বাংলাদেশে ফেসবুক আইডি বা পেজ কেন ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে
প্রতিদিন, মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বন্ধু, পরিবারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং যোগাযোগ তৈরি করতে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন ৷ বর্তমানে সারা বিশ্বে ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মেটার এই ফেসবুকের পরিষেবা নিচ্ছেন। এই পরিষেবা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিজুড়ে বিদ্যমান।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ফেসবুক আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে ২০১৯ সাল থেকে। নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত কিংবা মার্কেটিংসহ বিভিন্ন কারণে ফেসবুক আইডি ও পেজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইদানীং কোনো যথেষ্ট কারণ ছাড়াই এসব ব্যবহারকারীর ফেসবুক আইডি ও পেজ ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। জনপ্রিয় ফ্যাশন, প্রসাধনী, খাবারের ব্লক কিংবা পাবলিক ফিগারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক আইডি ও পেজ হঠাৎ করেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে।
কেন ফেসবুক আইডি ও পেজ ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে বা যায়?
ফেসবুকে কোনো ব্যবহারকারীর আইডি বা পেজ ডিজেবল হওয়ার একাধিক কারণ হতে পারে, যেমন কোনো নির্দিষ্ট নীতি ভঙ্গ করার জন্য বা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কারণে। ফেসবুক সাধারণত ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট সাজানো বা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নীতি মেনে চলতে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের আইডি বা পেজ ডিজেবল করতে পারে। এই ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবহারকারীদের ফেসবুকে পৃথক সমর্থন প্রদান করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেটায় স্পষ্ট করেই বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনে। সাধারণত এই কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন অনুসরণ করে চলতে পারলে ডিজেবল থেকে মুক্তি মিলবে, তবে মেটা তাদের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য কমিউনিটি গাইডলাইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো সত্যতা, নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও মর্যাদা। এ ছাড়াও মেটা তাদের ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন ছয়টি ভাগে বিভক্ত করেছেন, যা কি না তাদের কমিউনিটি গাইডলাইনে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করে দেওয়া আছে। এক. সহিংসতা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ, দুই. নিরাপত্তা, তিন. আপত্তিজনক কনটেন্ট, চার. সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা, পাঁচ. ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এবং ছয়. অনুরোধ ও সমাধান।
যে বিষয়গুলো মাথায় রেখে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি ও পেজ ব্যবহার করা উচিত, তা হলো আপত্তিজনক কনটেন্ট (তা হতে পারে লিখিত, ছবি বা ভিডিও), হিংসাত্মক বক্তব্য, জাতি অথবা মানুষের ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে সরাসরি আক্রমণ। এসব করলেও তা নিয়ে রিপোর্ট করে বসলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আর এ ব্যবস্থা নেয়া হলে ব্যহারকারীদের কখনো কখনো কয়েকদিনের জন্য পোস্ট বা কমেন্টস করা থেকে বিরত রাখা হয়।
এ ছাড়া ধর্ষণ, মৃতদেহ ও দুর্ঘটনার ঘটনা অথবা ভিডিও পোস্ট করলে, দুর্ঘটনা আগুন কিংবা রক্তপাতের ছবি দৃশ্য প্রচার করলে, যে কোনো ধরনের নির্যাতন- শিশু যৌন নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক নির্যাতন, প্রাণী শিকার, প্রাণী হত্যা, প্রাণী জবাই, প্রাণীর ক্ষত বা কাটা দৃশ্যমান ছবি বা ভিডিও প্রচার করলেও তড়িৎ ব্যবস্থা নেয় ফেসবুক এবং আইডি ডিজেবল করে দেয়।
ফেসবুক আইডি বা পেজ ডিজেবল হলে কী করবেন?
যদি কারও ফেসবুক আইডি বা পেজ ডিজেবল করা হয়, তাহলে ব্যবহারকারীকে ই-মেইলে এবং অ্যাপ বা ওয়েব ব্রাউজারে ব্যহারকারীর অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করবেন তখন ব্যহারকারীকে এটি সম্পর্কে জানানো হবে। ব্যহারকারী যদি বিশ্বাস করেন যে ফেসবুক ভুল করেছে তাহলে ব্যহারকারী স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন কি না তাও ফেসবুক ব্যবহারকারীকে জানাবে লগ ইন করার পর, ব্যবহারকারীর আপিল জমা দিতে কমিউনিটি গাইডলাইনের নিয়মাবলি অনুসরণ করতে পারেন।
তবে এসব আইডি বা পেজ ফিরে পেতে কখনো কখনো ছয় মাস থেকে এক বছরেরও বেশি সময় লাগে। আবার কখনো কখনো একেবারে ফেরত নাও আসতে পারে যদি সেটি সঠিকভাবে নিবন্ধন করা না থাকে। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বা পেজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মে আবেদন করার পরামর্শ দেয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। নিষ্ক্রিয় আইডি বা পেজে ব্যবহৃত ই-মেইল বা ফোন নম্বর ব্যবহার করা উচিত এবং তা অবশ্যই এই ই-মেইল অ্যাকাউন্ট বা ফোন নম্বরে অ্যাক্সেস থাকতে হবে। যে মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করতে পারে।
এ ছাড়া ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ খোলার ক্ষেত্রে আসল নাম, ছবি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে ঠিকানা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকে মেটা। ডিজেবল আইডি বা পেজ ফিরে পেতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয় যেখানে ব্যবহারকারী ব্যক্তির পুরো নাম ও ঠিকানা থাকে। সুতারং আইডি কার্ডের নামে অ্যাকাউন্ট না থাকলে অনেক সময় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে যে সব আইডি বা পেজ ডিজবল হয়ে যাচ্ছে তাদের মাঝে বেশিরভাগ পেজ হচ্ছে ব্যবসায়িক পেজ, রেস্টুরেন্ট, ফ্যাশান রিলেটেড। এমন পরিস্থিতে ব্যবহারকারী সাধারণ ডাইরি করতে পারেন নিরাপত্তার খাতিরে। যেহেতু ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয় আইডি বা পেজ গুলো সেক্ষেত্রে বৈধ কাগজ যেমন- ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য কাগজ থাকলে সে ক্ষেত্রে এসব ডিজবল আইডি কিংবা পেজ উদ্ধার করতে সুবিধা হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে