রেণির মানুষ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন না। এই সাংস্কৃতিক ব্যবধানটুকু এখনো আমাদের আছে। তারপরও আমরা ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই নতুন বছরে নতুন এক পৃথিবীর জন্ম হোক।
পৃথিবী থেকে যুদ্ধ-হানাহানি-রক্তপাত দূর হোক। মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ, বৈষম্য তা নিপাত যাক। এরকমটা আমরা প্রতি বছরই করি, তারপর দেখা যায়, নতুন বছর শুরু হয়েছে পুরনো গ্লানি নিয়েই। তাও মানুষ আশাবাদী, প্রতি বছরই তার আশার ভেলা ভাসতে থাকে অকূল স্বাপ্নিক দরিয়ায়। সময় পেছনে যায় না, সময় সামনেই যায়; আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ও মানুষের এই সভ্যতা একটু হলেও বদলায়। অন্ধকারের দিকে না, মানুষের যাত্রা আলোর দিকেই।
মনুষ্যত্বের দীপ্তিমান শিখা প্রজ্বলিত করবে বলেই মানুষের এই অনন্তযাত্রা। ২০২৪ বছর আগে যিশুখ্রিষ্টের জন্ম হয়েছিল, যার জন্ম তারিখ থেকে খ্রিষ্টীয় এই বর্ষপঞ্জির শুরু বলে নির্ধারণ করা হয়েছে, সে যিশু বা ইসলামের নবী ঈসা (আ.) তার অন্তহীন যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে মানুষকে শুধু জানাতে চেয়েছিলেন মানবতার কথাই। ২০২৪ বছরে সেই মানবতার বাণী কতদূর বিকশিত হয়েছে, তাই এখন হিসাব করার বিষয়। নতুন বছর উপলক্ষে সবাই শুধু গত বছরের হিসাব করে; কিন্তু মানুষকে তো হিসাব করতে হবে তার হাজার বছরের ইতিহাস।
গত দুই হাজার চব্বিশ বছরে মানবতার আলোক শিখা কতদূর বিস্তৃত হলো তাই তো হিসাব করার বিষয়। আর কতদূর যাবে এই মানবসভ্যতা তাও তো মেপে দেখতে হবে মানবতার পাল্লায়। নানারকম বিপর্যয় আসছে মানুষের সামনে। মানুষ কি তা সামাল দিতে প্রস্তুত? সমস্যা আসে, আর সমস্যা সমাধান করে করেই আলোর পথে মানুষের এই যাত্রা অব্যাহত থাকে।
নতুন বছর কেবল উচ্ছৃঙ্খল আনন্দ-উৎসব করার জন্যই নয়, অনেক হিসাব-নিকাশ ও বোঝাবুঝিরও বিষয়। মানুষের বোধোদয় হোক, মানুষের মঙ্গল হোক- এই কামনায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। ভিউজ বাংলাদেশের সব লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের জন্য শুভকামনা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে