Views Bangladesh Logo

কোন দিকে যাচ্ছে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসা, কার হাতে থাকবে নিয়ন্ত্রণ

Rased Mehedi

রাশেদ মেহেদী

রিসংখ্যানটা খবরের শিরোনামের জন্য বেশ চটকদার। ‘মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা কমেছে ৪৪ লাখ।’ টেলিযোগাযোগ সংস্থা বিটিআরসি যেহেতু প্রতি মাসেই দেশের মোবাইল টেলিযোগাযোগ এবং ব্রডব্যান্ড সেবার গ্রাহক তথ্যের একটি পরিসংখ্যান দেয়, সে কারণে খুব সহজে সাংবাদিকরা তথ্যটিও পায়। আগের মাসের তথ্যের সঙ্গে নতুন মাসের গ্রাহক তথ্যের পার্থক্যটা দিয়ে সহজেই বাজার চলতি একটা রিপোর্টও করা যায়। গ্রাহকসংখ্যার পার্থক্য নিজেদের ব্যবসায় কি ধরনের প্রভাব ফেলছে, সেটা নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি বিশ্লেষণও দেখা যায়। গ্রাহকসংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে না বুঝেই আঁতকে ওঠার মতো আবেগঘন বক্তব্য দিতেও দেখা যায় দু-একজন বিশ্লেষককে। বড় বড় সংবাদমাধ্যমে যখন গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হয়, তখন ব্যবসা-বাজারের গতি-প্রকৃতি বুঝি-না বুঝি আমরা আমজনতাও কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ি!

তবে বিশ্লেষকরা যদি গ্রাহক তথ্যের উৎস এবং এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন, তাহলে বিটিআরসির কাছ থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হতো। কারণ গ্রাহক তথ্যটি কীভাবে বিটিআরসি সংগ্রহ করছে সেটা জানা জরুরি। তাহলে সত্যিকার অর্থে বাজারে কি ঘটছে কিংবা ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে দেশের মানুষকেও একটা সম্যক ধারণা দেয়া যেত।

যেমন মোবাইল টেলিকম গ্রাহকদের ক্ষেত্রে গ্রাহকের নেটওয়ার্কে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া সম্ভব যদি এমএসআইএসডিএনের (মোবাইল স্টেশন ইন্টারন্যাশনাল সাবস্ক্রাইবার ডিরেক্টরি নম্বর) ভিত্তিতে গ্রাহকসংখ্যার বিষয়টি উল্লেখ থাকত। কারণ এমএসআইএসডিএন এমন একটি নম্বর, যেখানে একটি দেশের কান্ট্রি কোড, নেটওয়ার্ক কোড এবং একজন গ্রাহকের মোবাইল নেটওয়ার্কে স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত পরিচিতি নম্বর যুক্ত থাকে। ফলে এমএসআইএসডিএন সংখ্যার হিসাব থেকে সত্যিকার অর্থে দিয়ে বোঝা যায় কত গ্রাহক নেটওযার্কে যুক্ত আছেন কিংবা বিযুক্ত হয়েছেন। এমনকি নেটওয়ার্কে কতজন গ্রাহক কোন ধরনের সেবা নিচ্ছেন সেটাও জানা যায়।

এই এমএসআইএসডিএনের তথ্যটি পরিষ্কারভাবে না থাকায় বিটিআরসি থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেটা নিয়ে একটি ধোঁয়াটে অবস্থায় পড়তে হয়। এই যে ৪৪ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে কী? এটা কি ৪৪ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া বা সিমকার্ড বন্ধ হওয়া বোঝাচ্ছে না-কি এই গ্রাহকরা বিভিন্ন অপারেটরের কাছ থেকে ডাটা প্যাকেজ নেয়া কমিয়ে দিচ্ছেন? যদি গ্রাহক তার সংযোগটি বন্ধ করে দেন, সেটা বাজারে এক ধরনের প্রভাব ফেলার বিষয়কে নির্দেশ করবে। আবার ডাটা প্যাকেজ বিক্রি কমে যাওয়ার বিষয়টি আর এক ধরনের প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত দেবে। গ্রাহক সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার অর্থ যে কোনো কারণেই হোক, গ্রাহক মোবাইল টেলিযোগাযোগসেবা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এটা অবশ্যই মোবাইল অপারেটরদের জন্য সত্যিই উদ্বেগের। আর যদি ডাটা প্যাকেজ কমে যায়, তাহলে সেটা উদ্বেগের পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রে ব্যবসা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিতে পারে। যেমন বিটিআরসির পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে ২০২৪ সালে বছরজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা কমেছে, অন্যদিকে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক বেড়েছে। যদিও পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর- এই তিন মাস ব্রডব্যান্ড সেবায় গ্রাহকসংখ্যা একই আছে, বাড়েওনি বা কমেওনি। এর একটি কারণ হতে পারে মোবাইল অপারেটররা নিজেদের গ্রাহকসংখ্যার তথ্য বিটিআরসিতে নিয়মিত দিলেও আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য নিয়মিত পাঠানো হয়নি। আবার এটাও হতে পারে, নতুন করে গ্রাহকসংখ্যা ওই তিন মাসে বাড়েনি।

কিন্তু আমরা যদি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৬৩ লাখ। সে সময় ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার। নভেম্বর মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার। এ মাসে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার। তাহলে দেখা যাচ্ছে সার্বিকভাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ২৭ লাখ ৬ হাজার। অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার। অতএব, মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট সার্বিকভাবে বেড়েছে ব্রডব্যান্ড সেবাদাতা আইএসপির চেয়ে বেশি। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে মোবাইল অপারেটরদের কর্মকর্তা এবং সমমনা বিশ্লেষকরা সার্বিকভাবে পরিসংখ্যান তুলে না ধরে গত আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গ্রাহক তথ্যের পার্থক্যের একটি খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরছেন। এ থেকে আশঙ্কা করা যায়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক নীতিগত সুবিধার কৌশলগত দিক বিবেচনা করেই মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যার পরিসংখ্যান দিচ্ছেন মোবাইল অপারেটররা। যেহেতু এমএসআইএসডিএনের তথ্য আমাদের কাছে নেই, সে কারনে এ আশঙ্কা করা যেতেই পারে।

এবার আশঙ্কা থেকে বাস্তব্তায় আসি। বাস্তবে গত পাঁচ বছরে দেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবসার বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোবাইল অপারেটরদের ভয়েস কল থেকে আয় ক্রমাগত কমছে। কারণ মানুষ সরাসরি ভয়েসকলের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের ওটিটি অ্যাপের মাধ্যমে কল করছে। এ কারণে বেড়েছে ডাটা বা ইন্টারনেট প্যাকেজ গ্রাহকসংখ্যা। এই ডাটা প্যাকেজ থেকে আয় ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্রমামত বাড়লেও কভিড-১৯ মহামারির পর থেকে মোবাইল অপারেটেরদের ডাটা প্যাকেজের ব্যবহারের পরিমাণ এবং আয় কিছুটা কমেছে কিংবা স্থিতি অবস্থায় আছে। অন্যদিকে আইএসপিদের ব্রডব্যান্ড সেবার গ্রাহকসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এর বড় কারণ হচ্ছে কভিড-১৯ মহামারির সময়ে যেভাবে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেড়েছে এবং মানুষের অনলাইনে যুক্ত থাকার অভ্যেস বেড়েছে সে কারণে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সেবার দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার জিবিপিবিএস বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কে গ্রাহকরা ব্যবহার করছেন ১ হাজার ৬৫০ জিবিপিএস। আরআইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার গ্রাহকরা ব্যবহার করছেন ৪ হাজার ৩৫০ জিবিপিএস। অর্থাৎ সার্বিকভাবে বর্তমানে দেশের ইন্টারনেট সেবায় মোবাইল অপারেটরদের অংশীদারত্ব ২৭ শতাংশ। আর আইএসপিদের অংশীদারত্ব ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে প্রযুক্তির রূপান্তরের কারণেই দেশে মোবাইল অপারেটরদের ব্যবসার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। কারণ তাদের ভয়েস কল এবং ডাটা প্যাকেজ, উভয় গ্রাহকই কমবে। অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসা আরও বিস্তৃত এবং লাভজনক হবে। এখন এই চ্যালেঞ্জে সফলভাবে মোকাবিলা করতে হলে মোবাইল অপারেটরদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। এর একটি হচ্ছে, মোবাইল অপারেটরদের ফাইভজি সেবায় যেতে এবং যথার্থ অর্থে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ফাইভজির জন্য কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হলে বর্তমান বাজারে প্রযুক্তি পণ্যের দাম ও ইকোসিস্টেমের বিচারে ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে ফাইভজি কাভারেজ নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের ব্যয় হবে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বড় বিনিয়োগের পর কতটা গ্রাহক আকর্ষণ করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ ফাইভজি প্রযুক্তি মূলত শিল্প ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য এবং সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এটি খুব বেশি আকর্ষণীয় হবে না দামের কারণে। ফোরজির দামে কিংবা প্রতিযোগিতার জন্য কম দামেও ফাইভজি সেবা দেয়া মোবাইল অপারেটরদের জন্য অসম্ভব। কারণ নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বড় বিনিয়োগের পাশাপাশি বর্তমানের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কিনতে হবে মোবাইল অপারেটরদের। আবার আমাদের দেশে প্রজ্ঞাপন দিয়ে যেভাবে হুটহাট ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়, তার বিচারে নতুন করে বড় বিনিয়োগের জন্য মোবাইল অপারেটরদের মূল বিনিয়োগকারীরাও সহজে বিনিয়োগ বাড়াতে কিংবা নতুন বিনিয়োগে রাজি হবে না। ফলে ভবিষ্যতের ফাইভজি ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগের ঘাটতি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জটিও বড় হয়ে দেখা দেবে।

এর বিপরীতে মাত্র তিন থেকে চারশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি সুযোগ আছে মোবাইল অপারেটরদের সামনে। আর সেটি হচ্ছে, দেশের মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসার দখল নিয়ে নেয়া। এই কাজটি করতে হলে প্রথমেই ট্রান্সমিশন এবং আইআইজি ব্যবসার দখল নিতে হবে। এরপর দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আইএসপিগুলোর সঙ্গে একটি ব্যবসায়িক সমঝোতায় যেতে পারলেই আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তিনটি বড় মোবাইল অপারেটরের যৌথ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। ফলে মোবাইল টেলিযোগাযোগ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, উভয়ের দখল নিয়ে মোবাইল অপারেটররাই হবে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে দেশীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এনটিটিএন এবং নেশন ওয়াইড আইএসপি কোম্পানিগুলো। মূলত তাদের দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে যাবে।

অতএব, প্রযুক্তির দ্রুত রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসার গতি-প্রকৃতির পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রেখে টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। এ প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ সুস্থ প্রতিযোগিতা বিকশিত হবে তত গ্রাহকদের জন্য বেশি সুবিধা নিশ্চিত হবে, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। প্রতিযোগী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভবান হবে। তবে কিছু নেতিবাচক প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামীকালের ব্যবসায় লাভজনকভাবে টিকে থাকার এ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে একটি প্রতিযোগী পক্ষ অন্য পক্ষের পুরো ব্যবসাই নিজেদের দখলে নিতে চেষ্টা করছে। এ ধরনের চেষ্টাকে ‘অপচেষ্টা’ বলাই ভালো এবং বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক নয়।

একটি তর্ক আছে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আইএলডিটিএস পলিসির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে যে স্তরগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তার যৌক্তিকতা কতটুকু ছিল? সে সময় কিন্তু দেশে গ্রাহকসংখ্যায় শীর্ষে থাকা মোবাইল অপারেটর অন্য অপারেটরদের জন্য আন্তঃসংযোগ সুবিধা খুবই সংকুচিত করে রেখেছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে লিজ নেয়া ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে ট্রান্সমিশন সেবার জন্য উচ্চমূল্য (প্রায় ১০ হাজার টাকা প্রতি এমবিপিএস) আদায় করছিল। এ কারণে শীর্ষ মোবাইল অপারেটরের একক কর্তৃত্ব থেকে অন্য কয়েকটি মোবাইল অপারেটর এবং আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা বাঁচানোর জন্যই কমন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, ইন্টারকানেকশন একচেঞ্জ, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের মতো স্তরগুলো তৈরি করে সরকার। এই স্তরগুলো তৈরি করার ফলে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে আন্তঃসংযোগে বৈষম্য দূর হয়েছে। ট্রান্সমিশন সেবার খরচ ১০ হাজার টাকা থেকে ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে। অতএব, কমন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের যে নীতিকাঠামো আছে, তার বাস্তবতা এখন আছে। এ কারণে সেই নীতি কাঠামোতে সময়ের প্রয়োজনে কিছু সংস্কার হতে পারে; কিন্তু সেটাকে পাশ কাটিয়ে নতুন করে কোনো অবকাঠামো ভাগাভাগির জন্য স্বতন্ত্র নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্তে তড়িঘড়ি করে না যাওয়াই ভালো হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিটিআরসির জন্য।

এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঠিক নীতি গ্রহণ জরুরি। নীতি কাঠামোতে বিদেশি বিনিয়োগের মোবাইল অপারেটরদের সামনে ব্যবসার সুযোগ যেমন থাকতে হবে, তেমনি দেশীয় উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ট্রান্সমিশন সেবার কমন নেটওয়ার্ক এবং নেশন ওয়াইড ব্রডব্যান্ড সেবার যে বিস্তৃতি ঘটেছে, তাকেও টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। যেন কোনো পক্ষই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের অধিকারী না হয়। ভবিষ্যতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের ব্যক্তিগত ডাটার সুরক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও একই ধরনের নীতি কাঠামোর দিকে নজর দেয়া উচিত। কারণ বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন, একই সঙ্গে দেশীয় উদ্যেক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিন্ত করাও জরুরি।

রাশেদ মেহেদী: টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশ্লেষক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ