বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুরু হয়েছে মূলত ১৯৭১ সালে, যখন পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর গণহত্যা শুরু করে, ঠিক সেই সময় থেকে। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরুর খবর যখন কলকাতায় পৌঁছাল তখন রেডিওতে দেশাত্মবোধক গান হচ্ছিল। সেই সময় কলকাতা বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম গণহত্যার খবর প্রচার করে। বাংলাদেশে সংঘটিত এই গণহত্যার সংবাদ প্রচারের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এমনিতে তো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হাজার বছরের সম্পর্ক রয়েছে সেটা ভিন্ন কথা; কিন্তু নব পর্যায়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তার সূচনা ১৯৭১ সালে।
সেই সময় বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ভারত সরকার এদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। এবং মুক্তিযুদ্ধে ভারত প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত অস্ত্র প্রদানসহ সব ধরনের সাহায্য করে। মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতই একমাত্র দেশ, যারা প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার সময় আমি নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। আমি বাবা-মাকে ছেড়ে আগরতলায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আগরতলায় যাবার পর প্রথম রাত আমি ফুটপাতেই ছিলাম। কারণ বাংলাদেশ থেকে আশ্রয়ের সন্ধানে সেখানে গমনকারীদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। পরে রাত ৩টার দিকে আশ্রয় মেলে। ভারতের জনগণ তখন অত্যন্ত উদারভাবে বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রকৃত উন্নয়ন তখন থেকেই শুরু হয়। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সৃষ্ট সম্পর্ক যেসব সময়ই ইতিবাচক ধারায় প্রবাহমান থাকবে, তা নাও হতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সৃষ্ট দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবার সেসব সমস্যা এক সময় সমাধান হয়েছে। এভাবেই এগিয়ে চলছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক।
স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতের প্রচুর সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। তাদের স্বদেশে পাঠিয়ে দেবার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তার একটি বড় কাজ ছিল বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো। বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শিতার কারণে অত্যন্ত স্বল্প সময়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়। অনেক দেশে এ ধরনের ক্ষেত্রে বিদেশি সৈন্যদের ফেরত পাঠাতে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। এক্ষেত্রে ভারতীয় কর্তৃপক্ষও প্রশংসা পাবার যোগ্য। তারা অনুধাবন করতে পেরেছিল যে, যদি দ্রুত সৈন্য প্রত্যাহার করা যায়, তাহলে এই ইস্যু নিয়ে কেউ রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ফলে দেশ দুটির মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টির যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাবে। বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য অবস্থান করার কারণে অনেক দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করছিল। উপরন্তু জাতিসংঘের সদস্য পদ পাবার একটি বিষয় ছিল। ১৯৭৪ সালের মধ্যেই বিষয়গুলো এমনভাবে সমাধান করা হলো যে, পাকিস্তানও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের সদস্য পদ পাবার ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না। কারণ তখনো ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছিল; কিন্তু পাকিস্তান যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল, তখন চীন আর কোনো বাধা দিল না। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ পেয়ে গেল।
দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান থাকে। এসব সমস্যা অতিক্রম করেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে যেতে থাকে। ভারত যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে, তাই তাদের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সব সময়ই ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সেই সময় বিশ্ব মূলত দুটি মেরুতে বিভক্ত ছিল। স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তাদের মিত্ররা নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। তাই স্বাধীনতার পর এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়। কিন্তু বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক কাঠামো সেটা মূলত পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। তখন বাংলাদেশে খাদ্যের একটি বিশাল ঘাটতি ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থক ছিল। এটা একটি সমস্যা তৈরি করেছিল। একই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার গোপনে চীন সফর করেন। এই সফরের আয়োজন করে পাকিস্তান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে না থাকার কারণে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু যারা, তারাও বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হতে পারেনি। একটি মুসলিম দেশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক ছিল। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব একটা উন্নত হতে পারেনি। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে স্বীকৃতি পাবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে সেই সময় অর্থাৎ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় ও আন্তর্জাতিকীকরণের ক্ষেত্রে নেপথ্যে থেকে ভারত নানাভাবে সহায়তা করেছে।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে অধিবেশনে অংশগ্রহণ ও ভাষণদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি অর্জনের সমস্যা সমাধান করতে পারে; কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভারতও কিছুটা অবাক হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নিহত হয়। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। অবশ্য বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালেই ভারতের সঙ্গে কোনো কোনো ইস্যু নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। এর মধ্যে বড় একটি ইস্যু ছিল স্থল সীমানা চিহ্নিতকরণ। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে সীমানা চিহ্নিতকরণ চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছিল; কিন্তু একই বছর ডিসেম্বর মাসে ভারত জানালো তারা এই চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করতে চায়। ভারত বলল, যতদিন ছিটমহল বিনিময় না হবে, ততদিন আমরা সীমানা চিহ্নিতকরণ চুক্তি চূড়ান্ত করব না। বাংলাদেশ যে চুক্তি তৈরি করেছিল, সেখানে উল্লেখ ছিল সীমানা চিহ্নিতকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। পরে ছিটমহল বিনিময় হবে। সীমানা চুক্তিকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত না হবার কারণে বঙ্গবন্ধুর কিছুটা আক্ষেপ ছিল। প্রায় একই সময়ে ফারাক্কা বাঁধ নিয়েও কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। গঙ্গার পানি কীভাবে বণ্টন করা হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সীমান্তে চোরাচালানি বন্ধ করার বিষয় ছিল। এমন কিছু কিছু ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা টানাপোড়েন চলছিল। ১৯৭৫ সালের পর দেশে সামরিক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বাংলাদেশ ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়ে। সম্পর্কের এই শীতলতা কাটাতে অনেক সময় লেগেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে। তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলেন, তখন থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ভারত সফর করেছিলেন। সেই সফরের মধ্য দিয়ে দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন মাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কেমন হতে পারে। কানেক্টিভিটি কেমন হবে। দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে বিনিয়োগ কেমন হবে এসব বিষয়ে আগেই হোমওয়ার্ক করে রাখা হয়েছিল। ফলে নতুন সরকার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের কাজগুলো খুব দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন।
২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নিরাপত্তার প্রশ্নে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছিল বলে ভারত অভিযোগ করে আসছিল। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘুরে বেড়াত। বাংলাদেশের ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্ট খোলা ছিল বলেও অভিযোগ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে। অনেকেই মনে করেন, এই অস্ত্রগুলো ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্যই নেয়া হচ্ছিল। সব মিলিয়ে ভারত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভারত মনে করতে থাকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করেই তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি বড় কাজ ছিল এ ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজ করতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের এই উদ্যোগের ফলে ভারত ব্যাপক স্বস্তি লাভ করে। তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা কিছুটা হলেও রক্ষিত হয়।
ভারত মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু কথায় নয়, কাজে দেখিয়ে দিয়েছে তারা অন্য কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। বাংলাদেশ ভারতের অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এটা কাজে প্রমাণ করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশ এর বিপরীতে ভারতের কাছ থেকেও বিভিন্ন সুবিধা চাইবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টিই দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এরপর কানেক্টিভিটির একটি বিরাট সম্পর্ক তৈরি হলো। ভারতের পক্ষ থেকে একটি বড় দাবি ছিল, বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের যে নব যাত্রা শুরু হয় তা বর্তমানে চমৎকার উচ্চতায় বিরাজ করছে।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আমলে যে বৈদেশিক নীতিমালা বা পলিসি তৈরি করা হয়েছিল তা সর্বত্রই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। সেই বৈদেশিক নীতির মূল কথাই ছিল ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি শত্রুতা নয়।’ বর্তমান সরকার সেই পররাষ্ট্রনীতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেমন হস্তক্ষেপ করে না তেমনি কারও প্রতি বৈরী ভাব প্রদর্শন করে না। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজমান। বিশেষ করে চীন বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক পার্টনার। আবার রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সঙ্গেও বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ পক্ষভুক্ত দেশগুলোকে বুঝাতে পেরেছে যে তোমার সঙ্গে আমার অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। কারও সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই। বাংলাদেশ কোনো নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নেই। এই বিষয়টি ভারতও বুঝতে পেরেছে। যে কারণে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চমৎকার দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে। যদিও এখনো ভারতের সঙ্গে আমাদের কিছু কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এসব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
অনুলিখন: এম এ খালেক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে